দেশের টিভি নাটকের জনপ্রিয় তরুণ নির্মাতা মাবরুর রশীদ বান্নাহ। গত এক দশক ধরে তারুণ্যনির্ভর ব্যতিক্রমধর্মী গল্পে তিনি নাটক নির্মাণ করেছেন, যেগুলো দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ার পাশাপাশি তরুণদের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি করতে বিরাট ভুমিকা রাখছে। নির্মাণে শুরু থেকেই দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা, যা তাকে সব সময়ই অন্যদের থেকে আলাদা করে রেখেছে। টেলিভিশন নাটক, টেলিফিল্ম ও ধারাবাহিক নিয়ে সারাবছরই ব্যস্ত সময় পার করতেন এই নির্মাতা। বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে আজ তিনি অন্যদের মতো গৃহবন্দী। সেখানেও তিনি থেমে থাকেন নি। এসময় সচেতনতা তৈরি করতে বেশ কিছু নাটক ও শর্টফিল্ম নির্মাণ করছেন। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে ব্যক্তিজীবন, ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও নানা বিষয় নিয়ে কালচারাল ইয়ার্ডের সাথে কথা বলেছেন এই নাট্য পরিচালক। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি রোমান কবির।
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনাকালীন সময় কীভাবে যাপন করছেন? এ সময়ের জীবনাচরণ ও জীবনবোধ সম্পর্কে জানতে চাই।
মাবরুর রশীদ বান্নাহ : করোনাকালীন সময়ে বাসার মানুষের সঙ্গে, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছি। মুভি দেখছি, বই পড়ছি। অনেক কাজ জমানো আছে, যেগুলোকে আগে কোন কাজ মনে হয় নি, সেগুলো করছি। আর চিন্তার জগতে অনেক পরিবর্তন আসছে। এ সময়ে অনেক কিছু নিয়ে ভাবলাম। এখন জীবনটা একটা উপলব্ধি মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, হয়তো কিছু কাজ আমি অন্যভাবে করতে পারতাম। বিশেষ করে, আমার পুরাতন কিছু নাটক, শর্টফিল্ম বা অন্যান্য কাজ দেখলাম। সেগুলো দেখে এখন আমার মনে হচ্ছে, আমি কাজটা এভাবে কেন করলাম? আমি যদি এখন ওই কাজগুলো করতাম, তাহলে আরও অনেক ভালো হতো। এখন নিজেকে শুধরে নেয়ার একটা প্রবণতা এসেছে নিজের মধ্যে। ভবিষ্যতে আমার শুদ্ধতার পথে চলার এই প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে।
করোনাকালীন পরিস্থিতি নিয়ে নির্মাতাদের ভাবনা
⇒ সরকারকে এই ক্রান্তিকালে এগিয়ে আসতে হবে : রবিন খান
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনা ভাইরাস মহামারি বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। এই সময়ে চলচ্চিত্র বা নাটক কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?
মাবরুর রশীদ বান্নাহ : চলচ্চিত্র বা নাটকের ভূমিকা কোনকালে কম ছিলো না। করোনাকালীন সময়ে সচেতনভাবে অনেক দেশেই নাটক ও চলচ্চিত্র কাজ করছে। আমাদের দেশেও সিগনিফিকেন্টলি অনেক কাজ হচ্ছে। আমিও বেশ কিছু শর্ট ফিল্ম বানিয়েছি করোনাকালীন সময়ে। কিছু ছোট ছোট কনটেন্ট বানিয়েছি। ‘টুকরো টুকরো গল্প নামে’ একটি কাজ হয়েছিলো আমার। এই ঈদের অষ্টম বা নবম দিনে ইউটিউবে এটি রিলিজ হয়েছিলো। তো সেই কাজগুলো তো মানুষ দেখে আপ্লুত হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে মানুষ এই কাজ থেকে মেসেজ পেয়েছে।
করোকালীন সময়ে সবার আগে আমি শর্টফিল্ম বানিয়েছিলাম। ১৮ মার্চ ব্যাক টু ব্যাক দুটো শর্টফিল্ম রিলিজ হলো। এভাবে কাজ করে যাচ্ছি। অনেকেই কাজ করে যাচ্ছে। দেশের বাইরে থেকেও অনেকে চেষ্টা করছেন। এগুলো থেকে মানুষ সচেতন হচ্ছেন। তবে আমাদের দেশে সচেতনতার হারটা খুবই কম।
কালচারাল ইয়ার্ড : লকডাউন খুলে গেছে। এ পরিস্থিতিতে কি কোন কাজ করার পরিকল্পনা আছে। করোনা পরবর্তী কাজের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই।
মাবরুর রশীদ বান্নাহ : লকডাউন আসলে বাংলাদেশে কখনোই ছিলো না। এটা আসলে ভুল যে লকডাউন খুলে গেছে। অনেস্টলি স্পিকিং যে সাধারণ ছুটি খুলে গেছে। তো সবাই একটা ছুটির আমেজে ছিলেন। কিংবা করোনার ভয়ে ছিলেন বা আতঙ্কে ছিলেন। এখন আমাদের সংগঠনগুলো কাজ করার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও সকলের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে, আমি এখনই শুটিং শুরু করছি না। তবে কবে কাজ শুরু করবো বা কীভাবে কাজ করবো এ নিয়ে এখনও ভাবি নি। কোন প্ল্যানও করা হয় নি।
করোনাকালে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ভাবনা
⇒ ‘শুটিং না করে ঘরে থাকার নীতিতে অটল থাকার কোনো বিকল্প নেই’
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনা পরবর্তী পৃথিবী সাংস্কৃতিক মানুষের জন্য কেমন হবে বলে মনে করেন?
মাবরুর রশীদ বান্নাহ : করোনা পরবর্তী পৃথিবী সাংস্কৃতিক মানুষের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। এখনই কঠিন হয়ে গেছে। সামনে আরও কঠিন হবে। অনেক নিয়ম কানুনের মধ্য দিয়ে চলতে হবে। সে নিয়ম কানুনগুলো আমাদের স্বাভাবিক সময়ে মানা উচিত ছিলো। যেমন ধরুন, নিয়মিত হাত ধোঁয়া। এই হাত ধোঁয়াটা তো কতবার কতভাবে কত জায়গায় বলা হয়েছে। পৃথিবীর সব জায়গায় বলা হয়েছে। বলতে বলতে সবাই কাহিল হয়ে গেছে। যেমন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা এ কথাটাও অনেকবার বলা হয়ে গেছে। এই বিষয়গুলো আমরা মানি কিনা এটাই আসল কথা। সব কিছু মিলিয়ে আমাদের কাজের ক্ষেত্রে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় গুরুত্ব আসবে।
কালচারাল ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন আসবেই। যেমন সবাই অনেক বেশি সচেতন থাকবে। ডিসটেন্সিং বাড়বে। যেমন সিনেমা হলে অনেক মানুষ আসে, কিন্তু এখন ডিসটেন্স মেইনটেইন করে আসতে হবে। এ সময় ডিসটেন্স মেইনটেইন করে অনেক কিছু ঘটবে। সিনেমার শুটিংগুলোতেও ডিফিকাল্টিস বাড়বে। যেমন দেখা গেলো একটি মারামারির দৃশ্য, সেগুলো কীভাবে করবে? এগুলো আসলে ভাবার বিষয়। সবচেয়ে বড় কথা এখন আমাদের বাঁচতে হবে, আমাদের পরিবারকে বাঁচতে হবে। আমাদের দেশের মানুষকে বাঁচতে হবে। দেশের মানুষ ও পৃথিবীর মানুষ বাঁচাটা জরুরি। সেটার পর আসলে ঠিক হবে যে আমাদের কর্মপদ্ধতি কি হবে।
কোভিড-১৯ নিয়ে তারকাদের কথা
⇒ আগামীতে একটা ইতিবাচক সাংস্কৃতিক বিশ্ব আমরা দেখতে পাবো: নিরব
কালচারাল ইয়ার্ড : অবসর সময় আপনার অতীত স্মৃতিতে কি কি ভেসে আসে। কোন সময়টা ধরা দেয় স্মৃতিতে?
মাবরুর রশীদ বান্নাহ : অবসর সময়ে আমার ছোটবেলার স্মৃতি সবার আগে মনে পড়ে। বিশেষ করে আমার স্কুল ও কলেজ জীবনের স্মৃতি ভেসে আসে। ওই সময়টা চিন্তা করতে আমি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি। যেমন ভাবি যে, ওই সময়টা আসলে আমার খুব সুন্দর ছিলো। অনেক অদ্ভূত ও মজার মজার ঘটনা ছিলো। আমার ঢাকার গভ: ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের স্মৃতিগুলো বারবার মাথায় আসে। সে সময়গুলো রোমন্থন করতে বা সময়গুলো ঘেঁটে দেখতে পছন্দ করি, ভালোবাসি।
কালচারাল ইয়ার্ড : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মাবরুর রশীদ বান্নাহ : আপনাকে এবং কালচারাল ইয়ার্ডকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।