রোমান কবির:
এই তো সেদিন বিকল্প চলচ্চিত্রের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এসছিলেন। বার্ধক্য পেয়ে বসলেও স্মৃতি ছিলো টনটনে। আলাপ করলেন নিজের প্রথম ক্লাসিক সিনেমা ‘ঘুড্ডি’ নিয়ে। আলাপে ছিলো নিজের সিনেমা যাত্রা ও চলচ্চিত্র আন্দোলনের টুকিটাকি। সেদিন তিনি বলেছিলেন, এখন তো তোমরা কেউ যাওনা। আগে আমার বাসার রুম খোলা থাকতো, টেবিলে ভাত তরকারি রেডি থাকতো। চলচ্চিত্রের মানুষরা বাসায় যেতেন, খেতেন, আডডা দিতেন। এখনতো তোমরা কেউ যাওনা। তোমরা বাসায় যেও।
সেদিন এই মানুষটার সঙ্গে একান্ত কিছু কথাও বলেছিলাম। বলেছিলাম নিজের চলচ্চিত্র নির্মাণ যাত্রা ও সিনেমা ও সংস্কৃতি নিয়ে নিজের পত্রিকা সম্পাদনার কথাটিও। তিনি সেদিন খুব খুশি হয়েছিলেন। আশির্বাদ ও শুভকামনা জানিয়েছিলেন আমার কর্মযজ্ঞের কথা শুনে। জানিয়েছিলেন তিনি আমার সম্পাদিত অনলাইন পত্রিকাটি পড়েন।
তবে হঠাৎ ছন্দপতন ঘটলো যেনো। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে তিনি চলে গেলেন চিরতরে। সোমবার ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ৫৩ মিনিটে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ৭৭ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন তিনি। চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
বাংলা সিনেমার অন্যতম ক্লাসিক রোমান্টিক সিনেমা ঘুড্ডি’র নির্মাতা সালাহউদ্দিন জাকী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করে গেছেন তিনি। হুইল চেয়ারে বসে কিছুদিন আগেই শেষ করলেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত দুটি সিনেমা ‘অপরাজেয় একা’ ও ‘ক্রান্তিকাল’ ছবির কাজ। অসুস্থ শরীর নিয়ে অংশ নিয়েছেন সিনেমা সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানগুলোতে।
১৯৪৬ সালের ২৬ আগস্ট তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি ছিলেন একাধারে চলচ্চিত্র নির্মাতা, কাহিনিকার, সংলাপ রচয়িতা, চিত্রনাট্যকার ও লেখক। ছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি টেলিভিশনে নাটক নির্মাণ করেছেন। টেলিভিশনের উচ্চ পদে কর্মরত ছিলেন।
১৯৮০ সালে মুক্তি পেয়েছিলো তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘ঘুড্ডি’। আমার দেখা বাংলা সিনেমার সেরা ক্লাসিক রোমান্টিক সিনেমা বলে অভিহিত করেছিলাম। সেই কথা শুনেও সামাজিক মাধ্যমে আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আমার কাজের প্রশংসা করেছিলেন।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া চলচ্চিত্রকার সালাহউদ্দিন জাকী ‘লাল বেনারসি’, ‘আয়না বিবির পালা’সহ আরও কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। তাঁর জীবন ও চলচ্চিত্র দর্শন নিয়ে নির্মাতা হুমায়ুন কবীর শুভ নির্মাণ করেছিলেন প্রামাণ্য ছবি ‘জাকী’।
জেনেছি, সম্প্রতি তিনি ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় দুটি চলচ্চিত্রের কাজ শেষ করেছেন। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারনে ইচ্ছেমতো শুটিংয়ে যেতে পারতেন না। এরপরও তিনি দমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না। হুইলচেয়ারে বসেই তিনি নির্মাণ করেছিলেন ক্যারিয়ারের শেষ দুটি ছবি। সালাহউদ্দিন জাকী ছিলেন এই প্রজন্মের সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিল্পীদের আদর্শ। সংস্কৃতি অন্তপ্রাণ সদা হাসোজ্জ্বল মানুষটি ছিলেন সবার প্রিয়পাত্র। আদর্শ ও অহংকারের প্রতীক। তিন প্রজন্মের সৃজনশীল মানুষদের মনের মনিকোঠায় বহুদিন থাকবেন তিনি কারও জাকী ভাই, কারও জাকী স্যার হয়ে। পরপারে ভালো থাকবেন স্যার।