বিশেষ প্রতিবেদক:
ফাগুনের রং লেগেছে প্রকৃতিতে, দোলা দিয়ে যাচ্ছে হৃদয় ও মন। বাসন্তী উৎসবে মেতেছে নগরবাসী। কিন্তু এই উৎসবের মাঝেও কি যেন নেই। মনটা হয়ে যায় উদাস। হ্যাঁ, মানুষের হৃদয়ে রং ছড়ানোর কারিগর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র হুমায়ুন ফরীদি নেই। ২০১২ সালের এই দিনে সবার মাঝে সব রং বিলিয়ে দিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন তিনি। তাঁকে ছাড়া আজ ছয়টি বসন্ত পার করেছে প্রিয় সব মানুষেরা।
মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র সব মাধ্যমের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা ফরীদি। কারও কাছে স্যার, আর কারও কাছে ফরীদি ভাই। তিন দশকের অভিনয় জীবন ছিল যতটা বর্ণিল, ঠিক ততটুকুই সহজ ও সাদামাটা ছিল তাঁর জীবন।
ঢাকার নারিন্দায় ১৯৫২ সালের ২৯শে মে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ুন ফরীদি । তাঁর বাবার নাম এটিএম নূরুল ইসলাম ও মা বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে তাঁর অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কল্যাণ মিত্রের ‘ত্রিরত্ন’ নাটকে রত্ন চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে জীবনে সর্বপ্রথম দর্শকদের সামনে অভিনয় করেন। এরপর করেন ‘টাকা আনা পাই’, ‘দায়ী কে’, ‘সমাপ্তি’, ‘অবিচার’ সহ বেশকয়েকটি নাটক।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিখ্যাত সংশপ্তক নাটকে ‘কানকাঁটা রমজান’ চরিত্রের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করেন টেলিভিশন জগতে। এরপর তাঁর ঝুলিতে যুক্ত হয় নিখোঁজ সংবাদ, হঠাৎ একদিন, পাথর সময়, সমুদ্রে গাংচিল, কাছের মানুষের মত অসংখ্য নাটক।
তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’ দিয়ে শুরু চলচ্চিত্রে অভিনয়। প্রথম বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত সন্ত্রাস। এছাড়া ভণ্ড, ব্যাচেলর, জয়যাত্রা, শ্যামলছায়া, একাত্তরের যীশু, পালাবি কোথায়সহ অসংখ্য চলচ্চিত্র।
বাংলা চলচ্চিত্রে খল চরিত্রের এক অনবদ্য জায়গা ছিল তাঁর। তিনি ‘মাতৃত্ব’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতা শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৪ সালে। এছাড়া বেশ কিছু টেলিফিল্ম, ধারাবাহিক ও এক ঘণ্টার নাটক নির্মাণ করেছেন তিনি। ২০০৪ সালে পান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। আর এবার মনোনীত হয়েছেন মরণোত্তর একুশে পদকের জন্য।
প্রথম জীবনে ফরিদপুরের মেয়ে মিনুকে বেলি ফুলের মালা দিয়ে বিয়ে করেন তিনি। সুখের ঘর বাঁধেন। সে ঘরে জন্ম নেয় কন্যা দেবযানি। অদ্যাবধি পরে ভালবেসে বিয়ে করেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফাকে। ২০০৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। সে থেকে মৃত্যু পর্যন্ত রাজধানীর একটি ফ্ল্যাটে একাই জীবন যাপন করতেন। বই পড়ে, লেখালেখি করে সময় পার করতেন। মাঝে মাঝে আড্ডা দিতেন। তবে সারাজীবন রং ছড়ানো মানুষটি শেষ জীবনে ভীষন একা হয়ে পড়েছিলেন।