বিশেষ প্রতিবেদক:
দিনে মাত্র চার পাঁচ ঘণ্টা ঘুমান তিনি। তার প্রিয় উক্তি: ‘ঘুমানো মানে জীবন নষ্ট করা’। তাঁর জীবনের প্রথম রোজগার ছিল ৫০ টাকা। গায়ক পঙ্কজ উদাসের একটি কনসার্টে কাজ করে সেই টাকা পান। প্রথম রোজগারের টাকা দিয়ে ট্রেনের টিকিট কেটে আগ্রা গিয়েছিলেন। প্রথমে কিছু সিরিয়ালে অভিনয় করেন। এরপর একসময় নাম লেখান বলিউডের সিনেমায়। নব্বই দশকের শুরু ছিলো সেটি। এরপর একের পর এক সিনেমা করে স্টার থেকে সুপারস্টার হয়ে উঠেন। হয়ে উঠেন বলিউড বাদশাহ। তিনি কিং খান নামে সর্বাধিক পরিচিত শাহরুখ খান।
আজ তাঁর জন্মদিন। কালচারাল ইয়ার্ড পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। শুভ জন্মদিন বলিউড বাদশাহ।
১৯৬৫ সালের ২ নভেম্বর তাজ মুহম্মদ খান আর লতিফ ফাতিমার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। শাহরুখের বাবা ছিলেন পাকিস্তানের পেশোয়ারের আর মা ছিলেন ভারতের হায়দ্রাবাদের। দাদি ছিলেন কাশ্মীরের। বাড়িতে শাহরুখের বাবা ‘হিন্দকো’ ভাষায় কথা বলতেন। এটি পাকিস্তানে ব্যবহৃত পাঞ্জাবী কথ্য ভাষা।
ভারতে শুধু তাঁর মায়ের দিকের আত্মীয় স্বজন ছিলেন, বাবার গোটা পরিবারই পেশোয়ারে থাকতেন। ১৯৭৮-৭৯ সালে প্রথবারের মতো তিনি গিয়েছিলেন বাবার ফেলে আসা শহরে। শাহরুখের ১৫ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তাঁর বাবা মারা যান। তাঁর বাবা পেশায় ছিলেন উকিল। তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামেও অংশ নিয়েছিলেন। এ নিয়ে জেলও খেটেছেন। পরে মৌলানা আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ভোটেও দাঁড়িয়েছিলেন তাজ মুহম্মদ খান।
শাহরুখ খান দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে অর্থনীতিতে বি এ পাশ করেন। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে মাস কমিউনিকেশনে এম এ করার জন্য ভর্তি হন। তবে সেটা শেষ করা হয় নি। শাহরুখ খানের স্ত্রী গৌরীর বাবা ছিলেন একজন সেনা কর্মকর্তা। স্কুলে পড়ার সময় গৌরীর সাথে প্রথম চেনা পরিচয়। একটা পার্টিতে দুজনের মধ্যে বেশ অনেকক্ষণ গল্প চলে। তখন থেকেই শুরু হয় শাহরুখ-গৌরীর প্রেম।
শাহরুখ খানের জন্মদিনের আরও খবর :
⇒ জন্মদিনে ইতিহাসের সাক্ষী বলিউড বাদশাহ: উচ্ছ্বসিত শাহরুখ খান
⇒ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের যাত্রা শুরু শাহরুখ কন্যা সুহানা খানের
শাহরুখের ভাষ্যে- দিনটা ছিল ১৯৮৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের নয় তারিখে। সেই দিনই শাহরুখ ড্রাইভিং লাইসেন্সও পেয়েছিলেন। গৌরী আর শাহরুখের বিয়ে হয় ১৯৯১ সালের ২৫ অক্টোবর।
ছোটবেলা থেকেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা ছিল শাহরুখ খানের। কলকাতার ‘আর্মি স্কুল’-এ ভর্তিও হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ছেলেকে ছাড়তে রাজি হন নি তাঁর মা।
শাহরুখ খান ১৯৮৯-৯০ সালে রেণুকা সাহানের সঙ্গে ‘সার্কাস’ সিরিয়ালের মাধ্যমে অভিনয় শুরু করেন। সেই সময়ে তাঁর মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মাকে ধারাবাহিকটার একটা পর্ব দেখানোর জন্য বিশেষ অনুমিত নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর মা তখন এতটাই অসুস্থ, যে ছেলেকে চিনতেও পারেন নি। ১৯৯১ সালের এপ্রিল মাসে শাহরুখ খানের মা মারা যান। মায়ের মৃত্যুর শোক থেকে দূরে সরে যেতে এক বছরের জন্য শাহরুখ দিল্লি থেকে মুম্বাই যান। কিন্তু এই যাওয়াই পরবর্তীতে তাঁকে বলিউড বাদশায় রুপান্তরিত করে। সে বছরই প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। সেটি ছিল হেমা মালিনী অভিনীত ‘দিল আসনা হ্যায়’।
১৯৯২ সালের ২৫ জুন শাহরুখ খান নায়ক হিসেবে প্রথম পর্দায় আসেন ‘দিওয়ানা’ ছবির মাধ্যমে।
শাহরুখ খান বাজীগর (১৯৯৩), দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে (১৯৯৫), দিল তো পাগল হ্যায় (১৯৯৭), কুছ কুছ হোতা হ্যায় (১৯৯৮), দেবদাস (২০০২), স্বদেশ (২০০৪), চাক দে! ইন্ডিয়া (২০০৭), ও মাই নেম ইজ খান (২০১০) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।
শাহরুখ খান সম্পর্কিত নিউজ
♣ করোনা নিয়ে সালমানের গান, প্রশংসায় শাহরুখ
তিনি কোন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাননি, কিন্তু ২০০৫ সালে ভারত সরকারের সর্বোচ্চ পুরস্কার পদ্মশ্রী সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি।২০০৭ সালে ফ্রান্স সরকারের দেওয়া অর্দ্র দে আর্ত এ দে লেত্র ও ২০১৪ সালে ফরাসি লেজিওঁ দনরের পঞ্চম পদ শ্যভালিয়ে খেতাব পান তিনি। পাঁচটি সম্মানসূচক ডক্টরেট পান তিনি। ২০০৯ সালে বেডফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম ডক্টরেট পান। দ্বিতীয়টি ২০১৫ সালে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, তৃতীয়টি ২০১৬ সালে মৌলানা আজাদ জাতীয় উর্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ও শেষ দুটি ২০১৯ সালে ইউনিভার্সিটি অব ল ও লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অর্জন করেন।
অভিনয় ছাড়াও তিনি ছবি প্রযোজনা করেছেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনাও করেছেন তিনি।তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রেড চিলিজ এন্টারটেইনমেন্ট। তিনি আইপিএল ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণকারী কলকাতা নাইট রাইডার্স টিমের মালিক।
শাহরুখ খানের স্ত্রী গৌরী চিব্বার৷ তাদের এক পুত্র আরিয়ান খান ও আব্রাম খান; এক কন্যা সুহানা খান।