বিশেষ প্রতিবেদক:
চলচ্চিত্র বাস্তব জীবনের মতো চলমান ঘটনাকে প্রদর্শণ করা হয়। তবে বাস্তব কোনো ঘটনাকে ক্যামেরায় ধারণ করলেই তা চলচ্চিত্র হয়ে উঠে না। জীবনের বাস্তব উপলব্ধিতে নাড়া দিতে কিংবা অর্থময় করে তুলতে চলচ্চিত্র নির্মাণে বিশেষ কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়। তাহলো বিভিন্ন শিল্প মাধ্যমের অংশগ্রহণে ও কারিগরি সহযোগিতায় বাস্তবতার অনুভূতিকে স্পর্শ করানো। সঙ্গীত সেই পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম সহযোগী।
চলচ্চিত্রে সময়ের হিসাব পূর্ব-নির্ধারিত। প্রতি সেকেন্ডে ২৪টি স্থিরচিত্রের চলমানতা চলচ্চিত্রে রুপান্তর করে। কিন্তু চিত্র ধারনের লয় বা গতি কতো হবে তা ক্যামেরার কারসাজির উপর নির্ভর করে। একটি নৃত্যরত বালিকাকে চিত্রায়ন করে তাল ও লয়কে বোঝানো সম্ভব, কিন্তু প্রকৃতির স্থির কোনো উপাদান অথবা বাতাসে তাদের নাড়াচাড়া কিংবা চতুর শিয়াল যখন তার শিকার নিয়ে কানামাছি খেলে, সেই ঘটনাকে কোন লয়ে বাঁধা যাবে, তা শব্দের লয়-তাল সংযোজন ছাড়া বোঝানো কিছুটা মুশকিল।
বাংলা চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক সায়েম রানা তাঁর এক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, বিষয়টি এমন যে, কোনো দৃশ্যের সাথে সঙ্গীতের লয় দ্রুত করে দৃশ্যটিতে চঞ্চল বা অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি করা যায়, আবার লয় বিলম্বিত করে দৃশ্যটি স্থির শান্ত অথবা গম্ভীর ভাব সৃষ্টি করা সম্ভব। সঙ্গীতের সঙ্গে চলচ্চিত্রের এমন ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে।
আবার এমন কিছু দৃশ্য আছে। যা বিশেষ বা প্রাসঙ্গিক শব্দ ছাড়া ঘটনার মুল উদ্দেশ্যকে প্রকাশ করা সম্ভব না। যেমন ধ্যানান্ত কোন সাধু-সন্তুর চরিত্র হঠাত চমকে উঠে ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকালো। ধরা যাক মতঙ্ক বা অতীশ দীপঙ্গকরের মতো কোন সাধকের চরিত্র। সে কি বন্তু দেখলো তা সরাসরি যদি না দেখানো হয় তাহলে চরিত্রকে প্রতিষ্ঠিত করা কঠিন। এক্ষেত্রে পরিস্থিতির অনুকূলে এক্সপ্রেশনের মাধ্যমে কোনো শব্দ ব্যবহার করে তার সমাধান দেয়া সম্ভব। এ জন্য চিত্রকে সার্বিকভাবে উচ্চমার্গীয় করতে হলে স্যুটিংয়ের আগেই সুর, তাল লয়ের নির্দেশনা তৈরী করে নেয়া ভাল।
সঙ্গীতের আরও খবর
⇒ সুরে সুরে আল্লাহর ৯৯ নামে ডাকলেন ইমন
সত্যজিত রায় চলচ্চিত্রের সাথে সঙ্গীতের সস্পর্ক নিয়ে বলেছেন চলচ্চিত্রের সঙ্গে সঙ্গীতের একটা সস্পর্ক রয়েছে। এবং ছবি হওয়া স্বত্বেও সিনেমা জিনিষটা চিত্রকলা বা ফটোগ্রাফি থেকে পৃথক। কথাটা সাধারণ অর্থে বেখাপ্পা মনে হলেও গতি বা লয়ের বিচারে তা সমগোত্রীয়।
চলচ্চিত্রে নাটকীয়তা সৃষ্টি করতে হলে অভিনয় দক্ষতা, সংলাপের তীক্ষ্ণতা এবং সস্পাদনার শিল্পবোধ থাকা বাঞ্চনীয়। একইভাবে সঙ্গীতের সুর, শব্দ নির্বাচনেও যথার্থ জ্ঞান থাকা দরকার। সঙ্গীত পরিচালক সায়েম রানা বলেন, এ দেশে চলচ্চিত্রে সঙ্গীতের ব্যবহার সাধারণত দুইভাবে হয়। প্রথমত দৃশ্যের মধ্যকার ভাব ফুটিয়ে তোলার জন্য ব্যবহার করা হয় আবহসঙ্গীত। দ্বিতীয় সরাসরি গান ব্যবহার করে মুল ঘটনার সঙ্গে বৈচিত্র্য আনা হয়। এক্ষেত্রে ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রে গান নিজেই নাটকীয় শক্তি ব্যবহার করে। চিত্রনাট্যের গভীরতা দান, দ্বন্ধ-টেনশন জট ইত্যাদির মাঝে আরামদানেও গানের প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। কখনও কখনও অনেক বড় ঘটনাকে সংক্ষেপন করতে গিয়ে বা পেছনের ঘটনাকে তুলে আনতে এমনকি কোনো বিশেষ দৃশ্যকে বিশ্লেষণাত্মক রুপে তুলে ধরতে গানের ব্যবহার করতে দেখা যায়। আবার একটি ঘটনার মধ্যে অন্য কোন কল্পনা, স্বপ্ন বা ভবিষ্যতকে উপস্থাপন করতে বিশেষ করে নীতি শৃঙ্খলা বিবেককে জাগ্রত করতে চলচ্চিত্রে গানের জুড়ি নেই।