বিশেষ প্রতিবেদক:
একুশে ফেব্রুয়ারি। এদিন প্রত্যুষে কালো পোশাকে সব বয়সী নারী-পুরুষের মিছিল বের হয় নগর থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তাদের হাতে থাকে ফুল, পা থাকে নগ্ন। মনের মাঝে বাজে ভাই হারানোর সুর। বাঙালির মনে থাকে শোকের ছায়া, তবে এক বুক গর্ব নিয়ে। প্রভাতে ফুল নিয়ে সেই গর্বিত জাতির মিছিল অন্তরে এক চমৎকার অনুরণন তৈরি করে। আর এর নাম প্রভাত ফেরির মিছিল ….
খালি পায়ে হেঁটে গিয়ে শহীদ মিনারের মোহনায় মিলায় প্রভাত ফেরির মিছিল। বেজে উঠে সেই শিহরণ জাগানো সুর। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি।
প্রভাত ফেরির এ মমতামাখা মিছিল নিয়ে কবি আল মাহমুদ লিখেছেন-
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ/দুপুর বেলার অক্ত,
বৃষ্টি নামে বৃষ্টি কোথায়/বরকতের রক্ত।
হাজার যুগের সূর্যতাপে/জ্বলবে এমন লাল যে,
সেই লোহিতেই লাল হয়েছে/কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে।
প্রভাত ফেরির মিছিল যাবে/ছড়াও ফুলের বন্যা,
বিষাদগীতি গাইছে পথে/তিতুমীরের কন্যা।
প্রভাত ফেরি, প্রভাত ফেরি/আমায় নেবে সঙ্গে,
বাংলা আমার বচন/আমি জন্মেছি এই বঙ্গে।
বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষার দাবিতে প্রাণ দিয়েছিলেন রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, বরকতসহ অসংখ্য নাম না জানা শহীদ। তাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিলো ঢাকার রাজপথ। সেই রক্তাক্ত পথে প্রভাত ফেরিতে হেঁটে চলে হাজারও বাঙালি।পাড়া-মহল্লা থেকে বের হয়ে প্রভাত ফেরির মোহনায় যুক্ত হয়। মিশে যায় শহীদ মিনারের বেদীতে। শান্ত-স্থির পায়ে ফুল দিয়ে ভাঙে প্রভাত ফেরি।
একুশ আমাদের চেতনা। আমাদের শক্তি জোগায় একুশ। সামনে এগিয়ে চলার সাহস দেয়। আর একুশের প্রথম প্রহরে ফুল হাতে নগ্ন পায়ে প্রভাত ফেরি আমাদের প্রেরণা দেয় সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার। এটি আমাদের সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রাকে আরও দৃঢ় করে।
১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে একটি সাংষ্কৃতিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে প্রভাত ফেরির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এই প্রভাত ফেরি তাই শুধু একটি রাজনৈতিক বিপ্লব নয়, সাংস্কৃতিক বিপ্লব। এটি আমাদের সংস্কৃতিকে আরও শানিত করে।
এ সংক্রান্ত আরও খবর : অমর একুশের সিনেমা
প্রভাত ফেরির জন্য রাজপথ সাজে নানা রং তুলিতে। শিল্পীর তুলির আচড়ে, সাহিত্যের কবিতায়, সঙ্গীতজ্ঞের সঙ্গীতে প্রভাত ফেরি এক মূর্তভাব ফুটিয়ে তোলে। আর তাই তো কবি বলেছেন-প্রভাত ফেরিতে যাই/নগ্ন পায়ে শহীদ মিনারে যাই/চলো প্রভাত ফেরিতে যাই।