নিজস্ব প্রতিবেদক :
গত ২৪ নভেম্বর প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা শেখ নেয়ামত আলী স্মরণে তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনায় অংশ নিতে ফ্রান্স থেকে দেশে আসেন সদ্যপ্রয়াত কিংবদন্তী চলচ্চিত্রগ্রাহক ও আলোকচিত্রশিল্পী আনোয়ার হোসেন। সেদিন শেখ নেয়াতম আলীর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। এবার দেশে ফিরে পরিচিত বন্ধু স্বজন প্রত্যেকের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছাও প্রকাশ করে সর্বশেষ ফেসবুকে পোস্ট দেন তিনি। অংশ নেন চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিষয়ক কিছু অনুষ্ঠানে। কিন্তু সংস্কৃতি অঙ্গনের বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী ও স্বজনদের কাঁদিয়ে গত ১ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই পাড়ি জমান পরপারে। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে সর্বত্র। এ চিত্রগ্রাহকের জীবন ও কর্ম নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন তাঁর বন্ধু, সহকর্মী ও স্বজনরা।
বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ এ স্মরণসভার আয়োজন করে। স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী। ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক বেলায়াত হোসেন মামুন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। আনোয়ার হোসেনের জীবন ও কর্মের উপর বিশ্লেষণমূলক আলোচনায় অংশ নেন চলচ্চিত্রকার মসিহউদ্দিন শাকের, মোরশেদুল ইসলাম, হাশেম সুফি, জাহিদুর রহিম অঞ্জন, সাইদুল আনাম টুটুল, চলচ্চিত্র সমালোচক ও লেখক অনুপম হায়াৎ, মইনুদ্দিন খালেদ, ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি স্থপতি লাইলুন নাহার স্বেমি প্রমুখ। কথা বলেন তাঁর দুই পুত্র আকাশ হোসেন এবং মেঘদূত হোসেন। এছাড়াও আনোয়ার হোসেনের বন্ধু-স্বজন, সহযোদ্ধা ও সহকর্মীবৃন্দ স্মরণসভায় অংশ নেন।
চলচ্চিত্রকার মসিহউদ্দিন শাকের ও মোরশেদুল ইসলাম তাঁদের চলচ্চিত্রে চিত্রগ্রাহক হিসেবে আনোয়ার হোসেনকে পেয়েছিলেন। আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে তাঁদের কাটানো নানা স্মৃতির কথা তুলে ধরেন গুনী এই দুই নির্মাতা। মসিহউদ্দিন শাকের বলেন, আমরা নতুন সিনেমা করছি। আমাদের তেমন কারিগরি অভিজ্ঞতা নেই। সেই পরিমান অর্থকড়িও নেই। কিন্তু এত সব সমস্যার মধ্যেও আনোয়ার হোসেন ছবিটিতে কাজ করেছেন। তাঁর নিপুণ দক্ষতায় চলচ্চিত্রটি একটি অন্য মাত্রা তৈরি হয়েছে। তাঁর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপণ করেন এই অগ্রজ প্রতিম দুই চলচ্চিত্রকার।
চলচ্চিত্র সমালোচক অনুপম হায়াৎ ও মইনুদ্দিন খালেদ আলোকচিত্রশিল্পী আনোয়ার হোসেনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, আনোয়ার হোসেন একজন কিংবদন্তী। তিনি ক্যামেরার কবি। এই কীর্তিমাণের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানাতে হবে। আনোয়ার হোসেনের সৃষ্টিকর্মগুলো সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শিল্পকলা একাডেমি, চলচ্চিত্র সংসদ, ফিল্ম আর্কাইভ, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে নানান উদ্যোগের দাবি জানান তাঁরা।
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী তাঁর বক্তব্যে আনোয়ার হোসেনের চিত্রকর্মগুলো সংগ্রহ করে তা শিল্পকলা একাডেমীর উদ্যোগে সংরক্ষণ করার আশ্বাস দেন। তিনি জানান, আনোয়ার হোসেনের কর্মগুলো শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে আর্কাইভ করে তা সংরক্ষণ করা হবে।
চলচ্চিত্রকার হাশেম সুফি, নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুল ও জাহিদুর রহিম অঞ্জন দেশের সেরা চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেনের স্মৃতিচারণ করে তাঁর আত্নার শান্তি কামনা করেন। আনোয়ার হোসেনের দুই পুত্র আকাশ হোসেন এবং মেঘদূত হোসেন তাঁদের বাবার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি স্থপতি লাইলুন নাহার স্বেমি ও সাধারণ সম্পাদক বেলায়াত হোসেন মামুন আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে তাদের আত্নার সম্পর্ক কতটা গভীর ছিলো তা আবেগমাখা কন্ঠে বিশ্লেষণ করেন। তাদের সঙ্গে উপস্থিত বন্ধু, স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা আনোয়ার হোসেনকে স্মরণ করে আবেগপ্রবণ একটি সন্ধ্যা কাটান। স্থপতি লাইলুন নাহার স্বেমি ও বেলায়াত হোসেন মামুন আনোয়ার হোসেনের কর্মগুলো সংগ্রহ করে তা সংরক্ষণের উদ্যোগের কথা জানান। আনোয়ার হোসেনের স্মৃতি নিয়ে অনেক কাজ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তারা।