কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আমাদের ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিলো বায়াত্তরে। কিন্তু দলিলে এর কোনো স্বীকৃতি ছিলোনা। তবে তার মৃত্যুর বহু বছর পরে অবশেষে এলো দালিলিক স্বীকৃতি। সেই স্বীকৃতি দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক লতিফুল ইসলাম শিবলী জানিয়েছেন এই স্বীকৃতির গেজেট তারা হাতে পেয়েছে।
কবির নাতনি খিলখিল কাজী জানিয়েছেন, এটা ভীষণ আনন্দের সংবাদ। কাজটি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি। কাজী নজরুলকে ‘জাতীয় কবি’ স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে গত ৫ ডিসেম্বর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। তবে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন থাকায় সেটি নিষ্পত্তি সাপেক্ষে গেজেট প্রকাশ করা হবে বলে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো।
লতিফুল ইসলাম শিবলী জানিয়েছেন, আদালতের বিষয়টি নিষ্পত্তি করেই গেজেট প্রকাশ হয়েছে। আমি নজরুল ইন্সটিটিউটের দায়িত্ব নেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছি।
কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশনা চেয়ে ২০২২ সালের ২২ জুন আসাদ উদ্দিনসহ সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী রিট আবেদন করেন। নজরুলকে জাতীয় কবির ঘোষণা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে তখন রুল জারি করে হাইকোর্ট। সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গেজেট চাওয়ার যুক্তিতে ওই রিট আবেদনে বলা হয়, নজরুলের জাতীয় কবির মর্যাদার বিষয়টি ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও স্বীকৃত। এছাড়া বাংলাদেশের মানুষ তাকে জাতীয় কবি ঘোষণার প্রজ্ঞাপন প্রত্যাশা করে।
১৯৭২ সালের ৪ মে যে দিন কাজী নজরুল ইসলাম দেশে ফেরেন, গেজেটে সেদিন থেকে তাকে জাতীয় কবির স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। বৈচিত্র্যময় জীবনের অধিকারী নজরুল ছেলেবেলায় পরিচিত হয়ে ওঠেন ‘দুখু মিয়া’ নামে। ১৯৭৬ সালের ২৯ অগাস্ট (১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র) ঢাকায় মারা যান কবি নজরুল। রেওয়াজ অনুযায়ী বাংলা পঞ্জিকার তারিখ মেনে তার জন্মদিন ও মৃত্যুদিন পালন করে বাংলাদেশ।