রোমান কবির:
আমার বাবা সেভাবে সক্রিয় রাজনীতি কখনোই করেননি। জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন প্রবাসে। তবে তিনি সব সময় বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ট অনুরাগী ছিলেন। তার কথায় কাজে আদর্শে সব সময় ছিলেন বঙ্গবন্ধু। সে সুবাদে দেখেছি আমার বাসায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চর্চা হচ্ছে। বিশেষ করে বিদেশফেরত আমার বাবা আমাদের ঘুরতে নিয়ে যেতেন বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়িতে, দেখাতেন বঙ্গবন্ধুর নানা স্মৃতি। বলতেন বঙ্গবন্ধুর কথা, শুনিয়েছেন কীভাবে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বীর বাঙালি। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণে কীভাবে বাঙালি জেগে উঠেছিলো। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মিত নানা তথ্যচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র, বই ইত্যাদির সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়েছেন আমার বাবা। ছোটবেলায়ই মূলত বঙ্গবন্ধুকে জেনেছি বাবার মাধ্যমে। এরপর বড় হয়ে বঙ্গবন্ধুকে আরও জানার সুযোগ ঘটেছে।
ছোটবেলা থেকেই আমি চলচ্চিত্র নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। বিশেষ করে বিশ্বের বড় বড় মানুষদের বায়োপিক, তথ্যচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র, কাহিনীচিত্র দেখতে আমার ভালো লাগতো। ছোটবেলা থেকেই মনের মধ্যে পুষে রেখেছিলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন মনে লালন করে আমি বেড়ে উঠেছি। অনেকদিন ধরে সাংবাদিকতা করি আমি। সে সুবাদে পড়াশুনা করতে হয়েছে অনেক। সাংবাদিকতা করতে করতে মনে হলো চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশুনা না করলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্র বানাবো কিভাবে? ভর্তি হয়ে যাই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে (বিসিটিআই)। দু’বছরের পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি সম্পন্ন করি। চলতে থাকে চলচ্চিত্র নিয়ে তাত্ত্বিক ও কারিগরি জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা। তবে মনে পুষে রেখেছি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের ইচ্ছা। আমার বন্ধু-বান্ধবদের অনেকেই জানেন, যাদের সঙ্গে আমি আলাপ করেছি, আমি বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা দিক নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করবো।
আমি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের প্রেক্ষাপটে একটা প্রামাণ্য ও নিরীক্ষাধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণ করার পরিকল্পনা করেছি। এর একটি খসড়া সিনোপসিস ও স্ক্রিনপ্লে রেডি করে রেখেছি। নাম এখনই বলছি না। সব প্রস্তুত হলে নাম জানাবো। ১৫ আগস্টের প্রেক্ষপটেও ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা আমার মগজের এক কোনায় ঠাঁই নিয়ে আছে সযতনে। আর বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক নির্মাণের ইচ্ছা ছিলো ছোটবেলা থেকেই। বেশ কয়েক বছর ধরেই বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। আর কয়েকদিন ধরে আলোচনা হচ্ছে ভারত সরকার তাদের তিনজন পরিচালকের নাম প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ সরকারের কাছে। এর পক্ষে বিপক্ষে অনেকেই মত দিয়েছেন, দিচ্ছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
চলচ্চিত্র নির্মাতা ও গবেষকরাও কথা বলেছেন এ নিয়ে। তারা বলছেন, বাংলাদেশের কী কোন পরিচালক নেই, যারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ছবি বানাতে পারেন? অনেকে বলেছেন, আমাদের বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমাদের যে আবেগ আছে সেটা বাইরের কারও থাকবে না। আমি বলি বঙ্গবন্ধু একটি জাতির পিতা। এরকম একজন ব্যক্তিত্বকে নিয়ে ছবি বানাতে গেলে শুধু দেশের মধ্যেই সরকারি কিছু সিদ্ধান্তে হবে না। আন্তর্জাতিক একটি বোর্ডের মাধ্যমে অস্কারজয়ী বিশ্বখ্যাত কোন নির্মাতাকে এ ছবির পরিচালক নিযুক্ত করা দরকার। তবে বাংলাদেশের মধ্যে থেকেও একজন খ্যাতিমান মেধাবী নির্মাতাকে সেই অস্কারজয়ী নির্মাতার সঙ্গে সংযুক্ত করা দরকার। ছবি নির্মাণের আগে একটি গবেষণা সেল হওয়া দরকার দেশ ও বিদেশের গবেষকদের সমন্বয়ে।
দেশে ও বিদেশে চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশুনা করে ভালোমানের স্বল্পদৈর্ঘ্য ও নিরীক্ষাধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন এমন কয়েকজন বর্তমান বা সাবেক চলচ্চিত্র শিক্ষার্থীকে সহযোগী ও সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেয়া দরকার। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাত্ত্বিক পড়াশুনা আছে সেরকম কাউকেই নিতে হবে। আমি নির্মাতা হওয়ার ব্রতে আছি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ হলে সেই প্রজেক্টে সম্পৃক্ত হওয়ার বাসনা রাখি। আর নিজের হাত পাকিয়ে এক সময় বঙ্গবন্ধুকে যেভাবেই হোক চলচ্চিত্রে ধারণ করার অভিপ্রায় পুষে রাখছি।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়া নিয়ে কথা শুরু হয়েছে। আশা করি, চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রক্রিয়াও শুরু হবে শীঘ্রই। সবশেষে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ ভাবনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছুদিন ধরে বাংলাদেশী কিছু নির্মাতার নাম প্রস্তাব করছে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই। তবে একজনের নাম আমার মাথায় ঘুরছে শুরু থেকেই। নাম বলবো না, দেখি চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা শেষ পর্যন্ত আমার ভাবনার সঙ্গে একমত হতে পারেন কিনা।
লেখক: চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাংবাদিক।