অভিনেত্রী তাহমিনা অথৈ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাট্যকলায় মাস্টার্স করেছেন ‘ওয়ার্ল্ড মিস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ২০১৭’ প্রতিযোগিতার বিজয়ী এই সুন্দরী। টেলিভিশন নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও তিনি অভিনয় করছেন। এছাড়া বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভিতে টক, ফান অ্যান্ড ফিশিং শো ‘প্রিয় শখ’ নামে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করছেন তিনি। মুক্তির অপেক্ষায় আছে তার অভিনীত ও প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুলের ‘কালবেলা’ সিনেমাটি। ‘ছেলেটি অদ্ভুত’ ও ‘চট্টলা এক্সপ্রেস’ নামে আরও দু’টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। করোনার লকডাউনের কারণে সবার মত তিনিও বন্দী। গৃহবন্দী এই সময়ে পরিবর্তীত জীবনাচরণ, জীবনবোধসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কালচারাল ইয়ার্ডের সাথে কথা বলেন এই গ্লামারাস অভিনেত্রী।
কালচারাল ইয়ার্ড: এই গৃহবন্দী সময় কীভাবে কাটছে? বর্তমানে আপনার পরিবর্তিত জীবনাচরণ ও জীবনবোধ সম্পর্কে জানতে চাই।
তাহমিনা অথৈ: পুরো দেশই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আমিও তার বাইরে না। তবে নিজের ও দেশের মানুষের ভালোর জন্য, এই সময়ে গৃহে অবস্থান জরুরী। আতঙ্ক আর ভয়ের মধ্যে অফুরন্ত অবসর। তবে উপকারও হয়েছে। আমি বাসায় পরিবারের সাথে সময় কাটাতে ভালবাসি। যেটা আগে হয়তো ব্যস্ততার জন্য হয়ে উঠতো না। নিজেকে সময় দিচ্ছি, সামনের কাজগুলো নিয়ে ভাবছি।
এই করোনাকালে মনস্তাত্ত্বিক দিকটা একটু বেশি জাগ্রত হয়েছে। সাধারণত মানুষের মস্তিষ্কের জটিল কার্যপদ্ধতি নিয়ে এখনও যখন সব জানা যায় না, প্রচুর প্রশ্নের উত্তর তাই পাওয়া সম্ভব নয়। এই মুহূর্তে পারিবারিক, সামাজিক পরিস্থিতি, পড়াশোনা, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা; এসব কিছু মিলিয়ে নিজের মধ্যে একটা স্বতন্ত্রবোধ তৈরি হচ্ছে।
জীবন একটাই, সময়ের স্বল্পতা রয়েছে। প্রতিটা মুহূর্ত মূল্যবান। তাই বর্তমানটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই যেভাবেই আছি, সেটাকে মেনে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কথায় বলেনা- দিনটাকে লুফে নাও। আমি প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করতে চাই। যেহেতু আমি অস্তিত্ববাদে বিশ্বাসী, তাই জীবনে কোনকিছুই অর্থহীন না।
অভিনেত্রী তাহমিনা অথৈর আরও খবর
⇒ তাহমিনা অথৈ অভিনীত টেলিফিল্ম ‘প্রেম যেন এক প্রজাপতি’
কালচারাল ইয়ার্ড: করোনা ভাইরাস মহামারি বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। এই সময়ে নাটক বা চলচ্চিত্র কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন।
তাহমিনা অথৈ: সুন্দর একটা প্রশ্ন করেছেন। এই করোনাকালে চলচ্চিত্র বা নাটক অবশ্যই ভূমিকা রাখছে। সচেতনতা নিয়ে ইতোমধ্যেই নাটক বা চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। শিল্পীরা নানাভাবে জনগনকে সচেতন করছেন গণমাধ্যমে, তা না হলে হয়ত মহামারী আরও বিস্তৃত আকারে ছড়াতো। তাছাড়া নাটক বা চলচ্চিত্র সবসময়ই একটা শিক্ষনীয় বিষয়। কোন না কোন ঘটনা বা বিষয়কে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠে এই শিল্প মাধ্যম।
কালচারাল ইয়ার্ড: এই ব্যস্ততম পৃথিবীর মানুষ গৃহবন্দি হয়ে গেছে। ব্যস্ততা থেকে অখন্ড অবসর। এ সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেউ ছবি আঁকছে, কেউ গান গাইছে, কেউ আবৃত্তিও করছে। সিনেমাও হচ্ছে। এ সময় কি মানুষের মানবিকতা আর সাংস্কৃতিকবোধের বিকাশ ঘটবে বলে মনে করেন কিনা।
তাহমিনা অথৈ: সংস্কৃতি একটি চর্চার বিষয়। এর পেছনে প্রচুর সময় দিতে হয়। নিজের চিন্তাকে গভীর মনোনিবেশ করে একটি শিল্প গড়ে উঠে। আমরা টাকার পেছনে এতোটাই ছুটি যে, নিজেকে নিয়ে ভাবার সময়ই হয় না। সেখানে সংস্কৃতি তো অনেক বড় বিষয়। সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে অনেক কিছু করা সম্ভব। আর এর চর্চা করার সময় আমরা এখন পেয়েছি। কেউ গান গাইছেন, কেউ কবিতা লিখছেন, সিনেমা বানাচ্ছেন।
আমরা যদি এই গৃহে অবস্থানরত সময়টাকে উপভোগ না করি, সৃজনশীলতায় মেতে না উঠি; তবে হতাশা বেশি গ্রাস করবে। সংস্কৃতিকে ভালোবাসতে হবে। এমন সুযোগ সব সময় পাওয়া যাবে না। পরিস্থিতি ভালো হলে সবাই আবার ব্যস্ত হয়ে পড়বেন।
আর আমি বিশ্বাস করি মানুষের মধ্যে মানবিকতা আছেই। এটা এখন অধিক পরিমাণে বিকশিত করার সুযোগ এসেছে। দেশের মানুষের এমন দুর্দিনে মানুষই এগিয়ে আসছেন। ত্রাণ দিচ্ছেন। মানবিকতা মন থেকে আসে। আর এটা অনেক বড় একটা গুণ।
করোনাকালীন সময়ে তারকাদের ভাবনা
⇒ এই সময়টা নিজেদেরকে গড়ে তোলার : পায়েল মুখার্জি
কালচারাল ইয়ার্ড: করোনা পরবর্তী পৃথিবী সাংস্কৃতিক মানুষের জন্য কেমন হবে বলে মনে করেন।
তাহমিনা অথৈ: যেহেতু দীর্ঘ সময় ধরে মানুষ বাসায় আছেন। কাজ বন্ধ। আমি একজন মিডিয়া কর্মী হিসেবে বলছি, অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে আমাদের মিডিয়া সংস্কৃতি। করোনা পরবর্তীকালে এটা কাটিয়ে ওঠা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। কিন্তু আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই প্রাণ দিতে পারে এই সংস্কৃতিকে।
কালচারাল ইয়ার্ড: অবসর সময় আপনার অতীত স্মৃতিতে কি কি ভেসে আসে। কোন সময়টা ধরা দেয় স্মৃতিতে?
তাহমিনা অথৈ: অবসর সময়ে আমার ছোটবেলার কথা বেশি মনে পড়ে। আমার স্কুলজীবন, বাবা মার সাথে কতো আহ্লাদ। আর আমার নানুর কথাও বেশি মনে পড়ে। শৈশবের সাথে সাথে আমি ভবিষ্যৎ নিয়েও ভাবি। আর ভাবি কীভাবে ভালো কাজের মাধ্যমে নিজেকে সমৃদ্ধ করা যায়। কীভাবে আদর্শ মানুষ এবং শিল্পী হয়ে সমাজ-উন্নয়নে ভূমিকা রাখা যায়। এ সবকিছুই আমার অবসর সময়ের পরিকল্পনা।
কালচারাল ইয়ার্ড: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
তাহমিনা অথৈ: আপনাকে ও কালচারাল ইয়ার্ডকে ধন্যবাদ।