ব্রুকলিনের এক তরুণী আনোরা মিখিভা। সংক্ষেপে অ্যানি। যে একজন নাইট ক্লাবের ডান্সার। টাকার বিনিময়ে নাচ আর ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী শয্যাসঙ্গিনী হয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। অ্যানির এই জীবনচক্র, প্রেম, বিয়ে, ভালোবাসার নানা রঙ চিত্রিত হয়েছে এই সিনেমায়। সিনেমাটিতে প্রচুর পরিমাণ অন্তরঙ্গ মুহুর্ত, বিছানাদৃশ্যসহ অ্যাডাল্ট সিন আছে। যা প্রাপ্তবয়ষ্ক ক্যটাগরিতেই নির্মিত হতে। অ্যডাল্ট সিনেমা ‘আনোরা’ কেন পেলো অস্কার?
এবারের অস্কার আসরের সেরা চার সিনেমা মনোনয়ন পেয়েছিলো। ‘কনক্লেভ’, ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’, ‘এমিলিয়া পেরেজ’ ও ‘আনোরা’। সবাইকে পেছনে ফেলে ‘আনোরা’ পেলো সেরার পুরস্কার। ছবিটির পরিচালক শন বেকার সেরা নির্মাতার পুরস্কার পেলো। আর ২৫ বছর বয়সী আনোরা চরিত্রের মিকি ম্যাডিসন পেলেন সেরা অভিনেত্রীর পুরুস্কার। এর আগে ছবিটি গত বছর কান উৎসবে স্বর্ণপাম জিতে নেয়। তখন থেকেই ছবিটি আলোচনায় জায়গা করে নেয়। ছবিটি স্বাধীন ধারায় নির্মিত। হলিউডের জমকালো আয়োজন থেকে দূরে সরে শুধুমাত্র পরিচালক ও তার টিমের একান্ত প্রচেষ্টায় নির্মিত হয় সিনেমাটি।অস্কারের আসরে ছয়টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়ে পাঁচটিতেই ‘আনোরা’ পুরস্কার জিতে নিয়েছে। ছবিটি সেরা সিনেমা, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেত্রী ও সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য ক্যটাগরিতে পুরস্কার জিতেছে। গেলো বছর কানের পর চলতি বছর একটার পর একটা পুরস্কার জিততে থাকে আনোরা। ব্রিটিশ ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস, ক্রিটিকস চয়েজ অ্যাওয়ার্ডস, ডিরেক্টরস গিল্ড অব আমেরিকা অ্যাওয়ার্ডস, ইনডিপেনডেন্ট স্পিরিট অ্যাওয়ার্ডস, রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা অ্যাওয়ার্ডসের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার জিতে ‘আনোরা’।
ছবিটিতে কি আছে?
ছবিটি কি কারণে পুরস্কার পেলো। কি বলছেন সিনেমা বোাদ্ধারা। একজন স্ট্রিপ ড্যান্সার, একজন যৌনকর্মীর ভালোবাসার গল্প এটি। ভুল পথে যেতে যেতে ভুল মানুষের প্রেমে পড়ে ঠিক মঞ্জিলে পৌঁছে যাওয়া এক যাত্রীর গল্প এটি। যে গল্পে নিউইয়র্ক শহরে একজন নিন্মবিত্ত তরুণীর আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট ও তার মানসিক টানাপোড়েনের গল্প উঠে আসে। যেখানে দর্শককে নিয়ে যায় অন্য ভূবনে। ছবিটিতে দেখা যায় একটি বারে অ্যানি অনেক পতিতার সঙ্গে কাজ করে। সেখানে অনেক বড় বড় মানুষরা আসে। তাদের সঙ্গ দেওয়া আর ডান্স করা তার কাজ। রাশিয়ান বিলোনিয়ার বাবার একমাত্র ছেলে ইভান বানিয়া সেই নাইট ক্লাবে আসে অ্যানির সাথে সময় কাটাতে। ইভান ধনী রাশিয়ান ওলিগার্ক নিকোলাই জাখারভের ছেলে। সে সারাদিন নাইট ক্লাব, পার্টি আর ভিডিও গেমস খেলে সময় কাটায়। অ্যানির সাথে সময় কাটাতে কাটাতে একসময় সম্পর্কে আসক্ত হয়ে পড়ে বানিয়া। সে অ্যানিকে টাকার বিনিময়ে গার্লফ্রেন্ড হওয়ার প্রস্তাব দেয়। এরপর আরও কিছুদিন পর সে বিয়ে করে ফেলে অ্যানিকে। স্ট্রিপ ড্যঅন্সার অ্যানি যেনো নতুন জীবনের সন্ধান পায়। নিন্মমধ্যবিত্ত অ্যানি ধনী ওলিগার্কের ছেলের সঙ্গে সংষার করবে এ যেনো স্বপ্ন। এ স্বপ্ন ভাঙতেও অবশ্য দেরি হয়নি। ইভানের ধনী বাবা-মা এই বিয়ে মেনে নেয়নি। তারা চাপ দিয়ে অ্যানির সাথে ছেলের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটায়।
এরপর অ্যানির জীবনের পরিণতি কোথায় গিয়ে গড়ায়। অর্থের বিনিময়ে আবারও নিজেকে ভাসিয়ে দেয়। নাকি নতুন করে ভালোবাসতে শিখে। এমন একটি মাস্টারপিস চিত্রের চিত্রায়ণ আসলে আনোরা সিনেমাটি। সিনেমাটি শ্যুট করা হয়েছে নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে। সেখানে স্বাধীনধারায় সিনেমাটি নির্মিত হয়। পরিচালক শন বেকার বলেন মিকি ম্যাডিসনকে না দেখলে তিনি এই ছবি বানাতে পারতেন না। মিকি ম্যাডিসন না থাকলে ছবিটি হতো না।