নিজস্ব প্রতিবেদক:
কখনও নীল আকাশের নিচে ঘুরে বেড়ানো প্রেমিক পুরুষ, রংবাজ হয়ে গুন্ডা প্রেমিক আবার কখনও বাবা কেন চাকরের আদর্শ বাবা। সবমিলিয়ে চার দশকের দীর্ঘ ক্যরিয়ার নিয়ে রাজত্ব করেছেন বাংলা চলচ্চিত্রে। তিনি নায়ক রাজ রাজ্জাক। ২৩ জানুয়ারি তার ৭৭ তম জন্মবার্ষিকী। গত বছরও পরিবার ও সহকর্মীদের নিয়ে নিজের জন্মদিন পালন করেছিলেন তিনি। আর এবার রাজ্জাকবিহীন জন্মদিন পালন করলেন পরিবারের সদস্য ও দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও সহযোদ্ধারা।
মঙ্গলবার দিনভর নায়করাজ রাজ্জাকের জন্মদিন উপলক্ষে ছিল নানা আয়োজন। তার পরিবার, চলচ্চিত্র শিল্পী-কুশলীদের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও নায়ককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন ভক্তরা।
এদিন সকালে নায়করাজ রাজ্জাকের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। এ সময় তার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান ও সহ-সভাপতি রিয়াজ। এরপর বিকাল সাড়ে ৩টা নাগাদ শিল্পী সমিতির অফিসে নায়করাজের জন্মদিনের কেক কাটা হয়। এ সময় কেক কাটেন নায়করাজের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করে অনন্য সাফল্য পাওয়া অভিনেত্রী কবরী। তিনি ছাড়া কেক কাটার সময় উপস্থিত ছিলেন মিশা সওদাগর, আলমগীর, সুচন্দা, ফেরদৌস, জায়েদ খান, পরিচালক আজিজুর রহমান, মুশফিকুর রহমান গুলজারসহ আরও অনেকে।
এ সময় নায়করাজ রাজ্জাককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন তারা। অভিনেত্রী কবরী রাজ্জাকের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে অনেকগুলো ছবিতে অভিনয় করার সৌভাগ্য হয়েছিলো। কাছ থেকে দেখেছি মানুষটাকে। সবাইকে কতো সুন্দরভাবে আপন করে নিতেন। আজ তিনি নেই। এই প্রথম তাকে ছাড়া তার জন্মদিনের কেক কাটতে হয়েছে। মনটা ভারি হয়ে আছে। তবুও দোয়া করি, তিনি যেন শান্তিতে থাকেন।
অভিনেতা আলমগীর বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত রাজ্জাক ভাইয়ের এমন কোনো জন্মদিন ছিলনা যে আমি উপস্থিত ছিলাম না। কিন্তু ৯০ সালের পর থেকে এই ২৩ জানুয়ারিতে আমি তার জন্মদিনের পার্টিতে উপস্থিত থাকতাম না। কারণ এই দিনে আমার মা মারা যায়। আর আমার মায়ের মৃত্যুর খবরটাও রাজ্জাক ভাইয়ের কাছ থেকে পেয়েছিলাম। আলমগীর বলেন, ছোটবেলায় উত্তম কুমার, দিলীপ কুমারের ছবি দেখতাম। তখনই নায়ক হতে ইচ্ছে করত। কিন্তু চলচ্চিত্রে এসে বুঝলাম আমাকে নায়করাজ রাজ্জাক হতে হবে। আমি তখন থেকে আজও চেষ্টা করে যাচ্ছি।
শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, রাজ্জাক সাহেব শুধু একজন অভিনেতা ছিলেন না, তিনি আমাদের অভিভাবক ছিলেন। তার দেখানো পথেই আমরা চলছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন ওপারেও শান্তিতে থাকেন।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, নায়করাজ ছিলেন শিল্পী সমিতির প্রথম সভাপতি। তার নেতৃত্ব ইন্ডাস্ট্রিকে আলোর পথ দেখিয়েছে। তার নামে একটি শুটিং ফ্লোরের নামকরণের জন্য এফডিসির এমডির কাছে লিখিত দাবি জানাবে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। এই এফডিসিতে তিনি চিরকাল সম্মানের সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
আরিফিন শুভ জানান, নায়করাজ রাজ্জাকের ‘অশিক্ষিত’ চলচ্চিত্রটি অসংখ্যবার দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘অশিক্ষিত’ চলচ্চিত্রটি রিমেক হলে, আমি তাতে ‘রহমত ভাই’ চরিত্রে অভিনয় করতে চাই।
রাজ্জাকের উল্লেখযোগ্য ছবির তালিকায় রয়েছে ‘বেহুলা’, ‘রংবাজ’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘অমর প্রেম’, ‘ঢাকা ৮৬’, ‘সৎ ভাই’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘বেঈমান’, ‘কখগঘ’, ‘চাচ্চু আমার চাচ্চু’, ‘আকাশ কতো দূরে’।
১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি নায়করাজের জন্ম হয় কলকাতার ৮ নম্বর নাগতলা রোডের বাড়িতে। ১৯৬৪ সালে কলকাতা ছেড়ে স্ত্রী-পুত্রসহ ঢাকায় এসে বসবাস শুরু করেন। নানা সংগ্রামের ভেতর দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের নায়ক হিসেবে। বর্ণাঢ্য এক নায়করাজের জীবন শেষে তিনি ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।