কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
চেন্নাইয়ের এক হিন্দু পরিবারে বাবা সুরকার আর কে শেখর ও মা গৃহবধূ কস্তুরি দেবীর ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন ছেলে দীলিপ কুমার। বাবা নামকরা সুরকার হলেও বাবার সান্নিধ্য খুব বেশি পাননি তিনি। কারণ মাত্র নয় বছরে প্রয়াত হয়েছিলেন তার বাবা। ছোটবেলা থেকে বাবার যন্ত্র আগলে রেখেছিলেন ছেলে। কিন্তু সেই ছেলেই বড় হয়ে বাবার মতোই হয়েছেন বিখ্যাত সুরকার। শুধু বিখ্যাতই নন, তার খ্যাতি এখন বিশ্বজোড়া। তিনি কিংবদন্তি সুরকার ও শিল্পী এ আর রহমান।
দিলীপ কুমার থেকে তিনি কিভাবে মুসলমান এ আর রহমান হয়ে উঠেছিলেন। জানাবো সে খবর। ১৯৬৭ সালের ৬ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৮৮ সালে তিনি যখন ২১ বছরের, সে সময় তার বোন কঠিন অসুখে আক্রান্ত হন। তখন আবদুল কাদের জিলানী নামের এক মুসলিম পীরের দোয়ায় সুস্থ হয়ে উঠেন তার বোন। এরকম অলৌকিক ঘটনায় তাদের পুরো পরিবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এস দীলিপ কুমার নাম পরিবর্তন করে তার নাম রাখা হয় আল্লারাখা রহমান সংক্ষেপে এর আর রহমান।
এ আর রহমানের বাবা আর কে শেখর ছিলেন মালায়ালাম সিনেমার একজন মিউজিক কম্পোজার ও কন্ডাক্টর। দক্ষিনী সিনেমা থেকে বলিউডে একসময় একজন বিখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেন এ আর রহমান। ২০০৯ সালে ৮১তম অস্কার আসরে ড্যানি বয়েলের আলোচিত সিনেমা ‘স্লামডগ মিলিনিয়র’র মিউজিক কম্পোজার হিসেবে সেরা অরিজিনাল মিউজিক স্কোর ও সেরা অরিজিনাল সং ‘জয় হো’র জন্য ডাবল অস্কার জিতে বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেন তিনি।
তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রায় ৬০০-৭০০ জিঙ্গেল নির্মাণ করেছেন এ আর রহমান। এ সময়ে তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় অডিও এবং ফিল্মের গান নির্মাণ করেন।
সংগীত সম্পর্কিত আরও খবর
⇒ কপিরাইট আইনের প্রয়োগে অর্থ পাচ্ছে বাউল শাহ আব্দুল করিমের পরিবার
১৯৯২ সালে‘রোজা’ সিনেমার গান দিয়ে গোটা ভারতীয় ইন্ডাস্ট্রিতে ঝড় তোলেন তিনি। এ ছবিতে এ আর রহমানের গান মন ছুঁয়ে নেয় অসংখ্য সংগীতপ্রেমীদের মন। ছবিটির ‘দিল হে ছোটা সা’, ‘রোজা জানেমান’ গানসহ এ ছবির গানগুলো ভারতীয় ইন্ড্রস্ট্রিতে বিপ্লব এনে দেয়। ২০০৫ সালের টাইম ম্যাগাজিনের ১০ বেস্ট সাউন্ডট্রাকস অফ অল টাইম লিস্টে স্থান করে নেয় এ ছবির গানগুলো।
১৯৯৭ সালে ‘বন্দে মাতরম’র মতো মাইলস্টোন অ্যালবামের জন্ম দেন এ আর রহমান। এই অ্যালবামটি ইন্ডিয়াতে তখন বিক্রি হয়েছিল ১.২ কোটি পিস! ২০০২ সালে বিশ্ববিখ্যাত কম্পোজার অ্যান্ড্রু লয়েড ওয়েবারের সঙ্গে তার প্রথম স্টেজ প্রডাকশন বোম্বে ড্রিমস মুক্তি পায়।
ভারতের অস্কার পাওয়া ছবি ‘স্লামডগ মিলিয়নেয়ার’ (২০০৮) এর ছবির গান মাত্র ২০ দিনে তৈরি করেছিলেন তিনি। এ ছবিটির জন্যই তিনি ২টি অস্কার ও একটি করে গোল্ডেন গ্লোব ও বাফটা অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। তিনি জিতেছেন চারটি ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড এবং ১৩ টি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। তিনিই এখন পর্যন্ত প্রথম ও একমাত্র ভারতীয় যিনি একসঙ্গে দু’টি অস্কার জিতেছেন।
এ আর রহমানের সঙ্গীত করা উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে বোম্বে (১৯৯৫), রঙ্গিলা (১৯৯৫), দিল সে.. (১৯৯৮), তাল (১৯৯৯), লগান (২০০১), সাথিয়া (২০০২), রাঙ্গ দে বাসন্তী (২০০৬), গুরু (২০০৭), যোধা আকবর (২০০৮), জানে তু… ইয়া জানে না (২০০৮), স্লামডগ মিলিয়নেয়ারসহ (২০০৮) অসংখ্য।
এ আর রহমানের নামে কানাডার মরখমে একটি রাস্তাও রয়েছে। এ খবরে আবেগাপ্লুত এ আর রহমান কানাডার জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছিলেন।