নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঋতু চলে গেছে ঋতুরাজ হয়ে / পড়ে আছে স্মৃতির পাহাড় / ঋতুরাজের ঋতুবসন্তে / ছত্রে ছত্রে বাহার।–বাংলা চলচ্চিত্রের ভিন্ন ধারার অন্যতম চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋতুপর্ণ ঘোষকে স্মরণ করে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী পংক্তিমালায় সাজিয়েছিলেন কথাগুলো। আজ এই নির্মাতার প্রয়ান দিবস। ২০১৩ সালের এই দিনে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
সত্যজিত-ঋত্বিক-মৃণাল পরবর্তী বাংলা সিনেমার অন্যতম নির্মাতা তিনি। পশ্চিমবাংলা সিনেমার আজকের নতুন মোড় ঋতুপর্ণের হাত ধরেই বলা যায়। গুণী এই চলচ্চিত্র নির্মাতার প্রতি কালচারাল ইয়ার্ড পরিবারের শ্রদ্ধা।
ঋতুপর্ণ ঘোষ কর্মজীবন শুরু করেন একটি বিজ্ঞাপনী দুনিয়ায়। এরপর ১৯৯২ সালে তিনি নির্মাণ করেন তাঁর প্রথম সিনেমা হিরের আংটি। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায় তাঁর দ্বিতীয় সিনেমা উনিশে এপ্রিল। এই ছবিতে এক মা ও তাঁর মেয়ের পারস্পরিক সম্পর্কের কাহিনী তুলে ধরেছেন তিনি। এটি দেশে বিদেশে প্রশংসিত হওয়ার পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও সফল হয়। ১৯৯৫ সালে এই ছবি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়।
এরপর তিনি একে একে নির্মাণ করেন দহন, অসুখ, বাড়িওয়ালি, তিতলি, চোখের বালি, শুভ মহরত, অন্তরমহল, আবহমান, হিন্দি ছবি রেইনকোট, চিত্রাঙ্গদাসহ অসংখ্য সিনেমা। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর পরবর্তী ছবি সত্যান্বেষী-র শ্যুটিং শেষ করেছিলেন। এই ছবিটি গোয়েন্দা ব্যোমকেশ বক্সীর কাহিনী অবলম্বনে তৈরি হচ্ছিল।
তিনি বারোটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। পেয়েছিলেন অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋতুপর্ণ ঘোষের আরও খবর :
⇒ চেতনায় ঋতুপর্ণ ঘোষ
⇒ ঋতুপর্ণ ঘোষ: এক সাহসী যোদ্ধা
বাঙালির চিন্তাকে ধরতে পেরেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। বাঙালির অনুভূতির সর্বোত্তম ব্যবহার করেছিলেন। আর তাই সবার সচেতন হৃদয়ে, সবার চেতনে অবচেতনে ধরা দিয়ে যায় ঋতুপর্ণ ঘোষ। পুরুষকে বুঝতে পেরেছিলেন, নারীর সত্তাকে আরও গভীরতা দিয়েছিলেন।
ভারতের এলজিবিটি সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। জীবনের শেষ বছরগুলিতে তিনি রূপান্তরকামী জীবনযাত্রা নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করছিলেন। তিনি নিজের সমকামী সত্ত্বাটিকে খোলাখুলিভাবে স্বীকার করে নেন, যা ভারতের চলচ্চিত্র জগতের খুব কম মানুষ করেছেন।