ঢালিউডের গ্লামারাস চিত্রনায়িকা শিরিন শিলা। তিনি একাধারে একজন মডেল, অভিনেত্রী ও নৃত্য শিল্পী। প্রায় এক যুগ ধরে তিনি অভিনয় করছেন। ইতোমধ্যে মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত পাঁচটি চলচ্চিত্র। বেশ কিছু টেলিভিশন নাটক, সিরিয়াল ও বিজ্ঞাপণে অভিনয় করেছেন তিনি। চুক্তিবদ্ধ আছেন আরও দশের অধিক সিনেমায়। চলতি বছরের শুরুর দিকে শেষ করেছেন সাদেক সিদ্দিকী পরিচালিত ‘সাহসী যোদ্ধা’ চলচ্চিত্রের শুটিং। করোনার কারণে শুটিং থেমে গেলেও অভিনেত্রী হিসেবে নিজের দায়িত্বের কথা ভুলে যান নি তিনি। এ সময়ে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি নিজের সমার্থানুযায়ী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িছেন। করোনাকালীন সময়ে ব্যাক্তিজীবন, বিভিন্ন কার্যক্রম ও চলচ্চিত্রাঙ্গনের নানা বিষয় নিয়ে কালচারাল ইয়ার্ডের মূখোমুখী হন এই অভিনেত্রী।
কালচারাল ইয়ার্ড : এই ব্যস্ততম পৃথিবীর মানুষ আজ গৃহবন্দী। ব্যস্ততা থেকে অখন্ড অবসর। এই সময়টা কীভাবে কাটছে?
শিরিন শিলা : এই গৃহবন্দী সময় আসলে সবার জীবনটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। অন্য অনেক কিছুতেও পরিবর্তন আসছে। যেমন, আমি এ সময় বাসায় থেকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখছি। যার কারণে নিজে সেইভ থাকছি এবং অন্যদেরকেও সেইভ রাখছি। কোভিড-১৯-এর কারণে পাওয়া এই অবসরে পরিবারকে সময় দিতে পারছি। সংসারের কাজে মাকে কাজে সাহায্য করতে পারছি। বুঝতে পারছি, কীভাবে মা সংসার সামলায়। এখন পরিবারের সদস্যদের সাথে ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং তৈরি হচ্ছে।
আর এই অবসরে আমি অনেক কিছু শিখতে পারছি, অনেক কিছু জানতে পারছি। এমনিতে অন্য সময় কাজে অনেক ব্যস্ত থাকতে হতো, তখন এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার সময় পেতাম না। তাই আমি মনে করি, এই অবসর সময়টাকে কাজে লাগাতে পারলে, এটাই হবে জীবন গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়।
কালচারাল ইয়ার্ড : এই করোনা ভাইরাসের সময়ে চলচ্চিত্র বা নাটক কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?
শিরিন শিলা : আমরা যারা চলচ্চিত্র শিল্পী, আমরা তো আর এ সময় নির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারবো না। আমরা যেটা করতে পারি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা গণমাধ্যমের সহায়তায় মানুষকে সচেতন করতে পারি। সবাইকে বুঝাতে পারি, ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুঁতে, বলতে পারি সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে। তাদের জন্য ঘরে বসে ভালো ভালো ভিডিও বানাতে পারি।
চিত্রনায়িকা শিরিন শিলার আরও খবর :
⇒ ছবির সংখ্যা নয়, মানের দিকে গুরুত্ব দিতে চাই: শিরিন শিলা
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হয়তোবা কোভিড-১৯ নিয়ে অনেক ভালো ভালো চলচ্চিত্র হবে, নাটক হবে। এটা নিয়ে অনেক ভালো ভালো ডকুমেন্টারি হতে পারে। তখন আমরা নানা ধরণের মেসেজ দিতে পারবো। কিন্তু এখন ঘরে বসেই মেসেজ দেওয়া শ্রেয়।
কালচারাল ইয়ার্ড : তরুণ চলচ্চিত্র তারকাদের সংগঠন ইয়াংস্টার টিম ও করোনাকালীন সময়ে আপনাদের কার্যক্রম নিয়ে যদি কিছু বলতেন।
শিরিন শিলা : আসলে আমাদের ইয়াংস্টার টিম আমরা চেষ্টা করেছি, এই সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। কারণ মানুষ মানুষের জন্য। এই দুর্যোগময় মুহুর্তে আমরা চেষ্টা করেছি মানুষকে যথাসাধ্য সাহায্য করতে। ভবিষ্যতেও আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী মানুষকে সাহায্য করে যাবো।
এছাড়াও এ সময়ে আমি ব্যাক্তিগতভাবে সাধ্যানুযায়ী মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। রোজার সময় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে দুঃস্থ মানুষদেরকে ইফতারি দিয়েছি। ঈদের সময় সেমাই, চাল, ডাল, পোলাউর চালসহ খাদ্য সামগ্রী দিয়েছি, যাতে করে ওই মানুষগুলো যেন ঈদে ভালো খাবার খেতে পারে। চেষ্টা করেছি মানুষের জন্য কিছু করার। এখন যদি আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রাখেন, তাহলে আরও করবো।
কালচারাল ইয়ার্ড : এ সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেউ ছবি আঁকছে, কেউ গান গাইছে, কেউ আবৃত্তিও করছে। সিনেমাও হচ্ছে। এ সময় মানুষের মানবিকতা আর সাংস্কৃতিকবোধের বিকাশ ঘটবে বলে মনে করেন কিনা?
শিরিন শিলা : অবশ্যই মানবিকতার ও সাংস্কৃতিকবোধের বিকাশ ঘটবে। যে যে-ই সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে বিনোদিত হয় তাকে সেই চর্চা করা উচিত। সেটা অনেকেই করছে। যেমন, অভিনেত্রী হিসেবে আমরা ঘরে বসে যতটুকু পারছি মানুষকে বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা সবাইকে বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি নিজেরাও বিনোদনের মধ্যে থাকার চেষ্টা করছি। এ সময় সবাই আতঙ্কের মধ্যে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। এ সময় অবশ্যই আমাদের বিনোদন দরকার।
করোনাকালীন সময়ে তারকাদের ভাবনা
♣ করোনাকালীন সময়ে সচেতনতার শিক্ষাই আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন : অমিত হাসান
♣ করোনা পরবর্তী সময়ে শিল্পের মান অনেকখানি বেড়ে যাবে : নওশাবা
আর আমাদের মানবিকতার বিকাশে এ ধরণের বিনোদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রত্যেকটি সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্যে যেমন বিনোদন থাকে, তেমনি মানবিকতারও শিক্ষা থাকে। তাই আমি মনে করি, আমরা আতঙ্কে না থেকে কীভাবে আনন্দে থাকবো, আমাদের সেই চেষ্টা করা উচিত। তাহলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বাড়বে। এখন অনেকে ভয়ে হার্ট অ্যাটাকেও মারা যাচ্ছে। সেখানে আতঙ্কে না থেকে আমরা যদি বিনোদনের মধ্যে থাকি, সেটা আমাদের জন্য অবশ্যই ভালো।
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনা পরবর্তী পৃথিবী সাংস্কৃতিক মানুষের জন্য কেমন হবে বলে মনে করেন?
শিরিন শিলা : করোনা পরবর্তী সময়টা আমাদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অর্থনৈতিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। এ ঘরবন্দী সময়ে আমরা অর্থনৈতিকভাবে এমনিতেই দুর্বল হয়ে গেছি। যাদের কোন সঞ্চয় নাই, তারা তো আরও বিপদে পড়বে। এ সময়ে আমাদের উচিত, যারা অর্থনৈতিক ক্ষতির মধ্যে পড়ছে, তাদের যতটুকু সম্ভব হেল্প করা। যখন সময় স্বাভাবিক হবে, তখন কীভাবে আমরা আবার নিজের পায়ে দাঁড়াব, স্বচ্ছলতা অর্জন করবো, এটা নিয়ে ভাবতে হবে। এখন বেঁচে থাকার লড়াইটা খুব ইম্পর্টেন্ট। আশা করি, আমরা আবার উঠে দাঁড়াতে পারবো।
কালচারাল ইয়ার্ড : অবসর সময় আপনার অতীত স্মৃতিতে কি কি ভেসে আসে। কোন সময়টা ধরা দেয় স্মৃতিতে?
শিরিন শিলা : ঘরবন্দী থাকতে থাকতে মনে পড়ে যায়, আমাদের সেই কাজের জায়গাটা। যে সময় কর্মমুখর জীবন কাটাতাম। দর্শকদের ভালোবাসার একটা জায়গা ছিলো। সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের বিষয় ছিলো। সেই সময়গুলো স্মৃতির পর্দায় ভেসে আসে বারবার।
কালচারাল ইয়ার্ড : কালচারাল ইয়ার্ডকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
শিরিন শিলা : কালচারাল ইয়ার্ডকেও ধন্যবাদ।