নিজস্ব প্রতিবেদক:
সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে মঞ্চায়িত হয় প্রাঙ্গণেমোর প্রযোজিত নাটক ‘কনডেমড সেল’। অনন্ত হিরা’র রচনা ও আউয়াল রেজার নির্দেশনায় নাটকটি মঞ্চায়িত হয়েছে আমাদের একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর অত্যাচার নির্যাতন ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় গঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রেক্ষাপটে।
নাটকে কিছু বাস্তব চরিত্রের কাল্পনিক চরিত্রায়ন করা হয়েছে। যার সবগুলো চরিত্রই বাস্তব, তবে নাটকে তা ফুটে উঠেছে কল্পিত আবহে। নাটকে একটি কনডেমড সেলে, যেখানে শুধুমাত্র মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামিরাই থাকে। সে সেলে এক সাজাপ্রাপ্ত ভিআইপি রাজকারেরে উপলব্ধি তুলে ধরা হয়েছে।
সন্ধ্যায় নাটকটি প্রদর্শনের পর নাট্যকার ও অভিনেতা অনন্ত হিরা কথা বলেন কালচারাল ইয়ার্ডের সঙ্গে। তিনি এ নাটকটি রচনা করেছেন। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণেমোর’র কর্ণধারও তিনি। সাজাপ্রাপ্ত একজন রাজাকারের রিয়েলাইজেশন যে, ‘এদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি থাকা দরকার, বিরোধী দলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি থাকা দরকার।’ এই সংলাপকে বেস করেই নাটকটির প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
নাটকে ওসমান নামের একজন জল্লাদ। যিনি এক রাজাকারের ফাঁসির রায় কার্যকর করেছেন। তার একটা কল্পিত চরিত্র দাঁড় করিয়েছেন নাট্যকার অনন্ত হিরা। তিনি নিজেই এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
এ বিষয়ে অনন্ত হিরা বলেন, কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় যখন হলো তখন যশোর জেল থেকে একজন জল্লাদকে আনা হয়েছে ফাঁসির রায় কার্যকরের জন্য। ওসমান নামের সেই জল্লাদকে আনা হয়েছে, ওই সময় এ নিয়ে প্রথম আলো থেকে শুরু করে অনেকগুলো পত্রিকায় এটা নিউজ হয়। সেই নিউজটাই আমাকে ইন্সপায়ার করেছে নাটকটি লিখতে। এছাড়া সরাসরি চরিত্রগুলোর নাম ব্যবহার করা যাবেনা তবে মানুষগুলোকে দেখাতে হবে। যে রায়গুলো হয়েছে সে রায়গুলোতো ইংরেজীতে হয়। তো প্রথম চারটি রায় যখন কার্যকর হয় তখন রায়গুলোর কপি সংগ্রহ করে একজন অনুবাদককে এনে তাকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে এটা বাংলায় অনুবাদ করি। এরপর এ নিয়ে স্টাডি করতে শুরু করলাম। তবে মাথায় একটা ক্যারেক্টারই ছিলো। জল্লাদটা ওদের ফাঁসির রায় যখন কার্যকর করবে ওদের সঙ্গে তো কথাবার্তা হয় নিশ্চয়ই। তো এটা দেখানোর জন্য কনডেমড সেলটা দেখালাম। আর আমার নিজেরও এই সেল দেখার অভিজ্ঞতা ছিলো। একসময় পলিটিক্স করতাম, এরশাদবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে তিন মাস জেলে ছিলাম। সবকিছু মিলিয়ে একটা ফ্যান্টাসির মধ্য দিয়ে নিয়ে গেছি।
অনন্ত হিরা বলেন, আসলে একটা সংলাপকে বেস করে আমি নাটকটি লিখেছি। যেটি একজন রাজাকারের রিয়েলাইজেশন যে, ‘এদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি থাকা দরকার, বিরোধী দলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি থাকা দরকার।’ আসলে এই সংলাপটা বলার জন্য পুরো প্রেক্ষাপটটা তৈরি করা। আমার মনে হয়েছে যে এই কথাটা বলা খুব জরুরি।
অনন্ত হিরা’র রচনা ও আউয়াল রেজার নির্দেশনায় ‘কনডেমড সেল’ নাটকে অভিনয় করেছেন অনন্ত হিরা, নুনা আফরোজ, সবুক্তগীন শুভ, আউয়াল রেজা, রামিজ রাজু, জাহিদুল ইসলাম, মাইনুল তাওহীদ, শুভেচ্ছা রহমান, নুপুরসহ আরও অনেকে। এছাড়া মঞ্চের আলোকসজ্জা করেছেন তৌফিক আজীম রবিন ও স্বাধীন আরুশ, সঙ্গীত করেছেন রামিজ রাজু।