নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের অন্যতম দিকপাল, ক্যামেরা নিয়ে লড়াই করা গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হানের ৪৮তম অন্তর্ধান দিবসে ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি আয়োজন করে জহির রায়হান স্মরণ এবং জহির রায়হানের চিন্তা ও কর্মের বিশ্লেষণমূলক আলোচনা।  এদিনে এই একটি আয়োজনই চোখে পড়ে জহির রায়হানকে স্মরণের।
বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে এ আয়োজন করা হয়।  সংগঠনের সভাপতি বেলায়াত হোসেন মামুনের সভাপতিত্বে সভায় চলচ্চিত্র গবেষক, লেখক ও সাংবাদিক অনুপম হায়াৎ, চলচ্চিত্র সমালোচক মাহমুদা চৌধুরী, লেখক ও সাংবাদিক রফিকুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।  অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অদ্রি হৃদয়েশ।
আলোচনায় অনুপম হায়াৎ বলেন, ম্যুভিয়ানা ছাড়া আর কোথাও জহির রায়হানকে নিয়ে কোন স্মরণ আয়োজন করা হচ্ছে বলে আমার জানা নেই। জহির রায়হানসহ গুনীজনদের আমরা স্মরণ করিনা। স্বাধীনতার সঙ্গে যার রক্তের সম্পর্ক এমন চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান ও তার ছবি নিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোন পাঠ্যবই নেই। যেটি অত্যন্ত কষ্টকর। জহির রায়হানকে আমাদের কাছে বারবার নিয়ে আসতে হবে। জহির রায়হান বারবার আমাদের প্রেরণা দেবে।
তিনি বলেন, আমরা রাজনীতির কথা বলি, মার্কসবাদের কথা বলি, সংবাদপত্রের কথা বলি, কবিতার কথা বলি সবকিছুতে জহির রায়হান অনবদ্য। তিনি কবিতা লিখেছেন। তিনি গানও লিখেছেন। নাটকও লিখেছেন যেটি প্রচারিত হয়েছে। কতভাবে তিনি কাজ করেছেন। সবকিছুকেই ক্যামেরায় তুলে এনেছেন। তার বড় পরিচয় তিনি ক্য্যামেরার জাদুকর। সে জহির রায়হানকে বারবার স্মরণ করতে হবে। জহির রায়হান একজন চিরন্তন বিপ্লবী শিখার নাম।
জহির রায়হান সম্পর্কিত আরও খবর :
⇒ বিপ্লবী চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান
⇒ সোনালী যুগের সোনা ফলিয়েছেন জহির রায়হান
তিনি বলেন, কিশোর বয়সে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে কলকাতায় তিনি প্রতিবাদের মিছিলে অংশ নিয়েছেন। বায়ান্ন ও আটান্ন সালে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। সে সময় মার্শাল ল জারি হয়। ওই সময় এরকম সুররিয়ালিজম বা ম্যাজিক রিয়েলিজম নিয়ে এরকম ছবি ভারতেও হয়েছে বলে আমার জানা নেই। জহির রায়হান যে কত বড় সৃজনশীল ছিলেন। তিনি যে কতটুকু আলাদা চিন্তার মানুষ ছিলেন। তিনি বলেছিলেন আমি আসলে একুশের সন্তান। একুশ আমাকে লেখক বানিয়েছেন। আমার যা কিছু সৃষ্টি তা একুশের জন্যই। যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ভাষা আন্দোলনের জন্য সেই ভাষা আন্দোলনের সন্তান জহির রায়হান।
সাংবাদিক ও লেখক রফিকুজ্জামান বলেন, জহির রায়হানের সিনেমা করার স্টাইল ছিলো ভিন্ন।  তিনি চিত্রনাট্য মেইনটেইন করে কাজ করতেন না।  তিনি বিভিন্ন দৃশ্যের ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল বাছাই করে যেমন সব ক্লোজ শটগুলো একসাথে। এরকম করে কাজ করতেন। যাতে করে ছবির খরচ বেচে যেত। তিনি পরপর দুটি ব্যবসাসফল ছবি করতেন। এরপর তিনি একটি ভালো সৃজনশীল ছবি করতেন। এভাবে তিনি কাজ করতেন।
মাহমুদা চৌধুরী জহির রায়হানের সিনেমার মধ্যে মার্কসবাদী দর্শন ও নারীবাদী চিন্তার জায়গা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, জহির রায়হানের কখনো আসেনি ও কাঁচের দেয়াল ছবিটির বিভিন্ন দৃশ্য মার্কসবাদ ও একই সাথে নারীবাদী চিন্তায় প্রতিফলিত হয়েছে। তার ছবিতে নারী একটি শক্তিশালী জায়গা দখল করে আছে।
বেলায়াত হোসেন মামুন জহির রায়হানের প্রথম ছবি কখনো আসেনির মাধ্যমে একটি ম্যাজিক রিয়েলিজমের সূচনা বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমার মনে হয়েছে কখনো আসেনি সিনেমাটি একটি ম্যাজিক রিয়েলিজম ফর্মে নির্মিত। যার মধ্যে একটি ম্যাজিক রিয়েলিজম সাহি্ত্যের ধারাও বিদ্যমান। যে ছবিটি নির্মাণের আগে এই উপমহাদেশে ম্যাজিক রিয়েলিজম ধারায় কোন ছবি বা সাহিত্য আমাদের চোখে পড়েনি। এরপর এ দেশে ম্যাজিক রিয়েলিজম ধারায় সাহিত্য রচিত হয়েছে। আমার মনে হয়েছে জহির রায়হান দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন পরবর্তী ম্যাজিক রিয়েলিজম ধারার সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতারা।
স্মরণ অনুষ্ঠানের আগে বিকেলে জহির রায়হান নির্মিত প্রথম বাংলা সিনেমা কখনো আসেনি প্রদর্শিত হয়।
                                        		
					                                            
                                     
                                
									
                                                                
জহির রায়হানের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট – ভিয়েতনাম যুদ্ধ শুরু হয় ১ নভেম্বর ১৯৫৫ থেকে – তখন জহির রায়হানের বয়স – ২০ বছর দুই মাস ১১ দিন – উনি তখন কিশোর হয় কিভাবে?