নব্বই দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক অমিত হাসান। বর্তমানে তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনের অন্যতম খল অভিনেতা ও প্রযোজক। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ ফিল্ম ক্লাবের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। এফডিসির ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলচ্চিত্রাঙ্গনে আসেন এই অভিনেতা। ১৯৯০ সালে তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘চেতনা’ মুক্তি পায়। মনোয়ার খোকন পরিচালিত ‘জ্যোতি’ সিনেমার মাধ্যমে একক নায়ক হিসেবে অভিষেক ঘটে। নায়ক হিসেবে তিনি উজান ভাটি, তুমি শুধু তুমি, শেষ ঠিকানা, বিদ্রোহী প্রেমিক, ভালোবাসার ঘরসহ অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ২০১২ সালে ‘ভালোবাসার রং’ সিনেমায় তিনি প্রথম খল চরিত্রে অভিনয় করেন। খল অভিনেতা হিসেবে তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যরকম ভালোবাসা, প্রেম প্রেম পাগলামী, নবাব, বস ২, রাজনীতি অন্যতম। করোনাকালীন সময়ের বিভিন্ন ভাবনা ও চলচ্চিত্রের নানা বিষয় নিয়ে কালচারাল ইয়ার্ডের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনাকালীন সময়ে আপনার জীবনাচরণ ও জীবনবোধ সম্পর্কে জানতে চাই।
অমিত হাসান : করোনাকালীন সময়ে আমার জীবনাচরণ বলতে আর সবার মতো বন্দী জীবন-যাপন করছি। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছি না। বের হলেও সব ধরনের প্রটেকশন নিয়ে বের হচ্ছি। পরিবারকে সময় দিচ্ছি। আর এই পরিস্থিতিতে আমাদের জীবনবোধে বিরাট একটা পরিবর্তন এসেছে। আমাদেরকে সচেতনতা শিক্ষা দিয়েছে। আমি বলবো, এই করোনাকালীন সময়ে সচেতনতার শিক্ষাই আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন।
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনা ভাইরাস মহামারি বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। এই সময়ে চলচ্চিত্র বা নাটক কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?
অমিত হাসান : এই সময়ে চলচ্চিত্র বা নাটকের মাধ্যমে যে ধরণের ভূমিকা রাখা সম্ভব ছিলো, সেটা আর হলো না। আমাদের নাটক ও চলচ্চিত্র জগতের শুটিং সম্পূর্ণ বন্ধ ছিলো। অথচ ইরান তাদের করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই নাটক ও চলচ্চিত্র জগতের সকলে একযোগে কাজ করেছে। করোনা সচেতনতার উপর বিভিন্ন চিত্র ধারণ করে তা জাতীয় সকল মাধ্যমে অনবরত প্রচার করছে, যা আমরা করতে ব্যর্থ হয়েছি।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা নিয়ে তারকাদের ভাবনা
⇒ আগামীতে একটা ইতিবাচক সাংস্কৃতিক বিশ্ব আমরা দেখতে পাবো: নিরব
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনার কারণে এই ব্যস্ততম পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ গৃহবন্দি হয়ে গেছে। ব্যস্ততা থেকে অখন্ড অবসর। এ সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষের সৃজনশীল কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেউ ছবি আঁকছে, কেউ গান গাইছে, কেউ আবৃত্তিও করছে। সিনেমাও হচ্ছে। এ সময় কি মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিকবোধের বিকাশ ঘটবে বলে মনে করেন কিনা।
অমিত হাসান : এ সময় মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিকবোধের বিকাশ ঘটছে। তবে মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিকবোধের বিকাশ যতটা হওয়ার, তার চেয়ে বেশি তৈরি হচ্ছে আতঙ্ক। এ সময়ে তারা এই রোগের ভয়ারহতা ও প্রাদুর্ভাব নিয়ে দিনরাত দুশ্চিন্তা করছে। এটি এতো দিন ধরে চলছে, আজও কিন্তু শেষ হয় নি। বরং এর ভয়াবহতা দিন দিন বেড়েই চলছে। আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, এই সময় আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে সচেতন থাকুন আর সাংস্কৃতিক চর্চা করুন। এতে এতে শরীর ও মন, দু’টোই ভালো থাকবে।
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনা পরবর্তী পৃথিবী সাংস্কৃতিক মানুষের জন্য কেমন হবে বলে মনে করেন?
অমিত হাসান : আমার মনে হয়, বিশ্বের সকল পেশাজীবীদের মাঝে একটা বড় পরিবর্তন দেখা দিবে। বলতে পারেন, মানুষের এক সচেতনতার শিক্ষাই মানুষকে দ্রুততর এক নতুন আধুনিক সচেতন সভ্যতার দিকে নিয়ে যাবে। এটাই এক অভিনব চরিত্র তৈরি করবে আগামী বিশ্বের মানুষের মাঝে।
কালচারাল ইয়ার্ড : অবসর সময় আপনার অতীত স্মৃতিতে কি কি ভেসে আসে। কোন সময়টা ধরা দেয় স্মৃতিতে?
অমিত হাসান : আমি মূলত, অতীতের চেয়ে ভবিষ্যত নিয়েই মাত্রাতিরিক্ত দুর্ভাবনায় ছিলাম এবং আছি। যে মহামারীর কোন নিশ্চয়তা নেই, সেখানে অতীত অস্পষ্ট রয়েছে আমার কাছে।
কালচারাল ইয়ার্ড : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অমিত হাসান : কালচারাল ইয়ার্ড ও এর পাঠকদের জন্য ভালোবাসা।