কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
ভক্ত-অনুরাগীদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ইহলৌকিক জীবনের যাত্রা সম্পন্ন করে অনন্তলোকে পাড়ি জমালেন রবীন্দ্র সাধক সংস্কৃতির বাতিঘর সনজিদা খাতুন। শেষ যাত্রায় তাঁর শিক্ষার্থীরা গাইলেন ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। তিনি যেনো পরম মুক্তির দিকে ধাবিত হলেন। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন দীর্ঘ জীবন নীরব সংষ্কৃতির সাধনায় মত্ত এক সাধক। আর তাঁর শেষ বিদায়ে শেষবারের মতো ভালোবাসায় সিক্ত হলেন নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান ছায়ানটে। ২৬ মার্চ দিনব্যাপী ছায়ানট ও শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেন তিনি। এই শিল্পীর মরদেহ রাখা হয়েছে হিমঘরে।
দুপুর সাড়ে ১২টায় তাঁর মরদেহ নেওয়া হয় ছায়ানটে। সেখানে তাঁর অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী-ছাত্র-ছাত্রীদের ভিড় জমে। সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন ফাহমিদা খাতুন, রামেন্দু মজুমদার, খুরশীদ আলম, শাহীন সামাদ, সেলিনা মালেক চৌধুরী, ইফফাত আরা দেওয়ান, মিনু হক, খায়রুল আনাম শাকিল, শামীম আরা নীপা, শিবলী মহম্মদসহ অসংখ্য অনুরাগী। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সুরের ধারা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ঢাকা থিয়েটার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, কণ্ঠশীলনসহ আরও কিছু সংগঠন।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. সনজীদা খাতুন ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সঙ্গীতশিল্পী ও জাতীয় অধ্যাপক ড. কাজী মোতাহার হোসেন। রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে সংসার পাতেন তিনি। তাঁকে বাংলা সংস্কৃতির সাহসী নারী বলা হয়। বলা হয় রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য। তিনি একাধারে রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী, লেখক, গবেষক, শিক্ষক ও সংগঠক। দেশের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বর্তমান সভাপতি। জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ভিন্নধর্মী শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নালন্দা’র সভাপতি তিনি। তিনি ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতক এবং বিখ্যাত রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। আবৃত্তি ও বাচিক শিল্পচর্চা জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান কণ্ঠশীলন-এরও তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
শিক্ষক হিসেবে সনজীদা খাতুন কর্মজীবন শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে। তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত), দেশিকোত্তম পুরস্কারসহ (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) পুরস্কারে ভূষিত হন। কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট ১৯৮৮ সালে তাঁকে রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য উপাধি প্রদান করেন। ১৯৬১ সালে ছায়ানট-এর জন্ম হয়। তখন তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ছায়ানট ধীরে ধীরে তাঁর হাতে বড় বিদ্যায়তনে রুপ নেয়।
আরও পড়ুন: শুদ্ধ বাঙালি সংস্কৃতিজন সনজীদা খাতুনের ‘পদ্মশ্রী’সম্মান প্রাপ্তি
রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য সনজীদা খাতুন