নিজস্ব প্রতিবেদক:
নবাব সিরাজউদ্দৌলা চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন ঢাকাই সিনেমার অন্যতম শক্তিমান অভিনেতা আনোয়ার হোসেন। সেই থেকে তাকে বলা হয় ঢাকার সিনেমার মুকুটহীন নবাব। ঐতিহাসিক নবাব সিরাজউদ্দৌলা, রাজনৈতিক জীবন থেকে নেয়াসহ নাট্যধর্মী, লোককাহিনীভিত্তিক, সাহিত্যনির্ভর, শিশুতোষ, পারিবারিক মেলোড্রামা সব ধরণের চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দাপুটে অবস্থান তৈরি করেন বাংলা সিনেমায়। প্রায় ৫০০ এর অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। গত ২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তিনি মারা যান। ঢাকার সিনেমার এই মুকুটহীন নবাবের জন্মদিন আজ।
১৯৩১ সালের ৬ নভেম্বর জামালপুর জেলার সরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। এই দিনে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তীর প্রতি কালচারাল ইয়ার্ড পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা।
স্কুল জীবন থেকেই তিনি অভিনয়ের সাথে জড়িত। ময়মনসিংহে আনন্দ মোহন কলেজে পড়াকালীন সময়েও তিনি অনেক মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন। তৎকালীন সময়ে রূপালী জগতের তারকা ছবি বিশ্বাস, কাননদেবীদের দেখতে দেখতে চলচ্চিত্রের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়।
কিংবদন্তি অভিনেতা আনোয়ার হোসেনের আরও খবর
⇒ চলচ্চিত্রের মুকুটহীন নবাব আনোয়ার হোসেনের জন্মদিন স্মরণে
এরপর বেশকিছু বছর চলচ্চিত্র পাড়ায় ঘুরে ঘুরে শেষে ১৯৫৮ সালে ‘তোমার আমার’ সিনেমায় কাজ করার মাধ্যমে শুরু করেন চলচ্চিত্রে অভিনয়। এরপর একই বছর দ্বিতীয় চলচ্চিত্র সূর্যস্নান-এ মুখ্য অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করেন তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধে রয়েছে জোয়ার এলো (১৯৬২), কাঁচের দেয়াল (১৯৬৩), নাচঘর (১৯৬৩), দুই দিগন্ত (১৯৬৬), বন্ধন (১৯৬৪), একালের রূপকথা (১৯৬৫), কাচের দেয়াল (১৯৬৩), বন্ধন(১৯৬৪), নবাব সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৭), অপরাজেয় (১৯৬৭), সাত ভাই চম্পা (১৯৬৮), জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০), অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী (১৯৭২), রংবাজ (১৯৭৩), ধীরে বহে মেঘনা (১৯৭৩), লাঠিয়াল (১৯৭৫) প্রভৃতি।
তার ও সুমিতা দেবী অভিনীত দুই দিগন্ত চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে ঢাকার বলাকা সিনেওয়ার্ল্ডের উদ্বোধন হয়েছিল। উজালা তার অভিনীত প্রথম উর্দু ভাষার চলচ্চিত্র। এটি ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায়। ১৯৬৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি অর্জন করেন। এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে নিগার পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৭৫ সালে লাঠিয়াল ছবিতে অভিনযয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে প্রথমবারের মত আয়োজিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সরকার চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে একুশে পদক প্রদান করেন। অভিনেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই পুরস্কার পান।
বাংলা চলচ্চিত্রের মুকুটহীন নবাব আনোয়ার হোসেনের এক মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে চিত্রনায়িকা ববিতা বলেন,‘আমাদের সিনেমা জগতের অভিভাবক ছিলেন আনু ভাই। জীবনের শেষ সময়ে তিনি অনেক কষ্ট করেছেন। আমাদের ইন্ড্রাস্ট্রিতে তাঁর মতো গুনী অভিনেতা আর আসবে না। আমাদের তিন বোনকেই তিনি খুব পছন্দ করতেন। আমরা তাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করতাম। মৃত্যুর আগে আমরা তিন বোনই তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। খুব মনে পড়ছে আজ তাঁকে।
ববিতা বলেন, আনু ভাই আমাদের অভিনয়ের অগ্রপথিক। তাঁর কর্ম, তার অবদান বারবার আমাদেরকে মনে করতে হবে। নানানভাবে আনু ভাইকে আমাদের নিজেদের জন্যই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাঁকে আল্লাহ বেহেস্ত নসীব করুন-এই দোয়া করি।