নিজস্ব প্রতিবেদক:
শুরু হয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিজয় উৎসব ২০১৮। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ বিনির্মাণের আকাঙ্খায় এবারের উৎসবের স্লোগান‘স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের দিন শেষ/মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাবেই বাংলাদেশ’। ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত শহরের সাতটি মঞ্চে একযোগে চলবে এ উৎসব।
বৃহস্পতিবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় পতাকার প্রতীকী রঙ লাল ও সবুজ রঙের বেলুন উড়িয়ে সপ্তাহব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করেন ভাষা সংগ্রামী সাংবাদিক কামাল লোহানী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক সৈয়দ হাসান ইমাম ও আশরাফুল আলম, নাট্যজন ড. ইনামুল হক এবং আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়। স্বাধীনতা আন্দোলনসহ সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনে শহীদ বেদিতে পুস্পাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ছায়ানটের শিল্পীরা। এবারের উৎসবে দেড় শতাধিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রায় আড়াই হাজার শিল্পী সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, পথনাটক ও শিশুতোষ পরিবেশনায় অংশ নিচ্ছেন।
উদ্বোধন শেষে আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আহ্কাম উল্লাহ্ উৎসবের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, আজ বাংলাদেশ নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এক সুপরিচিত মহল ঐক্যের নামে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত করে বাংলাদেশকে একটি প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার ঘৃণ্য আয়োজন প্রায় সমাপ্ত করে ফেলেছে। আমরা বাংলাদেশের সংস্কৃতি কর্মীরা মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যের নামে যুদ্ধাপরাধী ও বিপথগামীদের এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বানচাল করতে বদ্ধপরিকর। আজ বিজয় উৎসবের এই ক্ষণে আমরা দেশের সর্বস্তরের জনগণকে আহ্বান জানাই, অতি সন্নিকটে দেশের ভাগ্য নির্ধারণে আপনারা নিশ্চিতভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পুনরায় অর্পণ করুন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দুর্নীতিমুক্ত আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিন।
উদ্বোধনী আলোচনায় বক্তব্য রাখেন কামাল লোহানী, ড. ইনামুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মুহাম্মদ সামাদ, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর, কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও অভিনয়শিল্পী ঝুনা চৌধুরী। জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ।
‘নোঙ্গর তোলো তোলো’ গানের সুরে নাচ করে স্পন্দনের শিল্পীরা। গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের শিল্পীরা গায় ‘ভয় নাই কোন ভয়, জয় বাংলার জয়’ ও ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রীস্টান, বাংলার মুসলমান/ আমরা সবাই বাঙালী’ শিরোনামের দুটি গান। মুহাম্মদ সামাদ পাঠ করেন সদ্য রচিত কবিতা ‘আমি তোমাদের কবি’। কবি তারিক সুজাতও করেন স্বরচিতা কবিতা। এছাড়া কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে আবৃত্তি করেন সৈয়দ হাসান ইমাম, আশরাফুল আলম ও ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়। সব শেষে পরিবেশিত হয় পথনাটক। দেশনাটক মঞ্চস্থ করে ‘রিসার্চ’। তপন দাসের রচনায় নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন শামসুল আলম বকুল।
আয়োজন অনুষ্ঠিত হচ্ছে অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম ও প্রয়াত সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার উত্তরা মঞ্চে। যা ১৫ ডিসেম্বর শুরু হয়ে চলবে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এছাড়া ১৪ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ভাষাসৈনিক হালিমা খাতুন ও মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিনী রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে, রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ মঞ্চে ১৪ থেকে ১৬ ডিসেম্বর, কবি বেলাল চৌধুরী ও আবৃত্তিশিল্পী রণজিৎ রক্ষিত মিরপুর মঞ্চে ১৪ থেকে ১৬ ডিসেম্বর, মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি ও মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া দনিয়া মঞ্চে ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর এবং বাহাদুরশাহ পার্ক মঞ্চে ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আগামী ১৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় শহীদ মিনার থেকে বর্ণিল বিজয় শোভাযাত্রা বের করা হবে।