কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
উত্তরায় বসন্ত উৎসব, ঢাকা মহানগর নাট্য উৎসব, চট্টগ্রামে আবৃত্তি সংগঠন প্রমা’র উৎসব, টাঙ্গাইলের মধুপুরে লালন স্মরণোৎসব বন্ধ, পায়ের আওয়াজ পায়সহ বেশকিছু নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ হয়েছে কিছু তৌহিদী জনতার তোপের মুখে। তৌহিদি জনতা সরব এ সব উৎসব বন্ধ করতে। পহেলা ফাগুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে আয়োজিত অনুষ্ঠানগুলোতে তাদের আপত্তি। এমনকি লালনের দর্শনেও আপত্তি তাদের। আর তাই এ সব কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করা যেনো তাদের ঈমাণী দায়িত্ব। কিন্তু দেশের বহুদিনেরর লালিত সাংষ্কৃতিব কর্মকাণ্ডে-ই কেনো বাধা দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে সংস্কৃতিজীবিরাও যেনো অসহায় হয়ে পড়েছে। পাল্টা প্রতিরোধের কর্মসূচি নিতে পারছে না তারা। সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে বাধা কেন?-এমন একটি বিশ্লেষণী প্রতিবেদন করেছে বিবিসি।
বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৫ই ফেব্রুয়ারি উত্তরায় বসন্ত উৎসব হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু একদল লোকের বাধার মুখে শেষ মুহূর্তে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে আয়োজকেরা। এর একদিন আগে প্রতি বছরের মতো উত্তরায় বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু সবরকম প্রস্তুতির পরও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রেও একদল লোকের দাবির মুখে আয়োজকরা এই অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশের ১৪ই ফেব্রুয়ারি একযোগে পহেলা ফাগুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালনের সময় এই দুই উৎসবকে ঘিরে সারাদেশে ওই এই ধরনের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এসব অনুষ্ঠান আয়োজনে বিভিন্ন ব্যক্তি বা গোষ্ঠির কাছ থেকে বাধা আসলেও এসব ঘটনা মোকাবিলায় স্থানীয় সরকারের উল্লেখযোগ্য কোনও ভূমিকা দেখা যায়নি।
ঢাকা মহানগর নাট্য উৎসব ও চট্টগ্রামে প্রমা’র উৎসব বন্ধ
রিপোর্টে আরও বলা হয়, ঢাকার মহিলা সমিতি মিলনায়তনে ‘ঢাকা মহানগর নাট্য উৎসব’ উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। ১৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই নাট্য উৎসব চলার কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় মহিলা সমিতিতে ‘কিছু লোক’ এসে উৎসব নিয়ে আপত্তি তুলেছে এবং হামলা করারও হুমকি দিয়েছে। তাই সব ধরনের প্রস্তুতি থাকার পরও তা করা যায়নি বলে জানিয়েছে এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ঢাকা মহানগর নাট্য পর্ষদ। চট্টগ্রামের সিআরবি মাঠে আবৃত্তি সংগঠন প্রমার বসন্ত উৎসব হওয়ার কথা ছিল। এই মাঠের অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়ার দায়িত্ব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং মহানগর পুলিশ থেকে অনুমতি নেওয়ার পরও উত্তরায় বসন্ত উৎসব করতে পারেনি ‘জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষৎ’। জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষৎ-এর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট শুক্রবার বলেন, ইমন নামের একজন ছেলের নেতৃত্বে স্থানীয়রা অনুষ্ঠানে বাধা দেয়। তাদের প্রথম সমস্যা হল, মঞ্চের নাম ‘উন্মুক্ত মঞ্চ’ না দিয়ে ‘মীর মুগ্ধ মঞ্চ’ রাখতে হবে। যখন তাদের দাবি মেনে নেয়া হলো…তখন বললো, এখানের আয়োজকদের তাদের পছন্দ না। এখানে অনেক বাচ্চারা অংশগ্রহণ করবে। আমি বাচ্চাদের দায়দায়িত্ব নিতে পারলে অনুষ্ঠান স্থগিত করতাম না। স্থানীয়দের ওপর ওই দায়িত্ব দিতে পারিনি। তবে এই ঘটনায় ‘জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ’ থানায় কোনও অভিযোগ করেনি।
বন্ধ হওয়া লালন স্মরণোৎসব
আপাতত হেফাজতে ইসলাম ও কওমী ওলামা পরিষদের নেতাকর্মীদের আপত্তির মুখে স্থগিত হওয়া টাঙ্গাইলের মধুপুরে লালন স্মরণোৎসবের তারিখ সমঝোতার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটির আয়োজক কমিটির আহবায়ক ও মো. সবুজ বলেন, আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) মধুপুর অডিটরিয়ামে রাত সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে গত ১২ই ফেব্রুয়ারি মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে লালন স্মরণোৎসব হওয়ার কথা ছিলো।
সবুজ মিয়া বলেন, “হেফাজত জানিয়েছে, আমরা উৎসব করলে তারা বাধা দিবো না। তখন আমরাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, আমরা কোনও আপত্তিকর বক্তব্য দিবো না বা ওইরকম সংগীতও পরিবেশন করবো না।”
ঘটনার দিনও এ নিয়ে প্রতিবেদন করে বিবিসি বাংলা। তখন সবুজ মিয়া বলেছিলেন, “ইসলামপন্থী কিছু দল, যেমন- হেফাজতে ইসলাম, কওমী ওলামা পরিষদ…এরা বাধা দিয়েছিলো।” “ইউএনও’র কাছে লালনের গান নিয়ে সমালোচনামূলক কোনও লেখার স্ক্রিনশট দিয়েছিলো। বলেছিলো, এই ধরনের মতবাদ শিরক বা কুফরী, যা আমরা মধুপুরে চলতে দিবো না। সেদিন মধুপুর থানা’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমরানুল করিমও জানিয়েছেন যে রাতে লালন স্মরণোৎসব অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্ত শেষ পর্যন্ত হয়নি।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
আরও পড়ুন: গেলো বছরটা ভালো যায়নি মঞ্চনাটকের, এ বছরে আশাবাদ