কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
ফকির লালন সাঁইয়ের ২৫০তম জন্মবর্ষ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে চাষাঢ়ায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হয়েছে দুদিনব্যপী লালন উৎসব। এ উৎসবে হাজির হয়েছেন লালন শাহের ভক্ত অনুরাগী বাউল, ফকির ও শিল্পীরা। ফকিররা এ সময় সেখানে নানা সময়ে লালন উৎসব বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তারা মৌলবাদীদের বাধা উপেক্ষা করে এই লালন উৎসব করাকে প্রতিবাদের অংশ বলে মনে করেন।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, ‘আমরা একাত্তরে যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম, চব্বিশের আন্দোলন সে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার প্রতিশ্রুতি। একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা, সব ধর্মের স্বাধীনতা শুধু নয়, সব মত ও পথের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি চব্বিশের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান। আউল-বাউল, সুফি, সন্ন্যাসী সবার মত ও পথের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য এসব আন্দোলন বলেও এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, অর্ধশতাধিক মাজার-খানকা ভেঙে ফেলা হলেও, আক্রান্ত হলেও সরকারের লজ্জাজনক নীরবতা আমরা দেখলাম। ধর্ম রক্ষার নামে যুগে যুগে সমাজে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ধর্মের ওপর, মানবতার ওপর আঘাত হেনেছে।
লালনের বিরোধিতা করলেই তাঁকে মুছে দেওয়া সম্ভব নয় উল্লেখ করে সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম বলেন, লালন এ দেশের মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছেন। শরীয়তপুরে একজন স্বর্ণশিল্পী ফেসবুকে লালনের গান ‘সুন্নত দিলে হয় মুসলমান, নারী জাতির কি হয় বিধান’ পোস্ট করায় তাঁকে থানায় নিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে উগ্র মৌলবাদীদের বাধায় লালন মেলা হতে পারেনি। আমরা এসবের প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমাদের প্রতিবাদ চলবে।
জিয়াউল ইসলাম কাজল বলেন, দেশের কিছু কিছু মহল, কিছু উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী দেশে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিতে চায়, অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায়। তারাই রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-লালনের বিরোধিতা করছে। লালন ও কাজী নজরুল ইসলাম সারাজীবন অসাম্প্রদায়িক দর্শনের চর্চা করে গেছেন।
‘যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিষ্টান, জাতি গোত্র নাহি রবে, এমন মানব সমাজ, কবে গো সৃজন হবে’ গানের মধ্য দিয়ে শুক্রবারের আয়োজন শুরু হয়। সেখানে কুষ্টিয়া ও জোটভুক্ত সংগঠনের শিল্পীরা লালনের লেখা সংগীত পরিবেশন করেন।
আরও পড়ুন: ফের কান উৎসবের সভাপতি হলেন ইরিস নোব্লখ