বাংলা চলচ্চিত্রের ‘ভূবনসোম’ খ্যাত নির্মাতা সদ্যপ্রয়াত চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের শেষকৃত্য অনাড়ম্বরভাবে সম্পন্ন হলো । তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী আড়ম্বরহীনভাবে শেষযাত্রা করলেন তিনি। তাঁর এ বিদায়বেলায় অশ্রুসিক্ত নয়নে উপস্থিত ছিলেন অঞ্জন দত্ত, রঞ্জিত মল্লিক, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, নন্দিতা দাশ, শ্রীলা মজুমদার, অপর্ণা সেন, মাধবী মুখোপাধ্যায়সহ টালিগঞ্চের তারকারা। উপস্থিত ছিলেন বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তীসহ নামীদামী রাজনীতিক ব্যাক্তিবর্গ। তাঁর এই প্রয়ানে শোক সাগরে ভাসছে পুরো টালিগঞ্জ।
গত ৩০ ডিসেম্বর মারা যান মৃণাল সেন। মৃত্যুর পর তাঁর দেহ পিস ওয়ার্ল্ডে রাখা হয়। পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরে দেশপ্রিয় পার্কের কাছে যে বাড়িতে তিনি দীর্ঘদিন কাটিয়েছেন সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভিড় জমান টালিগঞ্জের তাঁর অসংখ্য ভক্ত ও গুনগ্রাহী। মৃনাল সেনের ছেলে কুনাল সেন ও তাঁর স্ত্রী এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।
মৃত্যুর আগে মৃণাল সেন তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে বলে গিয়েছিলেন তার শেষযাত্রায় যেন কোনো ফুলের মালা না থাকে। না থাকে সরকারি কোন আতিশয্যও। এমনকি রবীন্দ্র সদন কিংবা নন্দনেও যেন তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নেওয়া না হয়। শেষ ইচ্ছা অনুযায়িই সাদামাটা আয়োজনে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।
মৃণাল সেন রাতভোর, নীল আকাশের নীচে, আকালের দর্শন, ভুবনসোমসহ অসংখ্য বিখ্যাত সিনেমা নির্মাণ করেছেন। তিনি ২৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ৪টি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ৬টি চলচ্চিত্র বিষয়ক মৌলিক গ্রন্থও লিখেছেন। তাঁর লেখা বই ও নির্মিত সিনেমা নিয়ে দেশ বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো হয়। মৃণাল সেন বাংলা ভাষা ছাড়াও হিন্দি, ওড়িয়া ও তেলেগু ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।
তিনি ইন্টারন্যাশন্যাল ফেডারেশন অফ দি ফিল্ম সোসাইটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮১ সালে ভারত সরকার দ্বারা পদ্মভূষণ পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৫ সালে পান দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার। ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ অবধি ভারতীয় সংসদের সাম্মানিক সদস্যপদ লাভ করেন। ফরাসি সরকার তাঁকে কমান্ডার অফ দি অর্ডার অফ আর্টস অ্যান্ড লেটারস সম্মানে সম্মানিত করেন। এই সম্মান ফ্রান্সের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান। ২০০০ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁকে অর্ডার অফ ফ্রেন্ডশিপ সম্মানে ভূষিত করেন। দেশে বিদেশে অনেক চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন এই কিংবদন্তী চলচ্চিত্র নির্মাতা।