নিজস্ব প্রতিবেদক :
রোকেয়া দিবস উপলক্ষে বাচিক চর্চা ও আবৃত্তি প্রতিষ্ঠান কণ্ঠশীলনের আবৃত্তি প্রযোজনা ‘মহীয়সী রোকেয়া’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জীবন ও কর্ম নিয়ে মঞ্চস্থ হয় আবৃত্তির এই প্রযোজনা। এ প্রযোজনায় বেগম রোকেয়ার বিখ্যাত গ্রন্থাবলি অবরোধবাসিনী, মতিচুর, সুলতানার স্বপ্ন, চিঠি-পত্র ও পদ্মরাগ উপন্যাসের বিষয়গুলো উঠে আসে। প্রযোজনাটি নির্দেশনা দেন কণ্ঠশীলন প্রশিক্ষক ও নির্দেশক গোলাম সারোয়ার।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য দেন কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। তিনি বলেন, রোকেয়া ছিলেন নারী শিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান। ঊনবিংশ শতাব্দীর কুসংস্কারাচ্ছন্ন রক্ষণশীল সমাজের শৃঙ্খল ভেঙে নারী জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দেন শিক্ষার আলো। ক্ষুরধার লেখনির মাধ্যমে নারীর প্রতি সমাজের অন্যায় ও বৈষম্যমূলক আচরণের মূলে আঘাত হানেন। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনসহ বিভিন্ন সমাজ উন্নয়নমূলক কাজের মধ্য দিয়ে পশ্চাৎপদ নারী সমাজকে আলোর পথ দেখান।
‘মহীয়সী রোকেয়া’ প্রযোজনাটির আলোক পরিকল্পনা করেন ওয়াসিম আহমেদ, সঙ্গীত পরিকল্পনায় ছিলেন অনিন্দ্য মাহদী, কোরিওগ্রাফীতে ছিলেন সানজিদা আলম আঁখি এবং মঞ্চ পরিকল্পনায় মোস্তফা কামাল। প্রযোজনায় অংশগ্রহণ করেন হাসিনা হাসি, ইলা রহমান, অনন্যা গোস্বামী, খাইরুন নাহার স্নিগ্ধ, রাজিয়া সুলতানা মুক্তা, মিফতাহুল জান্নাত নিপুণ, শিরিন সুলতানা মিথিলা, শাহানা রহমান, আফরিন খান, আয়শা বিনতে খালেক, অনুপমা আলম, রাবেয়া হক, রোখসানা ফেরদৌসী কুইন ও সানজিদা সুলতানা।
উল্লেখ্য, নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া রংপুর জেলার মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ গ্রামে ১৮৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা জহিরউদ্দিন মুহম্মদ আবুল আলী হায়দার সাবের ও মাতা রাহাতুন্নেসা চৌধুরানী। রোকেয়ার দুই ভাই আবুল আসাদ ইবরাহীম সাবের এবং খলিলুর রহমান সাবের ও দুই বোন করিমুন্নেসা এবং হুমায়রা। রোকেয়ার পরিবারে নারী শিক্ষার সুযোগ বলতে ছিল শুধু কোরআন তেলাওয়াত শিক্ষা ও উর্দু শিক্ষা। বাংলা বর্ণপরিচয় ছিল নিষিদ্ধ। বড় ভাই ইবরাহীম সাবের বোন রোকেয়া ও করিমুন্নেসাকে পরিবারের সবার অগোচরে মোমের আলোয় লেখাপড়া শেখান। সেই থেকে অযৌক্তিক ও নির্মম সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে রোকেয়ার মনে জন্ম নেয় প্রচন্ড বিদ্রোহ।
১৮৯৬ সালে ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যজিস্ট্রেট খান বাহাদুর সাখাওয়াত হোসেনের সাথে রোকেয়ার বিয়ে হয়। তিনি রোকেয়ার বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন, লেখালেখিতে উৎসাহ, স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থ সঞ্চয় ও নারীশিক্ষার প্রসারে সহযোগিতা প্রদান করেন। বিয়ের মাত্র ১৩ বছর পরে ১৯০৯ সালে রোকেয়া সাখাওয়াতের স্বামী মারা যায়। এতে অবদমিত না হয়ে ‘নারী শিক্ষার প্রসার ছাড়া নারী সমাজের মুক্তি নাই এবং সমাজের কোনো আশা নাই’ এ মূল মন্ত্রে বিশ্বাসী থেকে সমাজের প্রবল বাধা উপেক্ষা করে নিগৃহীত নারীসমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি আন্দোলন চালিয়ে যান। সাখাওয়াত হোসেনের মৃত্যুর পাঁচ মাস পরে ভাগলপুরে ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি সমাজের অনাচারের বিরুদ্ধে তাঁর লেখনী চালিয়ে যান। কেবলমাত্র নারী শিক্ষা ও নারী জাগরণের অগ্রদূতই ছিলেন না, তাঁর সামগ্রিক চিন্তা চেতনা ছিল আন্তর্জাতিকমানের। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্কুল, সংগঠন এবং সাহিত্য সাধনা নিয়ে সময় অতিবাহিত করেন।