নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রয়াত চলচ্চিত্রকার আলমগীর কুমকুমের মৃত্যুবার্ষিকী মঙ্গলবার ২৭ ফেব্রুয়ারি। এ দিনটিকে ঘিরে চলচ্চিত্র ও সাংষ্কৃতিক অঙ্গনের মানুষেরা তাঁকে স্মরণ করেন। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, পুস্পমাল্য অর্পণ, দুঃস্থ্যদের মধ্যে খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। সংগনটির ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচির ২য় দিন সংগঠনের ওয়ারীস্থ কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। তিনি এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠিাতা সভাপতি ছিলেন।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধের শব্দ সৈনিক, সাবেক সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরী। বক্তব্য রাখেন জোটের কার্যকরী সভাপতি অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, সহ সভাপতি পীযুষ বন্দোপাধ্যায়, সহ সভাপতি চিত্রনায়িকা ফারজানা আমিন নতুন, মনোরঞ্জন ঘোষাল, কবি রবীন্দ্র গোপ, জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানা, সহ সভাপতি মোবারক আলী শিকদার, হাবিব উল্লাহ রিপন প্রমুখ।
সারাহ বেগম কবরী বলেন, আলমগীর কুমকুম আওয়ামী লীগের দুর্দিনে-দুঃসময়ের কান্ডারী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তিনি যে ভূমিকা পালন করেছেন, যারা মনে প্রাণে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, আওয়ামী লীগের কর্মী তাদের মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন। অনেকেই আছেন তারা দলের কাছে কিছু পান না কিন্তু দলকে শুধু দিয়েই যান। তাদের মধ্যে অন্যতম আলমগীর কুমকুম।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেকেই স্বাধীনতা পদক ও একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। যারা ৭৫’র পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবিতে কিছুই করেন নাই সেই দুঃসময়-দুর্দিনে তাদের কোন অবদানই নেই, এদের মধ্যে অনেকেই এই পদকে ভূষিত হয়েছেন। কিন্তু আলমগীর কুমকুম দুর্দিনে-দুঃসময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলের কাছে কিছুই চাননি, তিনি নীরবে-নিভৃতে কাজ করে গেছেন। আমি আশা করব আগামীতে আলমগীর কুমকুমকে মূল্যায়ন করা হবে।
পীযুষ বন্দোপাধ্যায় বলেন, কুমকুম ভাইকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সাংস্কৃতিক কর্মীরা কখনো ভুলবে না। তিনি শুধু বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের দাবিতেই নয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতেও সোচ্চার ছিলেন। তিনি ছিলেন সবার প্রিয় কুমকুম দা। আমরা তাকে চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবো।
অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান বলেন, আলমগীর কুমকুমের অবদান কখনো ভোলার নয়। ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচন, মুক্তিযুদ্ধে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ৭৫’র পর বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের দাবিতে তিনি ছিলেন সোচ্চার। আওয়ামী লীগ করতে গিয়ে তিনি সর্বশান্ত হয়েছেন। তার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারকে ধ্বংস করেছেন। কিন্তু তিনি কখনো আপোস করেন নাই। তিনি চাইলে অনেক কিছুই করতে পারতেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ করবো তার নামে একটি কিছু করা হোক।
১৯৬৮ সালে মামা পরিচালক ইআর খানের সহকারী হিসেবে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর রূপবানের রূপকথা এবং মধুবালা চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহের মধ্যে রয়েছে স্মৃতিটুকু থাক, আমার জন্মভূমি, গুন্ডা, মমতা, আগুনের আলো, কাপুরুষ, সোনার চেয়ে দামি, রাজবন্দি, ভালোবাসা, রাজার রাজা, কাবিন, শমসের, রকি, মায়ের দোয়া, অমর সঙ্গী, জীবন চাবি।
ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন তিনি।