শান্তা ইসলাম:
বাংলাদেশের ভিন্ন ধারার স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি শুধু একজন নির্মাতাই নন, একজন নির্মাতা তৈরির কারিগর। তার কাছে দীক্ষা নিয়ে অনেকেই আজ বড় বড় নির্মাতা। এ সব নির্মাতাদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন ছবিয়াল নামে গ্রুপ। এ গ্রুপের নির্মিত টেলিভিশন নাটক, সিনেমা ও বিজ্ঞাপনচিত্র দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে। দেশীয় চলচ্চিত্রে নবধারা তৈরি করা এ নির্মাতার জন্মদিন আজ।
১৯৭৩ সালের ২ মে ঢাকার নাখালপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। কালচারাল ইয়ার্ড পরিবারের পক্ষ থেকে চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর জন্মদিনে শুভেচ্ছা।
এ নির্মাতার শৈশব, কৈশোর কেটেছে ঢাকার নাখাল পাড়ায়। ফারুকীর চলচ্চিত্র নির্মাণের হাতেখড়ি শাহবাগ থেকে আজিজ সুপার মার্কেট। সেটাই ছিলো তার একসময়ের আড্ডাস্থল। শুরু করেন টেলিভিশনের জন্য নাটক বানানো। কিন্তু হতে চাইতেন চলচ্চিত্র নির্মাতা। নব্বই দশকের একবারে শেষপ্রান্তে নাট্য নির্মাতা হিসেবে শোবিজে ক্যারিয়ার শুরু করেন। তার টিভি নাটক নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছে ইন্ডাস্ট্রিতে। বিজ্ঞাপনচিত্রেও তিনি এনেছেন নতুনত্ব। টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন বিরক্তির কারণ হলেও ফারুকী নির্মিত বিজ্ঞাপন দর্শকপ্রিয়তা পায়।
বিখ্যাত লেখক আনিসুল হকের সাথে গাঁটছাড়া বেঁধে নির্মাণ করেন স্পার্টাকাস৭১, চড়ুইভাতি, কানামাছি ও এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’র মতো টেলিফিল্ম। নির্মাণ করেন তাল পাতার সেপাই, ঊনমানুষ, ক্যারাম ১ম পর্ব, ক্যারাম ২য় পর্ব, একান্নবর্তী, সিক্সটিনাইন, ৪২০ এর মতো অসংখ্য নান্দনিক নাটক ও টেলিফিল্ম।
সর্বশেষ তিনি নির্মাণ করেন আনিসুল হকের ‘আয়েশামঙ্গল’ অবলম্বনে নাটক ‘আয়েশা’। নাটকটি দর্শকপ্রিয়তায় এখনও শীর্ষে অবস্থান করছে।
সরয়ার ফারুকীর সিনেমা
২০০৪ সালে তিনি প্রথমবারের মতো নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘ব্যাচেলর’। সিনেমাটি মুক্তির পর বাংলা সিনেমার পালে যেন নতুন হাওয়া লাগে। এ ছবি দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে একটি প্রজন্ম। এ প্রজন্মের পালস যেন ধরে ফেলেন ফারুকী।
এরপর তিনি নির্মাণ করেন ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ চলচ্চিত্র। ছবিটি একটি পলিটিক্যাল স্যাটায়ার। ছবিটি ২০০৮ সালে ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে’ সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার অর্জন করেন।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ‘তিন পর্বের জীবন ও কিছু বাস্তব কেস স্টাডি’ অবলম্বনে আনিসুল হকের সঙ্গে মিলে তৈরি করেন ‘থার্ডপারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ সিনেমার চিত্রনাট্য। ২০০৯ সালে নির্মিত ছবিটিতে সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নির্মাণ কুশলতায় তুলে আনেন সরয়ার ফারুকী। ছবিটি পুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, রোটেরডেম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবসহ বেশ কিছু উৎসবে প্রশংসিত হয়।
২০১৪ সালে ছবিটি ৮৩তম অস্কারে বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। এছাড়া সিনেমাটি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার- ২০১০ এ সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা ও সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করে।
এরপর ২০১২ সালে টেলিভিশন, ২০১৩ সালে পিঁপড়াবিদ্যা, ২০১৭ সালে ডুব নির্মাণ করেন। ২০১৪ সালে টেলিভিশন সিনেমাটি বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এশিয়ান সিনেমা ফান্ড ফর স্ক্রিপ্ট ডেভেলপমেন্ট এন্ড পোস্ট- প্রোডাকশন’ এর পুরস্কার জেতে।
এছাড়া তার ডুব সিনেমাটি দুবাই ফিল্ম মার্কেট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। বলিউডের প্রয়াত সুপারস্টার ইরফান খান এ সিনেমায় মূল চরিত্রে অভিনয় করেন। ৯১তম অস্কারেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ছবিটি।
এছাড়া শুরু হয়েছে ফারুকীর ইংরেজি ভাষার সিনেমা ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ এর শুটিং কাজ। ছবিটি ২০১৪ সালে ‘এশিয়ান স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডসে’ এমপিএ ফিল্ম ফান্ড পায়। ছবিটি বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেটের অফিসিয়াল প্রজেক্ট হিসেবে সিলেক্ট হয়।
এদিকে গেলো বছর মুক্তি পায় সরয়ার ফারুকী নির্মিত সিনেমা শনিবার বিকেল। ছবিটি দেশে মুক্তির অনুমতি মেলেনি। ২০১৬ সালে ঢাকার হলি আর্টিজানে ঘটা সন্ত্রাসী হামলার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে এটি। সিনেমাটি ৪১তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবসহ বেশ কিছু উৎসবে পুরস্কৃত হয়। প্রদর্শিত ও প্রশংসিত হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
পারিবারিক জীবনে ২০১০ সালে জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ফারুকী।