বিশেষ প্রতিবেদক :
আজ পঁচিশে বৈশাখ (৮ মে)। বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল তারা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। তিনি সর্বকালের সেরা বাঙালিদের একজন। ১২৬৮ (ইংরেজি-১৮৬১) সালের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মাতা সারদা সুন্দরী দেবী।
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে তিনি নিয়ে গেছেন বিশ্ব দরবারে। তাঁর অনেক গল্প ও কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ হয়। তিনি প্রথম বাঙালি হিসেবে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। ভারত ও বাংলাদেশ এ দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত তিনিই রচনা করেন। যা বিশ্বে বিরল।
বাঙালির কবিগুরু বিশ্ব কবির জন্মদিনে কালচারাল ইয়ার্ডের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা।
রবীন্দ্রজয়ন্তী বাঙালির জন্য একটি সাংস্কৃতিক উৎসব। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে এ উৎসব পালিত হয়। সব দেশের বাঙালিরা একাত্ন হয় কবিগুরুর জয়ন্তীতে। বরাবরের মতো এবারও আয়োজন রয়েছে রবীন্দ্রজয়ন্তীর উৎসবের। সংগীতানুষ্ঠান, নৃত্য, নাটক, রবীন্দ্র রচনা পাঠ, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কবির জন্মস্থান জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি, রবীন্দ্রসদন ও শান্তি নিকেতনে এ আয়োজন রাখা হয়েছে। এদিকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংষ্কৃতিক সংগঠনগুলো কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী নানা আয়োজনে পালনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
বিশ্বকবির জয়ন্তী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আলোচনা সভা, একক বক্তৃতা, রবীন্দ্র পুরস্কার প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন করেছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় সন্ধ্যায় কবিগুরুর ওপর আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সংস্থাসহ বিভিন্ন সংগঠন রবীন্দ্রজয়ন্তীর আয়োজন করেছে। চ্যানেল আই ভবনের চেতনা চত্ত্বরেও দিনব্যাপী রয়েছে ১৩তম রবীন্দ্র মেলা।
রবীন্দ্রজয়ন্তীর আরও খবর
⇒ ডিজিটালি পালন হচ্ছে রবীন্দ্রজয়ন্তী
⇒ বিশ্বকবির স্মরণে ‘আপন হৃদয়গহন-দ্বারে’
রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায়ও রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন হতো। এ দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে বাঙালি তাঁর শ্বাশত কবি, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু একজন সাহিত্যিক, সঙ্গীতকার বা কবি নন একাধারে তিনি নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, ভাষাবিদ ও চিত্রশিল্পী। তিনি সর্বকালের সেরা বাঙালি ও দার্শনিক। তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন আট বছর বয়স থেকে। ‘তত্ববোধিনী’ পত্রিকায় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয় ১৮৭৪ সালে। ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবিকাহিনী’। ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় তার বিখ্যাত গ্র্রন্থ ‘গীতাঞ্জলী’। এ গন্থের জন্য ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।
১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তি নিকেতনে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ব্রক্ষ্মাচর্যাশ্রম। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত করেন।
বেঁচে থাকতে কবির প্রকাশিত মৌলিক কবিতাগ্রন্থ ৫২টি, উপন্যাস ১৩, ছোটগল্প’র বই ৯৫টি, প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ ৩৬টি, নাটকের বই ৩৮টি। তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশ পায় ৩৬ খণ্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’। ‘রবীন্দ্র চিঠিপত্র রয়েছে ১৯ খণ্ডে। কবির আঁকা চিত্রকর্ম’র সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে ১৫৭৪টি চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে শান্তি নিকেতনের রবীন্দ্র ভবনে।
বাংলা ১৩৪৮ সালের বাইশে শ্রাবণ (ইংরেজি ৭ আগস্ট-১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক মারা যান বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।