বিশেষ প্রতিবেদক:
ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, দেশের সব ধরনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন এক নিরন্তর যোদ্ধা। একাধারে ছিলেন রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী ও গবেষক। ছিলেন সাংবাদিক, বাচিক ও আবৃত্তি শিল্পী তথা বাংলা সংস্কৃতির দিকপাল। তিনি ছায়ানট ও কন্ঠশীলনের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াহিদুল হক।
শনিবার সন্ধ্যায় তার হাতে গড়া বাচিক চর্চা ও আবৃত্তির সংগঠন কন্ঠশীলন তার একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী পালন করলো। আবৃত্তি ও গানের মধ্য দিয়ে তাকে স্মরণ করেন তার বহুদিনের সহযোদ্ধা, ছাত্র ও ভক্তরা। ২২২ নিউ এলিফ্যান্ট রোডে কন্ঠশীলনের নিজস্ব কার্যালয়ে এ স্মরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এই আয়োজনে ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে পথচলার স্মৃতি তুলে ধরেন তাঁর ছাত্র, সহকর্মী শিল্পী আব্দুল ওয়াদুদ, কণ্ঠশীলন অধ্যক্ষ মীর বরকত এবং কণ্ঠশীলন সভাপতি গোলাম সারোয়ার। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন প্রশিক্ষক নরোত্তম হালদার। এছাড়াও আবৃত্তি করেন একেএম শহীদুল্লাহ কায়সার, ইলা রহমান, নুরুজ্জামান নান্নু, কবি এএফ আকরাম হোসেন ও এসএম গাউসুল আজম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কণ্ঠশীলনের সাবেক সভাপতি, কথাসাহিত্যিক সদ্যপ্রয়াত শওকত আলীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে পথচলার স্মৃতিময় কিছু ঘটনা তুলে ধরে বক্তারা বলেন, ওয়াহিদুল হক ছোট বড় সকলের সাথে মিশতেন এবং সকলকে সম্মান করতেন। তাঁর ভক্ত ছিল না এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। তার সমস্ত কর্মজীবনে বাঙালি সংস্কৃতির আলো ফুটেছিলো। সকল সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।

সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নিরন্তর যোদ্ধা ওয়াহিদুল হককে স্মরণ
তারা বলেন, তিনি মানুষের ভেতরে সঙ্গীতের অনুরণন তুলেছিলেন। ওয়াহিদুল হকের আদর্শে পথ চললে জীবনের পথগুলো অনেক বেশি সুন্দর হবে। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, দেশের সব ধরনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে ওয়াহিদুল হক ছিলেন এক নিরন্তর যোদ্ধা। ওয়াহিদুল হককে অনুসরণ করলে আমরা অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক হতে পারবো এবং মানুষের জন্য কাজ করতে পারবো। তিনি দেশের নামকরা পত্রিকায় কাজ করেছেন। শেষ জীবনে তিনি কলাম লিখতেন। এমন কোন বিষয় ছিল না যে বিষয়ের উপর তিনি লিখতে পারতেন না। শব্দের উৎপত্তি ও ব্যবহার তিনি অভিধান না দেখেই বলে দিতে পারতেন। অসাধারণ সুন্দর মানসিকতার মানুষ হয়েও তিনি সাধারণ জীবনযাপন করতেন।
ওয়াহিদুল হক আজ বহুদূরে, জগতের যত হাসি-কান্না, হিসাব-নিকাশের বাইরে। আবার বহুকাছেও আছেন তিনি, তাঁর কর্মে, তাঁর সৃষ্টির পথে পথে, অন্তরের অনুরণনে – কথাহীন, শরীরহীন অনন্ত হয়ে। দিন চলে যায়, চলে যাবে। তবে তাঁর ছোঁয়াটুকু, কর্মটুকু থাকবে, থাকতেই হয়, যেমনটি করে সক্রেটিস, লালন বেঁচে আছেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। প্রয়াত নাজিম মাহমুদ ওয়াহিদ ভাইকে বলতেন ‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা’। ঠিক তাই। বাঁশির সুর ছড়িয়েছিলেন তিনি পথে পথে, পদে-পদে জাতিসত্তার ‘চির উন্নত শিরে’ অবগাহনে। সেই সুর তাঁকে চিনিয়ে দিবে কালে কালে। অবিশ্বাস্য তাঁর পথচলাসীমানা, অবিশ্বাস্য তাঁর পরিচিতজন-স্বজন পরিধি বয়সের গণনাকে তুচ্ছ করে। ওয়াহিদ ভাই – এর সঙ্গে সম্পর্কিত সকলের একটা বদ্ধমূল ধারণা কিংবা সকলে বিশ্বাস করে ওয়াহিদ ভাই – সঙ্গে তারই কেবল আলাদা এবং অথচ গভীর একটি আত্মিক সম্পর্ক আছে এমনটা আর কারও সঙ্গে নেই। আমরা বিশ্বাস করি, এই আত্মীয়তা নিয়ে ওয়াহিদ ভাই বেঁচে থাকবেন সবার মাঝে।
জীবিতকালে ২৭ সংখ্যাটিকে ওয়াহিদুল হক খুব পছন্দ করতেন, বয়স গণনায় তিনি আনন্দের সঙ্গে বলতেন যে, ‘বয়সটাকে আমি সাতাশে রাখতে চাই’। আরও বলতেন ‘একজন মানুষের সেরা বয়সকাল হওয়া উচিৎ ২৭’। কত পথ-মতকে তিনি সাবলীল করেছেন, অর্জন করেছেন … …। আবৃত্তিকেও তাঁর আরেক ভালবাসার জগত বলে মেনেছিলেন।
Really he is a Great man on Cultural world.