বিশেষ প্রতিবেদক :
বাংলাদেশের সব্যসাচী কবি ও লেখক হিসেবে সুপরিচিত প্রয়াত সৈয়দ শামসুল হক। তবে তিনি শুধু সাহিত্যের সব্যসাচী নন, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সব্যসাচী। তিনি একাধারে চিত্রনাট্যকার, গীতিকার, চিত্রপরিচালক ও প্রযোজক। দেশের শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র। এই সব্যসাচী নাট্যকারের আজ জন্মদিন। ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর অবর্তমানে চলে গেলো দু’টি জন্মদিন। এই দিনে কালচারাল ইয়ার্ড পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা।
সৈয়দ শামসুল হক কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধ লিখে বাংলা সাহিত্যকে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন, তেমনি নাটক নির্মাণ, চলচ্চিত্র নির্মাণ ও চলচ্চিত্রে গান লিখে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন সংস্কৃতিকে। কাব্যনাট্য রচনায়ও তিনি অবদান রেখেছেন। তাঁর রচিত নাটক নুরলদীনের সারাজীবন, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, গণনায়ক, ঈর্ষা ইত্যাদি সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে।
চলচ্চিত্রে চিত্রনাট্য ও গান লেখায় তিনি ছিলেন অনন্য। ষাট থেকে আশির দশকের বহু চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচনা করেছেন তিনি। তিনি চলচ্চিত্রে সঙ্গীত রচনা করেছেন। যেগুলো কালোত্তীর্ণ হয়ে আছে। তাঁর উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্রও নির্মাণ হয়েছে। তাঁর ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস থেকে নাসির উদ্দিন ইউসুফ নির্মাণ করেন ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রটি। ১৯৬৬ সালে ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা ও প্রযোজনা করেন তিনি। তাঁর লেখা বিখ্যাত চলচ্চিত্রের গান, অনেক সাধের ময়না আমার, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, তোরা দেখ দেখ দেখরে চাহিয়া, চাঁদের সাথে আমি দেব না তোমার তুলনা প্রভৃতি জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
শোবিজ অঙ্গনের আরও খবর
⇒ শুভ জন্মদিন বলিউড সুলতান সালমান খান
কিশোর বয়সে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে বোম্বে চলে যান। সেখানে তিনি এক চিত্রপরিচালকের সঙ্গে কাজ করেন। এ সময় তিনি সহকারী পরিচালনাও করেন। দেশে ফিরে তিনি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখা শুরু করেন। ১৯৫৯ সালে মাটির পাহাড় চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেন তিনি। এ সময় তোমার আমার, শীত বিকেল, কাঁচ কাটা হীরে, ক খ গ ঘ ঙ, বড় ভাল লোক ছিল, পুরস্কারসহ আরও বেশ কিছু চলচ্চিত্রের কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেন তিনি। বড় ভাল লোক ছিল ও পুরস্কার চলচ্চিত্রে তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকারের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
বাংলা সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আদমজী সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।
১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে তিনি লন্ডন চলে যান এবং সেখানে বিবিসির বাংলা খবর পাঠক হিসেবে চাকরি নেন। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসর্মপণের খবরটি তিনিই পাঠ করেছিলেন। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বিবিসি বাংলার প্রযোজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তাঁর দৃঢ়কণ্ঠ সাবলীল উচ্চারণের জন্য তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। এ সময় তিনি বিবিসি বাংলায় নাটকেও কাজ করে নাট্যকার হিসেবেও সমাদৃত হন।
সৈয়দ শামসুল হকের বাবা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন পেশায় ছিলেন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার ও মা হালিমা খাতুন গৃহিণী। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বড়। তাঁর স্ত্রী প্রথিতযশা লেখিকা ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক। তাদের মেয়ে বিদিতা সৈয়দ হক ও ছেলে দ্বিতীয় সৈয়দ হক।
কুড়িগ্রাম মাইনর স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন সৈয়দ শামসুল হক। সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন তিনি। কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুল থেকে ১৯৫০ সালে গণিতে লেটার মার্কস নিয়ে ম্যাট্রিক পাশ করেন তিনি। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু সেখান থেকে স্নাতক পরীক্ষা না দিয়ে ১৯৫৬ সালে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন।
২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান এই প্রথিতযশা সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব।