
রাজেশ আল রাশেদ, একজন বাংলাদেশী আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা। আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোর এএইউতে চলচ্চিত্র লেখা ও নির্মাণের উপর এম এ করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ফিল্ম এনালিসিস এন্ড থিয়োরি বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন।। সান ফ্রান্সিসকোতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি চলচ্চিত্র বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। কাজ করেন চলচ্চিত্র লেখক, ডিরেক্টর, প্রডিউসার, এডিটর হিসেবেও। তিনি বেশকিছু শর্টফিল্ম ও টেলিভিশন প্রডাকশনে কাজ করেছেন।
রাজেশ আল রাশেদ ক্যালিফোর্নিয়ার স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রযোজনায় বিখ্যাত মটিভেশনাল ডকুমেন্টারি ট্রাস্ট ইন পোলস এর (Trust in Polls!) সম্পাদনা করেছেন। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। বায়োস্কোপ আড্ডা আয়োজিত ‘এডিটিং কনসেপ্টস অ্যান্ড ডিরেক্টরস মেমো’ বিষয়ে দুইদিনব্যাপী একটি মাস্টারক্লাস করিয়েছেন। এই মাস্টারক্লাসে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চলচ্চিত্র শিক্ষার্থীরা।
মাস্টারক্লাস শেষে কালচারাল ইয়ার্ড তাঁর মুখোমুখি হয়েছিল। তাঁর সঙ্গে কথা হয় দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্র শিক্ষার নানা দিক নিয়ে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাস্টারক্লাস করানোর অভিজ্ঞতা নিয়েও কথা বলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি ‘রোমান কবির’।
চলচ্চিত্র শিক্ষা, চলচ্চিত্রে পাঠদান ও চলচ্চিত্র নির্মাণ
ক্যালিফোর্নিয়ার ফিল্ম স্কুলগুলোতে ফ্রিলেন্স ফিল্ম টিচার হিসেবে যেখানেই সুযোগ পাচ্ছি সেখানেই পড়াচ্ছি। হলিউডকে কেন্দ্র করে ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউইয়র্কে প্রচুর ফিল্ম স্কুল আছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম ডিপার্টমেন্ট আছে। সেখানে ফিল্ম আর্ট ও ফিল্ম মেকিং নিয়ে পড়ানো হয়। প্রায় পঞ্চাশটির মতো ইউনিভার্সিটি আছে যেখানে ফিল্ম নিয়ে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি করা যায়। এগুলোতে শুধু ফিল্ম স্টাডিজ না ফিল্ম মেকিংও পড়ানো হয়। আমাদের এদেশেও আগে প্রচুর কোর্স করেছি। আমাদের এখানে ফিল্ম মেকার হওয়ার জন্য ফিল্ম স্টাডিজ পড়া হয়। কিন্তু হায়ার স্টাডিজে গেলে বোঝা যায় যে, দুটি ভিন্ন জিনিস।
ফিল্ম স্টাডিজ নিয়ে পড়লে আপনি ফিল্ম নিয়ে রিসার্চ করতে পারবেন, ফিল্মের তাত্ত্বিকতা ও নান্দনিকতা শিখবেন। এ নিয়ে পিএইচডিও করা যায়। এখান থেকে বের হয়ে আপনি ফিল্ম ক্রিটিক হতে পারবেন, ফিল্ম রিভিউ লিখতে পারবেন, ফিল্ম স্কলার হতে পারবেন। এমনকি ফিল্ম থিওরিস্টও হতে পারেন। এটা মূলত রিসার্স অ্যান্ড এনালিসিস বেসড।
আর ফিল্ম মেকিং হলো যারা ডিরেক্টর, প্রডিউসার বা রাইটার হবে তাদের জন্য। এটাতে মাস্টার্স ডিগ্রি আছে। কিন্তু এটাতে পিএইচডির কিছু নেই। কারণ এতে তো রিসার্চের কিছু নাই। এএইউতে আমার মেজর ছিলো মূলত ফিল্ম মেকিং স্পেশালাইজড ইন রাইটার-ডিরেক্টর ফর ফিল্ম। আর ফিল্ম স্টাডিজের উপরেও পড়াশুনা করেছি স্টানফোর্ডে।
এখন মূল পেশা আমার ফিল্ম টিচিং। আসলে হলিউডে ফিল্ম বানানো সহজ ব্যাপার না। এখানে মিলিয়ন ডলার বাজেটের ছবি হয়। ইটস এ লং স্ট্রাগল। আমরা যারা সাদা চামড়ার নই। আমাদের জন্য এটি আরও ডিফিকাল্ট। আমি শর্ট ফিল্ম মেকিং করেছি। কিন্তু ফিচার লেন্থ করা হয়নি। কিন্তু ফিচার ফিল্মে প্রডিউসার হিসেবে ছিলাম।
‘এডিটিং কনসেপ্টস এন্ড ডিরেক্টরস মেমো’ ওয়ার্কশপ
এটি অনেকে মনে করেছে এডিটিং কোর্স। তাহলে এই যে ডিরেক্টরস মেমো এ কথাটার মানে কি। এই কোর্সটি মূলত হলিউড স্টাইল বা হলিউড ওয়েজ বলে যে কথাটা পৃথিবীতে প্রচলিত আছে যে হলিউড কিভাবে ছবি বানায়, তাদের একটা প্রটোকল আছে মূলত তা নিয়ে ছিলো। আপনি যখন একাডেমিক্যালি কিছু করতে যাবেন তখন আপনাকে তো একটা কারিকুলাম ফলো করতে হবে। আমাদের দেশে স্ট্যান্ডার্ড কোন কারিকুলাম নেই। আপনাকে ইউরোপিয়ান বা আমেরিকান এই দুটির যে কোন একটি কারিকুলাম ফলো করতে হবে।
আমরা যেহেতু দেখেছি, ফিল্মের সবকিছু ক্রাফটের দিক থেকে, টেকনোলজির দিক থেকে, মেকিংয়ের দিক থেকে, বেশিরভাগ ইনোভেশন বা এক্সপেরিমেন্টগুলো হলিউড বেসড হয়েছে। আপনি সিনেমার ইতিহাস ঘাটলে দেখবেন পুরো বিশ্ব সিনেমা হলিউডকে রিঅ্যাক্ট করেছে। সবগুলো মুভমেন্ট হলিউডকে রিঅ্যাক্ট করেছে। হলিউডের স্ট্রাকচারাল একটা ওয়ে আছে। হলিউড বলতে যে শুধু আমেরিকা তা না, যারা এই রুলটাকে ফলো করে চলচ্চিত্র বানাবে সেগুলোই হলিউড ওয়ে অব ফিল্ম মেকিং। যেমন হলিউড ইউনিভার্সিটি (বর্তমানে ডিজিটাল হলিউড ইউনিভার্সিটি) নামে একটা ইউনিভার্সিটি জাপানে আছে। সেখানে কেবল হলিউড ওয়ে অব মেকিং ফিল্ম শেখানো হয়।
প্রতিটি জাতিরই নিজস্ব কালচার থাকবে, নিজস্ব স্টাইল থাকবে, স্টোরিটেলিং থাকবে। কিন্তু এই প্রত্যেকটা জিনিষের পেছনে একটা ক্রাফট থাকে, কিছু স্কিল থাকে। পৃথিবীর সবাই খাবার তার নিজেদের কালচার অনুযায়ী বানায়, এবং দেশে দেশে এর নিজস্ব স্টাইল আছে। স্টোরি টেলিং কোন আলাদা বিষয় নয়, তবে এর নিজস্ব একটি ভাষা রয়েছে। আপনি যে ধরণের ফিল্ম বানান না কেন আপনার সেই টেকনোলজি, সেই স্কিলটা জানা থাকতে হবে। যেমন চাইলেই আপনি একটা গল্প লিখতে পারেন না। সেটার একটা ধারা আছে, সেটার একটা ফরম্যাট আছে।
চাইলেই যে কোন লেখাকে কবিতা বলতে পারেন না। কারণ এর একটা মিটার আছে, ছন্দের ব্যপার আছে। কবিতা হযে যাওয়ার পর আপনি বলতে পারেন এটা ভালো লাগেনি বা এটা ভালো লেগেছে। এটা আপনার পার্সোনাল অপিনিয়ন। ফিল্মেরও কিছু টেকনিক আছে, কিছু ফরম্যাট আছে। সেগুলো সময়ের সাথে ডেভেলপ হয়েছে। এখন দর্শক বুঝে কোন ছবিটা স্লো, কোন ছবিটা তাদের ভাল লাগেনি, কোন ছবিটা তাদের স্মুখ লেগেছে,কম্পিজিশন কেমন ছিলো হলো-এ ধরণের কথা সাধারণ দর্শকরাও বলে। কারণ পৃথিবীর অনেক ভালো ছবি দর্শকরা এখন দেখে।
ওয়ার্ল্ড সিনেমা যেখানে আছে, সেখানে আমরা নেই
আমরা বাংলাদেশীরা এখন স্যান ফ্রান্সিকোতে রেগুলার আমাদের দেশের ছবি হলে রিলিজ হচ্ছে। ‘বায়োস্কোপ’ থেকে এই ছবিগুলো রিলিজ করা হয়। এখানে ডিরেক্টর- প্রডিউসাররা আসে, কথা বলে, টিকেট কেনা বেচা হয়। কলকাতা ও বাংলাদেশের ছবিগুলো নিয়মিত এখানে রিলিজ হচ্ছে। ছবিগুলোর ফিলোসফিকাল মান বা এসথেটিকাল মান নিয়ে বলছিনা, সেটা ভিন্ন কথা কিন্তু যদি এর টেকনিক্যাল দিক নিয়ে কথা বলি তবে দেখা যায় যে ওয়ার্ল্ড সিনেমা যেখানে আছে সেখানে আমরা নেই। ফিলোসফিক্যালি যাই হোক কিন্তু টেকনিক্যালি ওরা এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের সিনেমা নিয়ে যখন আমি আমার প্রফেসরদের সঙ্গে কথা বলেছি তখন বারবার একটা প্রশ্ন শুরু থেকে ফেস করেছিলাম যে তোমাদের এমন ছবি সাজেস্ট করো যে ছবি তোমাদের কালচারকে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমি আসলে সেভাবে খুঁজে পাইনি।
বাংলাদেশের যে ছবি একজন বিদেশী দেখলে বুঝবে যে এটা বাংলাদেশের কালচার বা এটা ঢাকা শহর বা মানুষের জীবনযাত্রা এরকম। একসময় এ দেশের লোক অনেক ছবি দেখতো, আমাদের একটা ঐতিহ্য আছে, এই যেমন ‘ছবি’ বলছি এটা বাংলাদেশের কালচার। আমাদের বাবারা বলতো ‘বই’। আমাদের দেশের ফিল্মের কালচারটা এত রিচ, কিন্তু আমাদের ফিল্ম টেকনিক্য্যালি এতটা রিচ হলো না কেন?
আমাদের ডিরেক্টরদের এ জন্য মাথায় রাখতে হবে ধরেন, আমি স্ক্রিনপ্লে ফটোগ্রাফি করে ফেললাম। এটা জাস্ট পার্ট অব দ্যা জব। ফাইনাল প্রডাক্টের পেছনে অনেক লোক কাজ করতে হয়। বিকজ এটার লাস্ট কাজটা হচ্ছে এটা হলে পর্দায় রিলিজ হবে। দর্শক সেখানে দেখবে। আমি ফটোগ্রাফ করলাম সেটার একটা ‘র’ ফুটেজ হবে। আমি সোজা কথায় বাজার থেকে যে ‘র’ মিট কিনে নিয়ে আসি, সেরকম হবে। যেমন আমাদের হলিউডে একটা টার্ম আছে- গেট দ্যা মিট টু দ্যা ক্যান। যখন শুট চলতে থাকে তখন প্রডিউসাররা বলতে থাকে- তাড়াতাড়ি কিছু ফুটেজ নেও। লাইটিং, ক্যামেরা মুভমেন্ট, ব্লকিং সব ঠিক আছে কিন্ত এর মাঝে মাঝে শুট করতে থাকে। না হলে দেখা যাবে ১২ ঘন্টা শিফট এর মধ্যে আট ঘন্টা চলে গেছে। ফুটেজ নাই। তাহলে লাভটা কি হলো। ‘র’ কে এরপর প্রসেস করে খাদ্যে পরিণত করে এরপর আমাকে দেখাতে হবে। সো ওই জায়গায় আমাদের একটা গ্যাপ আছে।
যে কোন আর্টের ক্রাফটগুলো যেন বুঝা না যায়
শুটিং শেষে এডিটিংয়ে। এডিটিংয়ে যাওয়ার পর এডিটর যেভাবেই হোক সেটাকে দাঁড়া করাবে এরপর হলে তা প্রজেক্ট হবে। শট থেকে শট যখন যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে তখন ধাক্কা লাগে। ছুটে যায়, বুঝা যায় এটা এডিট। এর একটা ফিলোসফিক্যাল সাইট আছে যে, আমি এই জাম্প কাট করবো, এটা করবো, ওটা করবো। মানুষকে ধাক্কা দেবো। বুঝাবো যে এডিটিং হল এখানে। ইচ্ছা করে করলাম যে, মানুষকে একটা ধাক্কা দিলাম। এটা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে হতে পারে। কিন্তু ফিল্মের প্রতিটি এডিট যদি আপনি দেখতে পারেন বা এটা কনসাসলি ফিল করেন যে এটার পর এটা। তাহলে আপনি পাগল হয়ে যাবেন। সাধারণ ২ ঘন্টার একটা ফিল্মে হলিউডের ফর্মেটে ২ ঘন্টায় ২ হাজারের মত কাট থাকে। আপনি যদি এই প্রতিটি কাট ফিল করেন, তাহলে ছবিটি আপনি এনজয় করতে পারবেন না।
এডিটিং এমন একটা আর্ট যে আর্টের ক্রাফটগুলো হাইড করতে হয়। যেমন পেইন্টার তার ব্রাশট স্ট্রোককে হাইড করে। এটা যেন রিয়েলিস্টিক মনে হয়। যে গান গায় তার গলার যে খাঁজ, সে যে দম নিচ্ছে এটা কিন্তু সে দর্শককে শুনাতে চায় না। এটাকে ঢাকতে চায়। আমি কখন দম নিলাম, আর দম ছাড়লাম এটা যেন দর্শক টের না পায়। এটাই শিল্পের বড় জিনিস।
শিল্পের এই ব্যাপারগুলো ঢাকাটাই হলো এর বিরাট বড় অংশ। ঠিক সেরকম কোথায় কিভাবে ক্যামেরা মুভমেন্ট করেছে। এটা যদি আপনি কনসাসলি না বুঝেন। কোথায় কাট হলো বা শট চেঞ্জ হয়ে গেলো বা সিন ট্রানজেশন হয়ে আরেকটি সিনে চলে গেলো। এটা যেন স্মুথ হয়। এটা এতো কন্টিনিউয়াস যেতে থাকে যেন দর্শক যে গল্পটা দেখতে থাকে এর বাইরে তাকে আর যেতে দিচ্ছে না। এটাই হলো একজন ডিরেক্টরের কাজ। যে এই দুই ঘন্টার জন্য আমি আমার দর্শককে আমার গল্পের মধ্যে আটকে রাখবো। তাকে অন্য কিছু আর চিন্তা করতে দেবোনা। অডিয়েন্সের সাসপেন্সন অব দিস বিলিভ ফিল্ম মেকারকে অর্জন করতে হয়।
কন্টিনিউটি এডিটিংয়ের অনেক দুর্বলতা আছে আমাদের ছবিগুলোতে
টিকিট কিনে হলে ঢুকার আগে দর্শক তো ভাববে না যে আমি সাসপেন্সন অব দিজ বিলিভ নিয়ে ঢুকেছি, যা দেখাবেন সব বিশ্বাস করবো, তা তো না। আমাকে তাকে আনকনসাসলি ছবির ওয়ার্ল্ডটাতে নিয়ে যেতে হবে। এটা একটা হিরোস জার্নি। এই জার্নিতে দর্শক সাথে থাকবে। এটা একটা ধারা। তাই কন্টিনিউটি এডিটিং বিকাম ভেরি ইম্পর্টেন্ট। এই কন্টিনিউটি এডিটিংয়ের অনেক দুর্বলতা আমাদের এখানের ছবিগুলোতে আমার চোখে পড়েছে। আমি চেয়েছি এটা নিযে আমাদের দেশে কাজ করা যায় কিনা। যদি এ নিয়ে কাজ করা যায় তাহলেও আমাদের ছবি এখন যে জায়গায় আছে তার চেয়ে ১০ ভাগ হলেও আরও উন্নত হবে টেকনিক্যালি। শুধু যদি ডিরেক্টর “শুট ফর এডিট” চিন্তা করেন আর এডিটর কন্টিনিউটি এডিটিং ফলো করে, তাহলে আমাদের যে ছবিটা আছে সেটার গল্প ও ফিলোসফি একই থাকবে, তবে তা দর্শকের কাছে আরও নান্দনিক হয়ে ধরা দেবে। এই ধারণা থেকে এই ওয়ার্কশপটা করিয়েছিলাম।
একজন এডিটর তো ছবি কাটবেই। কিন্তু ডিরেক্টর এই সম্পর্কে জানবে এডিটর কি কাটছে। কাটবে তো এডিটর। কিন্তু তাকে কাটার জিনিষগুলো তো দিতে হবে। আপনি যদি প্যান্টপিছ নিয়ে ট্রেইলারের কাছে যান স্যুট বানানোর জন্য। যত বড় ট্রেইলরই হোক, সে কিন্তু বানিয়ে দিতে পারবেনা। এর জন্য আপনাকে স্যুটের পরিমাণ কাপড়ই নিয়ে যেতে হবে। ওই কাপড়টা যোগাড় করা ডিরেক্টরের কাজ। ওই জায়গা থেকে আমাদের ওয়ার্কশপটা ছিলো। যেন ‘এ ডিরেক্টর উইল শুট ইন সাচ এ ওয়ে।’ যেন একজন এডিটর এটাকে কনিটিনিউটি এডিটিং করতে পারে। যেন দর্শক ছবিটা দেখে তার কাছে যেন ফ্লুইড মনে হয়। তার কাছে যেন একে জার্কি মনে না হয়।
আরও পড়ুন : আমার ছবি বিকল্পধারার বাণিজ্যিক ছবি : মোহাম্মদ হোসেন জেমী
অনেক টার্ম সম্পর্কে আমাদের স্টুডেন্টরা কনফিউজড
ওয়ার্কশপের বিষয়গুলো ছিলো বেসিক, যা এক সেমিস্টারে ২ দিন পড়াবার মতো একটি ম্যাটারিয়াল। এক সেমিস্টার মানে ১৫ সপ্তাহ। যেখানে ৩ ঘন্টা করে ৪৫ ঘন্টা পড়ানো যায় মাস্টার্স লেভেলে। যেখানে সব স্টুডেন্ট বেসিকগুলো জানে। এখানে অনেকেই এসেছে যেটা তাদের সেকেন্ড কোর্স। অনেকে আছে যারা ৫-৭ বছর ধরে কোর্স করছে। বিসিটিআইসহ অনেক জায়গা থেকে এসেছে। অনেক অনেক টার্ম সম্পর্কে তারা কনফিউজড। তারা বিভিন্ন কোর্সে গেছে। বিভিন্ন লোক তাদের বিভিন্ন জিনিষ শিখিয়েছে। একটা ফিক্সড কারিকুলাম নেই।
যার কারণে আমরা যে ওয়েতে এপ্রোচ করতে চেয়েছিলাম দুইদিনব্যাপী কোর্সের প্রথমদিনের মাঝামাঝি গিয়ে স্টেপ ডাউন করতে হয়েছে। এই করতে করতে দ্বিতীয় দিন গিয়ে এটি এলিমেন্টারী লেভেল বেসিক কোর্সে রুপান্তরিত করতে হয়েছে। তাদেরকে একচুয়ালি আমাদের ম্যাটেরিয়াল বাদ দিয়ে পড়াতে হয়েছে ‘হাউ টু রিড এ ফিল্ম’, ‘হাউ টু ক্রিটিক এ ফিল্ম’। এখানে আমরা কি দেখবো এটাই আমার স্টুডেন্টরা জানে না।
আমরা ভেবেছি তারা বেসিক্যালি ফিল্ম মেকার। তারা সব জানে। তাদেরকে একটু পলিশ করে দেবো। কালকে যেয়ে তারা একটা টেকনিক্যালি ভালো কাজ করে ফেলবে। সেটা কিন্তু হয়নি। কারণ ফিল্মের এডিটিংয়ে যে জার্ক হচ্ছে বা সেটা শট বাই শট যে কনিটিনিউটি প্রবলেম আছে সেটা এখনও আমাদের বেশিরভাগ স্টুডেন্টরা বুঝতে শেখেনি। আমাদের এ জন্য আরও বেসিক থেকে কাজ করা উচিত। এ জন্য আমি জিজ্ঞেস করলাম যে কোর্স অনেক হয়। আপনি কি হবেন। এটা কি আপনি জানেন। আপনি কি সিনেমাটোগ্রাফার হবেন, নাকি ডিরেকশন দিতে চান, নাকি সাউন্ডে কাজ করতে চান। আপনি কি এডিটিং করতে চান নাকি প্রডাকশন ডিজাইন করতে চান, কোনটা? এগুলো প্রথমে জানাটা আসলেই দরকার।
চলবে……)