বাংলাদেশের ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের অন্যতম পথিকৃত, বিকল্প চলচ্চিত্র আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের জন্মদিন আজ । ১৯৫৬ সালের ৬ ডিসেম্বর ফরিদপুরের ভাঙ্গার নূরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছোটবেলা তাঁর কেটেছে দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে। প্রান্তিক পর্যায় থেকে উঠে আসা মেধাবী সেই লোকটি পরবর্তীতে হয়ে উঠেছিলেন আন্তর্জাতিক মানের একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি ছিলেন পুরোটাই চলচ্চিত্রের জন্য নিবেদিত। তিনি একজন সিনেমাপ্রেমিক শুধু নয়, তিনি একজন সিনেমা যোদ্ধা। খুবই সাধারণ জীবনযাপন করা এই চলচ্চিত্রকার নি:স্বার্থভাবে সিনেমার জন্য সারাজীবন ব্যয় করে গেছেন।
কালচারাল ইয়ার্ড পরিবারের পক্ষ থেকে গুণী এই নির্মাতার প্রতি শ্রদ্ধা।
তারেক মাসুদ ১৯৮৫ সালে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের জীবনীর উপর ভিত্তি করে ‘আদম সুরত’ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ১৯৯৫ সালে স্ত্রী ক্যাথরিনের সঙ্গে যৌথভাবে নির্মাণ করেন ‘মুক্তির গান’।
২০০২ সালে তারেক মাসুদের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’ মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। মাটির ময়না প্রথম বাংলাদেশি সিনেমা, যা অস্কার প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নেয়।
তাঁর ‘অন্তর্যাত্রা’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ২০০৬ সালে। ২০০৯ সালে মুক্তি পায় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নরসুন্দর’। তাঁর নির্মিত সর্বশেষ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘রানওয়ে’ মুক্তি পায় ২০১০ সালে।
কলেজ জীবন থেকেই চলচ্চিত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তারেক মাসুদ। বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। তিনি ১৯৮৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও তিনি যোগ দেন।
স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ একজন মার্কিন নাগরিক। ক্যাথরিন এবং তারেক মিলে ঢাকায় একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন যার নাম অডিও ভিশন। এই দম্পতির ‘বিংহাম পুত্রা মাসুদ নিশাদ’ নামে এক পুত্র সন্তান রয়েছে। ২০১২ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট তাঁর পরবর্তী সিনেমা ‘কাগজের ফুল’ এর শুটিং স্পট নির্বাচন করে ফেরার পথে মানিকগঞ্জের ঘিওরে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। সেদিন তারেক মাসুদের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী টেলিভিশন সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ও বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীরও নিহত হন। এ ছাড়া ইউনিটের আরো তিনজন মারা যায়।