নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশের কিংবদন্তী চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমান। তিনি একাধারে অভিনেতা, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, গায়ক, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং প্রযোজক। তিনি খান আতা নামে সর্বাধিক পরিচিত। ১৯২৮ সালের ১১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
এই কিংবদন্তীর জন্মদিনে কালচারাল ইয়ার্ড পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা।
বিখ্যাত উর্দু চলচ্চিত্র জাগো হুয়া সাভেরা দিয়ে তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। চলচ্চিত্রকার এহতেশাম পরিচালিত এ দেশ তোমার আমার তাঁর অভিনীত প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র। এ চলচ্চিত্রে তিনি সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেও কাজ করেন। তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে বেশ কয়েকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেন। নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা (১৯৬৭) এবং জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০) ছবির মাধ্যমে তিনি পরিচিতি পান।
১৯৭৫ সালে চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। ১৯৯৭ সালে এখনো অনেক রাত চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত ও শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে পান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তাঁর অভিনীত শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র জাগো হুরা সাবেরা, সুজন সখী, এ দেশ তোমার আমার, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, জীবন থেকে নেয়া ইত্যাদি।
১৯৪৩ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশান পাশ খান আতা। ১৯৪৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমেডি পাশ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এ সময় তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের উদ্দেশ্যে বাড়ি ছেড়ে পালাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফুলবাড়িয়া রেল স্টেশনে তিনি পরিবারের এক সদস্যের চোখে পড়ে গেলে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু অল্প কিছুদিন পরেই মেডিকেল ছেড়ে চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এবারও তার বোহেমিয়ান স্বভাবের কারণে তিনি সেখানে থাকলেন না। এ বছরেই তিনি লন্ডনে ফটোগ্রাফি বিষয়ক একটি বৃত্তি লাভ করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তিনি সেখানে যান নি।
১৯৪৯ সালে আবার তিনি বাড়ি ছেড়ে পালাবার চেষ্টা করেন। সেইবারও উদ্দেশ্য ছিলো একই। এবার তিনি প্রথমে মুম্বাই যান। মুম্বাই গিয়ে তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছেন, চলচ্চিত্র জগতের আনাচে কানাচে গিয়েছেন। এ সময় তিনি জ্যোতি স্টুডিওতে ক্যামেরাম্যান জাল ইরানির শিক্ষানবিশ হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন।
চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমান সম্পর্কিত আরও খবর
⇒ স্মরণে কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমান
খান আতার প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র অনেক দিনের চেনা। ১৯৬৩ সালে ছবিটি মুক্তি পায়। ১৯৬৭ সালে তিনি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার জীবনী নিয়ে নির্মাণ করেন নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা। চলচ্চিত্রটি ১৯৬৯ সালে মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-এ প্রদর্শিত হয় এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে গোল্ডেন প্রাইজের জন্য মনোনীত হয়। এরপর তিনি সাত ভাই চম্পা, অরুণ বরুণ কিরণমালা, জোয়ার ভাটা নির্মাণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে নির্মাণ করেন বিখ্যাত সিনেমা আবার তোরা মানুষ হ; যার বিষয়বস্তু ছিল যুদ্ধ পরবর্তী বাস্তবতা।
১৯৭৫ সালে প্রমোদ কর ছদ্মনামে গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মাণ করেন রোমান্টিক চলচ্চিত্র সুজন সখী। এই চলচ্চিত্রের জন্য তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে পুরস্কৃত হয়। আশির দশকের নির্মাণ করেন হিসাব নিকাশ এবং পরশপাথর নামের দু’টি ছায়াছবি।
এছাড়া তিনি বাংলার কবি জসীম উদ্দীন, গঙ্গা আমার গঙ্গা, গানের পাখি আব্বাস উদ্দিন সহ বেশ কিছু তথ্যচিত্রও নির্মাণ করেছেন।
খান আতাউর রহমান তিনবার বিয়ে করেন। তার প্রথম স্ত্রী শার্লি। লন্ডন থাকাকালীন ১৯৫৮ সালে তিনি তাকে বিয়ে করেন। পরে বাংলাদেশের আসার পর ১৯৬০ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। শার্লি তার সন্তানকে নিয়ে লন্ডন চলে যান। পরে ১৯৬০ সালে তিনি কণ্ঠশিল্পী মাহবুবা রহমানকে বিয়ে করেন। তাঁর তৃতীয় স্ত্রী নীলুফার ইয়াসমীনকে বিয়ে করেন ১৯৬৮ সালে। খান আতা ও মাহবুবা রহমানের ঘরে জন্ম নেন কণ্ঠশিল্পী রুমানা ইসলাম। অপরদিকে খান আতা ও নিলুফারের ঘরে জন্ম নেন বর্তমান প্রজন্মের গায়ক ও অভিনেতা খান আসিফুর রহমান আগুন।