চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখক ও সংগঠক বেলায়াত হোসেন মামুন। তিনি ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক এবং ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি’র প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। ২০১১ সালের পোশাক শ্রমিক আন্দোলনের উপর তিনি ‘অনিবার্য’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এছাড়া ২০১২ সালে চলচ্চিত্রকার বাদল রহমানের জীবন ও কর্ম নিয়ে ‘পথিকৃৎ’ এবং জাতীয় অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলামের জীবন অবলম্বনে ‘সময়ের মুখ’ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তিনি ‘চলচ্চিত্রের সাথে বোঝাপড়া’, ‘স্বাধীন চলচ্চিত্র আন্দোলনের ইশতেহার: বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’, ‘চলচ্চিত্রপাঠ’সহ বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। করোনাকালীন এ সময়ে চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতির নানা দিক নিয়ে কালচারাল ইয়ার্ডের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
কালচারাল ইয়ার্ড: এই গৃহবন্দী সময়ে আপনার পরিবর্তীত জীবনাচরণ ও জীবনবোধ সম্পর্কে জানতে চাই।
বেলায়াত হোসেন মামুন: প্রথম কথা জীবনাচরণে কোনো পরিবর্তন হয় নি। করোনা মহামারি শুরুর আগে প্রচুর বাইরে যাওয়া হতো, সেটা এখন হচ্ছে না। এছাড়া জীবনে আর এমন কোনো আহামরি পরিবর্তন এখনও হয় নি। তবে বহু কিছু ভাবছি। আসলে ভাবতে হচ্ছে। দুনিয়ার এমন পরিস্থিতি আমাদের তো আগে দেখার অভিজ্ঞতা ছিলো না। তাই এই ঘটনা আমাদের বহু কিছু নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। এইসব ভাবনা পরিণত হলে তা জীবনবোধে পরিণত হতে পারে। কিন্তু এখনও সে সময় আসে নি। এখনও এ সব এক অনিশ্চিত সময়ের ভাবনাই, জীবনবোধ নয়।
কালচারাল ইয়ার্ড: করোনা ভাইরাস মহামারি বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। এই সময়ে চলচ্চিত্র কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?
বেলায়াত হোসেন মামুন: রোগবালাই মোকাবেলায় চলচ্চিত্রের কোনো ভূমিকা নেই। যা এবং যতটুকু ভূমিকা, তা চিকিৎসা ব্যবস্থার। কিন্তু দুঃখজনক হলো, করোনা মোকাবেলায় দুনিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থা কিছুটা হলেও ব্যর্থ হয়েছে। এটা একটা ভয়াবহ অবস্থা এবং কতদিনে এই অবস্থা সহনীয় হবে, তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। এ রকম অনিশ্চিত একটি সময়ে মানুষের মনের রিলিফ বা স্বস্তি দরকার, সেটা শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যমেই হতে পারে। চলচ্চিত্র হয়ত সে মাধ্যমগুলোর মাঝে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভুমিকা রাখতে সক্ষম।
নির্মাতা বেলায়াত হোসেন মামুনের আরও খবর :
⇒ অনুদান কমিটি প্রতি বছর বদলানো দরকার : বেলায়াত হোসেন মামুন
আমি মনে করি, এই সময়ে নান্দনিকভাবে শক্তিশালী এবং মানবিক গল্পপ্রধান চলচ্চিত্র মানুষের মনে স্বস্তি দিতে সক্ষম। এই সময়ে অপরাধপ্রবণ ‘ক্রাইম থ্রিলার’ বা ভায়োলেন্সপ্রবণ চলচ্চিত্র না দেখাই ঠিক হবে। এতে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ আরও বাড়বে। এই সময়টা মূলত স্থিরভাবে সুস্থ থাকার লড়াইটা করা জরুরি। মহামারি এক সময় ঠিকই নিয়ন্ত্রণে আসবে। তখন আবার সব কিছু আরও ভালোভাবে করবার সুযোগ হবে। আপাতত রোগের সাথে লড়াইয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে সহযোগিতাই আমাদের প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত।
কালচারাল ইয়ার্ড: এই ব্যস্ততম পৃথিবীর মানুষ গৃহবন্দী হয়ে গেছে। ব্যস্ততা থেকে অখন্ড অবসর। এ সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেউ ছবি আঁকছে, কেউ গান গাইছে, কেউ আবৃত্তিও করছে। সিনেমাও হচ্ছে। এ সময় কি মানুষের মানবিকতা আর সাংস্কৃতিকবোধের বিকাশ ঘটবে বলে মনে করেন কিনা?
বেলায়াত হোসেন মামুন: হ্যাঁ, নিশ্চয়ই এ সব তৎপরতা মানুষকে আরও মানবিক হওয়ার সুযোগ করে দেবে। এ সময়ে মানুষের বেঁচে থাকার আশাবাদ ও সাবধানতা মানুষকে শেখাবে যে, এই প্রকৃতিতে সে কোনো শ্রেষ্ঠ প্রাণ নয়। কেবল প্রাণমাত্র। প্রকৃতির আর সব প্রাণের প্রতি ও প্রকৃতির প্রতি মানুষের অত্যাচার কমবে বলে আমি মনে করি। সাংস্কৃতিকবোধ মানুষের সামষ্টিক সামাজিক অর্জন। এই গৃহবন্দী সময়ে মানুষ যদি আরও একটু মানবিক ও ‘মানুষ’ শব্দের প্রকৃত অর্থের কাছাকাছি যেতে সক্ষম হয়, তবে তাকেই আমি মনে করবো মানুষের এক বিরাট অর্জন।
বেলায়াত হোসেন মামুনের সাক্ষাতকার :
⇒ পেশার সুরক্ষায় প্রত্যেক চলচ্চিত্রকর্মীকেই লড়তে হবে: বেলায়াত হোসেন মামুন
কালচারাল ইয়ার্ড: করোনা পরবর্তী পৃথিবী সাংস্কৃতিক মানুষের জন্য কেমন হবে বলে মনে করেন?
বেলায়াত হোসেন মামুন: এর উত্তর দেয়ার সময় এখনও আসে নি। করোনার ভয়াবহতা আমাদের জন্য কতটা ভয়ঙ্কর এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়, এটা যেমন আন্দাজ করা এখনই কঠিন। তেমনি এর প্রভাব পৃথিবীতে কি কি পরিবর্তন আনবে, সেটাও বলা এখনই সম্ভব নয়। যদি এই পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান হয়ে যায়, তবে এর এই সাময়িক আঘাত তেমন কোনো প্রভাবই পড়বে না। কিন্তু যদি এটা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে পৃথিবীর বহু প্রচলিত চিন্তার-ছক বদলে যাবে। মানুষের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আগামী দিনের মানুষের সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। অতীতেও তাই করেছে। সাংস্কৃতিক পরিবর্তন এই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বর্হিভূত বর্গ নয়।
কালচারাল ইয়ার্ড: অবসর সময় আপনার অতীত স্মৃতিতে কি কি ভেসে আসে। কোন সময়টা ধরা দেয় স্মৃতিতে?
বেলায়াত হোসেন মামুন: স্মৃতিই জীবন। স্মৃতি ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব নেই। অবসরে অথবা ব্যস্ততায় পুরো জীবনটাই দেখতে পাই। আর তাই জীবনকে অনুভব করতে পারি। জীবনকে অনুভব করার জন্য মধুর ও তিক্ত উভয় স্মৃতির মাঝে অবগাহন করি।
কালচারাল ইয়ার্ড : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
বেলায়াত হোসেন মামুন : আপনাকেও ধন্যবাদ। কালচারাল ইয়ার্ড’র প্রতি রইলো অনেক অনেক ভালোবাসা ও শুভ কামনা।