নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিশ্বব্যাপী সংস্কৃতি আদান-প্রদানের লক্ষ্যে জিম্বাবুয়ের জাতীয় ব্র্যান্ডিং ও বিনিয়োগ ফার্মের আয়োজনে ৫০টি দেশের অংশগ্রহণে গত ১৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘মিস কালচার ওয়ার্ল্ডওয়াইড ২০১৮’ প্রতিযোগিতা। জিম্বাবুয়ের হারারেতে অনুষ্ঠিত এ আসরে শিরোপা জয়ী হয়েছিলেন বাংলাদেশের মেয়ে ‘ফ্ল্যাগ গার্ল’খ্যাত মডেল প্রিয়তা ইফতেখার। বিজয়ের এক মাস পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন তিনি। বললেন বিজয়ী হওয়ার গল্প, শোনালেন নিজের স্বপ্নের কথা।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজের বিজয়ী হওয়ার অনুভূতি জানাতে গিয়ে প্রিয়তা বলেন, সেদিন যখন বাংলাদেশ নামটা ঘোষণা করা হয়, সেটা শোনার পর আমি দাঁড়িয়ে আছি। ভাবলাম ঠিক শুনলাম? সামনে আগাতেও পারছি না, যদি ভুল হয়! পরে সবাই বলল, তুমি দাঁড়িয়ে আছ কেন বাংলাদেশ? চলে এসো। সবাই বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে চিৎকার করছিল।
এই প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার আপ হন জাম্বিয়ার বিশ্বাস মুকনকো ও দ্বিতীয় রানার আপ হন জিম্বাবুয়ের ওয়েন্ডি মাতুরি। মিস পারসোনালিটির খেতাব পান রাশিয়ার আনা কিরিলিনা ও ডেস্টিনেশন মার্কেটিং-এর অ্যাম্বাসেডর হন রুয়ান্ডারমারি ওথেনস উওয়াকু। এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নারীদের অস্ত্রহাতে অংশগ্রহণ তুলে ধরেছিলেন প্রিয়তা ইফতেখার।
তিনি বলেন, মাথায় ছিল আমি নিজের দেশকে উপস্থাপন করব। একজন নারী মুক্তিযোদ্ধা সেজেছিলাম, হাতে ছিল রাইফেল, আর পরনে সাদা রঙের শাড়ি। আবহ সংগীতে মুক্তিযুদ্ধের অডিও ভিজ্যুয়াল আর আমার মুখে ‘জয় বাংলা। এই উপস্থাপনা দর্শক ও বিচারকরা খুব পছন্দ করেছিলেন।
তবে চূড়ান্ত পর্বে নিজেকে উপস্থাপনার ক্ষেত্রে খানিকটা মনে শঙ্কাও ছিল বলে জানান প্রিয়তা। প্রিয়তা জানান, প্রতিযোগিতার কয়েক দিন আগে পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন। চিকিৎসকরা সতর্ক করেছিলেন, এই অবস্থায় ‘পারফর্ম’ করলে পায়ের স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি আছে। কিন্তু সেই ঝুঁকি নিয়েই ওষুধ নিয়ে মঞ্চে উঠেছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়ন হবেন এটি কখনও ভাবেননি। ভেবেছিলেন বড়জোড় শীর্ষ তিন এ থাকবেন-বলছিলেন প্রিয়তা।
তিনি বলেন, এখন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন দেশ থেকে আমন্ত্রণ পাচ্ছি। রাতারাতি আমার জীবনের রুটিন বদলে গেছে। এটা মনে হচ্ছে একটি ম্যাজিকাল জার্নি।
‘মিস কালচার ওয়ার্ল্ডওয়াইড ২০১৮’ প্রতিযোগিতা মঞ্চে প্রিয়তা ইফতেখার
ভ্রমণপ্রিয় প্রিয়তা পর্যটন নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করায় বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন তাকে ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বেসেডর’ ঘোষণা করে। প্রিয়তা ‘দ্য ফ্ল্যাগ গার্ল’ বা ‘পতাকা বালিকা’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তার বিভিন্ন দেশের বন্ধুদের মাধ্যমে তৈরি করা একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। ২০০৮ সালে প্রিয়তা প্রতিষ্ঠা করেন ‘দি ফ্ল্যাগ গার্ল’ নামের একটি নেটওয়ার্ক। এ নেটওয়ার্ক কাজ করছে দেশ ও বিদেশের নারীদের নিয়ে। তবে নেটওয়ার্কের সদস্যদের মধ্যে নারী-পুরুষ সবাই আছেন। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ১ হাজার ৩০০। ৫০ শতাংশ সদস্য বাংলাদেশি। অন্য ৫০ শতাংশ সদস্যদের বাস বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
প্রিয়তা এর আগে মিস ট্যুরিজম ওয়ার্ল্ড, মিস মাল্টিন্যাশনালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ও ইভেন্টে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। প্রিয়তা জানান, আগামীতে এতিম শিশুদের নিয়ে কাজের পরিকল্পনা আছে তাঁর। সেই সঙ্গে নারীদের নিয়েও আলাদাভাবে কাজের পরিকল্পনা আছে।
প্রিয়তা ইফতেখার বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ নূরজাহান বেগমের নাতনি। তার নানা কচি-কাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা, সাংবাদিক রোকনুজ্জামান খান (দাদাভাই)। প্রিয়তা বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে ভারতে অভিনয়ের উপর পড়াশোনা করেন। বাংলাদেশের প্রথম অভিনয়শিল্পী হিসেবে শ্রীলংকার একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেন। ভালো চিত্রনাট্য পেলে আগামীতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে দেখা যেতে পারে বলে জানান।