রোমান কবির:
এক সময় বাঙালিদের বেশিরভাগই ছিলো যৌথ পরিবার। বাবা-মা, দাদা-দাদী, চাচা-চাচী, ভাই বোনসহ স্বামী-স্ত্রী সবাই মিলে বসবাস করতো একসাথে। একে অন্যের প্রতি ছিলো ভালোবাসা, মমত্ববোধ আর শ্রদ্ধা। সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন ছিলো অটুট। বিশ্বায়নের প্রভাবে হোক আর আকাশ সংস্কৃতির অবাধ বিস্তারের কারণে হোক ধীরে ধীরে ঢিলে হতে শুরু করে এ বন্ধন। যৌথ পরিবার ভাঙতে থাকে। বিশ্বায়ন আর আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে পশ্চিমা সংস্কৃতির বিস্তার ঘটে। উৎসবপ্রিয় জাতি পশ্চিমা ধাঁচে ও গড়নে রাঙাতে থাকে নিজেদের। বাঙালি উৎসবের সঙ্গে জায়গা হয় পশ্চিম থেকে আসা অনেক উৎসব। এর মধ্যে ভ্যালেন্টাইনস ডে একটি। বাঙালি যার নাম দিয়েছে ভালোবাসা দিবস।
প্রথমেই বলছিলাম বাঙালিদের যৌথ পরিবারের গল্প, ভালোবাসা ও মমত্ববোধের গল্প আর বলছিলাম উৎসবের গল্প। অর্থাৎ বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। নবান্ন উৎসব, ঈদ ও পূজা, হালখাতা উৎসব, পিঠা উৎসব ও বিশেষ করে বিয়ের উৎসব। এ সব উৎসব চলছে হাজার বছর ধরে। সবাই মিলে একত্রিত হওয়া, মিষ্টি খাওয়া, নাচ গান ঢোলের বাদ্য বাঙালির ভালোবাসা ও মমত্ববোধের বার্তা দেয়। শুধু মানব আর মানবীর প্রেম নয় মানুষের প্রতি মানুষের প্রেম বাঙালিকে একত্র করে রেখেছে যুগ যুগ ধরে। শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি আর দেবর ননদের সেবা করে যে গৃহবধূর দিন কাটে দিন শেষে স্বামীর সান্নিধ্য পেয়ে দু’জনার যে প্রেম তা দিয়ে লেখা যায় মহাকাব্য।
ধীরে ধীরে কমেছে যৌথ পরিবারের সংখ্যা। বাড়ছে ব্রোকেন পরিবারের সংখ্যা। খুব বেশি প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাচ্ছি আমরা। বাঙালির চিরাচরিত ভালোবাসার গল্পগুলোও হয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা ধাঁচে তৈরি। পারষ্পরিক ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ববোধ ক্ষীণ হতে হতে নেমে এসেছে একদিনের পশ্চিমা ভালোবাসায়। আর তাই আজ বাঙালির ভালোবাসা দিবস একদিনের।
তবে বাঙালি ভ্রাতৃত্ববোধ, পারষ্পরিক বিশ্বাস ও ভালোবাসার বন্ধনে অটুট রাখতে পারে সারাবছর। আর তাইতো বড় হৃদয়ের বাঙালি অন্য সংস্কৃতিকে জায়গা করে দিয়েছে নিজেদের মধ্যে। আশার কথা হচ্ছে পশ্চিম থেকে উড়ে আসা সংস্কৃতি হলেও ওদের মতো করে নয়, বরং নিজেদের মূল্যবোধ আর চেতনায় দিনটিকে পালন করি আমরা।
ভালোবাসা দিবসের আরও খবর
⇒ ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’র শিল্পীদের নিয়ে অমির ভালোবাসা দিবসের নাটক ‘ফিমেল’
⇒ নিশো-মেহজাবিনের ভালোবাসা দিবসের নাটক ‘গোলমরিচ’
বসন্তের এই দিনে ফাগুন হাওয়ায় প্রিয় মানুষগুলোকে কিছুটা সময় দেয়া, একটু ঘোরাঘুরি আর পরনে থাকবে বাঙালির চিরাচরিত পোশাক। এই অস্থির সময়ে নিজেকে আর প্রিয়জনদের একটু রাঙিয়ে দিতে পারে উৎসবের রঙ্গে। ভালবাসতে পারে পরষ্পরকে। চিরাচরিত বাঙালির ভালোবাসার রুপ ধারণ করে পারষ্পরিক আস্থা ও ভালোবাসা তৈরি করতে পারে। ব্রোকেন পরিবারগুলো আবারও জোড়া লাগতে পারে। বাঙালির রঙ্গে রাঙাতে পারে বাঙালির ভালোবাসা দিবস। পশ্চিমা ভ্যালেন্টাইনস ডে নয়, হতে পারে শুধু বাঙালির ভালোবাসার উৎসব।
পশ্চিম থেকে পূবে সবখানে সবাই ভালোবাসে। মানব মানবীর প্রেম থেকে মানবতাবাদী প্রেম, সব ভালোবাসাতে একেক রকম রূপ ও গন্ধ। ভালোবাসা সহজাত। একে কেন্দ্র করেই পৃথিবী আবর্তিত। ভালোবাসা না থাকলে পৃথিবীর সবই অর্থহীন। মানবিক মানুষ হয়ে উঠত যান্ত্রিক। উন্নত দেশগুলোর যান্ত্রিক মানুষদের ভালোবাসার জন্য প্রয়োজন একটি ভালোবাসা দিবস। আর বাঙালি পুরো বছরই ভালোবাসতে জানে। তাই বাঙালির ভালোবাসা দিবসের বিশেষত্ব অপরিসীম।
এইদিনে ভালোবাসা টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করেছেন যিনি সেই রোম শহরের ভ্যালেনটাইনকে স্মরণ করাই যেতে পারে। সাংবাদিক শফিক রেহমান বাঙালির আবহমান ভালোবাসাকে উৎসবের রং দিয়েছেন। শহরের একটি রাস্তার নাম রেখেছেন ভালোবাসা সড়ক। বাঙালির ভালোবাসা ছড়িয়ে যাক কোটি প্রাণে।
আরও পড়ুন : তাহসান-সুনেরাহ’র ভালোবাসা দিবসের নাটক ‘শূন্য থেকে শুরু’
উৎসবপ্রিয় বাঙালি নিজেদের রংয়ে ও নিজেদের ঢংয়ে ভালোবাসার উৎসব করতেই পারে। তবে একদিনের জন্য নয়, আবহমান কাল ধরে যে ভালোবাসার বন্ধনে জড়িয়ে আছে বাঙালি সেই ভালোবাসা ছড়িয়ে যাক বাংলা থেকে মার্কিন মুল্লুকসহ সর্বত্র।