কমেডিয়ান ও গায়ক কমর উদ্দিন আরমান। প্রতিভার পাশাপাশি নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে পরিচিতি পাওয়া একজন শিল্পী। দেশের দুইটি রিয়েলিটি শো’তে অংশগ্রহণ করে কাঙ্খিত সাফল্য না পেলেও ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল জি বাংলার জনপ্রিয় কমেডি শো ‘মীরাক্কেল’-এর নবম আসরের পেলেন সফলতা। হলেন দ্বিতীয় রানারআপ। সেখানে শুধু কমেডিয়ান হিসেবেই নয়, গায়ক হিসেবেও পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। দেশে ফিরে নাটকেও অভিনয় করেছেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই শিল্পী। প্রতিষ্ঠা লাভ করতে চান গায়ক হিসেবে। সে লক্ষে কাজও করে যাচ্ছেন তিনি। হঠাৎ করে মহামারী করোনার কারণে গৃহবন্দী হয়ে পরেন দেশ-বিদেশে স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ত থাকা এই স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান। করোনাকালীন সময়ে ব্যাক্তিজীবন, কমেডি ও সঙ্গীতসহ নানা বিষয় নিয়ে কালচারাল ইয়ার্ডে সাথে একান্ত আলাপচারিতায় ছিলেন তিনি।
কালচারাল ইয়ার্ড : এই গৃহবন্দী সময় কীভাবে কাটছে? এ সময়ে আপনার পরিবর্তীত জীবনাচরণ ও জীবনবোধ সম্পর্কে জানতে চাই।
কমর উদ্দিন আরমান : এই গৃহবন্দী সময়টা আসলে আমাদের অনেক পরিবর্তন করে দিয়েছে। আমরা যে ধরণের কাজ করি, স্টেজ শো বা টেলিভিশন প্রোগ্রাম; এ ধরণের কোন কাজ এখন আমরা করতে পারি না। এ সময়টা আমরা ঘরে বসে কাটাচ্ছি। আমাদের জীবনাচরণের মধ্যে আমরা রাত করে ঘুমাতাম, বেলা করে উঠতাম। এখন সঠিক সময়ে ঘুমাই, সঠিক সময়ে উঠি। প্রার্থনা করি, নামাজ পড়ার চেষ্টা করি।
আর জীবনবোধের যে ব্যাপারটা সেটা হচ্ছে, পৃথিবীতে যেভাবে মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে, আগে সেভাবে মৃত্যু সম্পর্কে অনুধাবন করার সুযোগ হয় নি। এখন প্রতিদিন মৃত্যু সম্পর্কে অনুধাবন হচ্ছে যে, একদিন মৃত্যুবরণ করতে হবে, ফিরতে হবে তার কাছেই। যে কয়দিন আছি, সেই কয়দিন চেষ্টা করবো মানুষের জন্য কিছু করার, এভাবেই এখন চেষ্টা করে যাচ্ছি।
কালচারাল ইয়ার্ড : এই করোনা ভাইরাসের সময়ে সঙ্গীত ও স্ট্যান্ড আপ কমেডি কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?
কমর উদ্দিন আরমান : বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের খবর দেখতে দেখতে, পড়তে পড়তে মানুষ ভয়ে এক ধরণের প্যানিক হয়ে যাচ্ছে। সার্বক্ষণিক তারা চারদিকে মৃত্যুর মিছিল নিয়ে কথা বলে। প্রতিদিন কতজন মানুষ মারা যাচ্ছে, কতজন আক্রান্ত হচ্ছে, এগুলো নিয়ে আলাপ করতে করতে প্যানিক সৃষ্টি হচ্ছে। এ সময়ে সঙ্গীত বা স্ট্যান্ড আপ কমেডি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশেষ করে সোস্যাল মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের যারা অডিয়েন্স আছে, তাদেরকে আমরা সব সময় আনন্দ দিতে পারি। ডাক্তাররাও বলে মানুষকে আনন্দ দিলে বা মানুষ আনন্দে থাকলে তার বা তাদের ইমিউনিটি সিস্টেম ডেভেলপ করে। আমরা সবাই এগুলো ট্রাই করছি।
আর করোনা রোগীর চিকিৎসা যেখানে হচ্ছে সেখানে আমরা দেখছি যে, তাদের খেলাধুলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তাদের গান শোনানো হচ্ছে। বিভিন্নভাবে তাদের আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তো এই সময় অবশ্যই স্ট্যান্ড আপ কমেডি বা সঙ্গীত অন্যান্য আনন্দের তুলনায় এই আনন্দ দেওয়া খুব দরকার। আমার কাছে মনে হয়, সরকারিভাবে করোনা রোগীদের সুস্থ রাখার জন্য ও আনন্দে রাখার জন্য স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান বা সঙ্গীতের লোকদের নিয়োগ করা যেতে পারে। আর সেটা যদি হয়, সেটা খুবই ভালো হবে। আর এ কাজে আমাকে বলা হলে, আমি অবশ্যই ছাঁপিয়ে পড়বো করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবায়।
কালচারাল ইয়ার্ড : এই ব্যস্ততম পৃথিবীর মানুষ গৃহবন্দী হয়ে গেছে। ব্যস্ততা থেকে অখন্ড অবসর। এ সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেউ ছবি আঁকছে, কেউ গান গাইছে, কেউ আবৃত্তিও করছে। সিনেমাও হচ্ছে। এ সময় মানুষের মানবিকতা আর সাংস্কৃতিকবোধের বিকাশ ঘটবে বলে মনে করেন কিনা?
কমর উদ্দিন আরমান : আসলে মানবিকতা আর সাংস্কৃতিকবোধের বিকাশের মধ্যে কিঞ্চিৎ সম্পর্ক আছে। আমি বিশ্বাস করি, যাদের মধ্যে সাংস্কৃতিকবোধের তৈরি হয়, তাদের মধ্যে অটোমেটিক্যালি মানবিকতা জন্মায়। আর এ সময় যারা সাংস্কৃতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, তাদের মধ্যে মানবিকতার বিকাশ ঘটবে বলেই আমি মনে করি।
আরেকটা কথা হচ্ছে, মানুষ যখন বিপদে পড়ে, তখন অনেকগুলো হাত এক সাথে হয়ে যায়। মানুষ কাঁধে কাঁধ মেলায়। মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। এখন মানুষ করোনার এই বিপদে যাদের ঘরে বাজার নেই, চাল ডাল নেই, পাশের বাড়ির যে মানুষটির সেই সামর্থ আছে, সে চেষ্টা করছে হয়তো পাশের বাড়ির মানুষটিকে একটু সাহায্য করার। আর এরকম যে কোন বিপদে বা মহামারীতে মানুষের মধ্যে মানবিকতা জন্ম নেয়। যে কোন বিপদের সময় এটা হয়ে থাকে।
কালচারাল ইয়ার্ড : করোনা পরবর্তী পৃথিবী সাংস্কৃতিক মানুষের জন্য কেমন হবে বলে মনে করেন?
কমর উদ্দিন আরমান : করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে কাজের প্রতি মানুষ বেশি মনোযোগী হয়ে পড়বে। কারণ যে অর্থনৈতিক ধাক্কা আসবে, সেটি পূরণে মানুষ কাজ করবে- এটা আমার ধারণা। আমাদের স্টেজ শো হবে না, টেলিভিশন প্রোগ্রাম হতে পারে। আর পৃথিবী সুস্থ হলেও অনেক সময় ধরে মানুষ সোস্যাল ডিসটেন্স মেইনটেইন করবে। তো, করোনা পরবর্তী সময় সাংস্কৃতিক অঙ্গন খুব সহসা স্বাভাবিক হবে না। কিন্তু এক সময় তা হবেই। আবার মঞ্চে গান হবে। এখন যে গ্যাপ তৈরি হচ্ছে, সে সময়ের পরে আমরা যা মানুষকে দেবো, সে জন্য নতুন নতুন গান তৈরি হচ্ছে, নতুন নতুন কৌতুক তৈরি হচ্ছে। সেই নতুন সময়ের জন্য আমরা এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা সেইদিনের প্রত্যাশায় আছি।
কালচারাল ইয়ার্ড : অবসর সময় আপনার অতীত স্মৃতিতে কি কি ভেসে আসে। মানষপটে কোন সময়টা বেশি ধরা দেয়?
কমর উদ্দিন আরমান : আসলে অনেক স্মৃতি এ সময়ে চলে আসে মনে। এর মধ্যে আমার ছেলেবেলা, খেলাধুলা, স্কুলের দুরন্তপনা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা স্মৃতিতে ভেসে আসে। এছাড়া যে সময়টা আমার সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে সেটি হচ্ছে, মীরাক্কেলে আমার সাড়ে সাত মাসের সময়টা। সে সময়ের পার্ফরমেন্স, আমি ঘুমালেও সেটি স্বপ্নে দেখি। তো মীরাক্কেলের সেই সময়টা, মীরাক্কেলের সেই টিমটাকেই আমি এ সময় সবচেয়ে বেশি মিস করি।
কালচারাল ইয়ার্ড : আমাদেরকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
কমর উদ্দিন আরমান : আপনাদেরও ধন্যবাদ।