নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় অভিনেতা ও বিশিষ্ট আবৃত্তিকার ছিলেন গোলাম মুস্তাফা। ১৯৩৪ সালের ২ মার্চ বরিশালের দপদপিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর বাবা ছিলেন একজন সাব-রেজিস্ট্রার। খুলনা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন তিনি। স্কুল-কলেজ জীবনেই নাটকে অভিনয় করার শখ ছিল। চল্লিশের দশক থেকে মঞ্চে অভিনয় জীবন শুরু করেন। পঞ্চাশের দশকের ঢাকায় চলে আসেন। ষাটের দশকের শুরু থেকেই শুরু হয় চলচ্চিত্র অভিনয়। এরপর পাঁচ দশক ধরে দাপটের সঙ্গে বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সমানতালে অভিনয় করেন টেলিভিশনেও। বর্ষিয়ান এই অভিনেতা ২০০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুদিনে কালচারাল ইয়ার্ড পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা।
গোলাম মুস্তাফা ১৯৬০ সালে ‘রাজধানীর বুকে’ ছবিতে জমিদারের ভূমিকায় প্রথম অভিনয় করেন। শুরু থেকেই চলচ্চিত্রে খলনায়ক হিসেবে একক ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। এছাড়া ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রেও অভিনয় করেন তিনি। প্রায় দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য উর্দু চলচ্চিত্র হচ্ছে ‘পীরিত না জানে রীত’, ‘কাজল’, ‘চোখাই’, ‘চান্দা’, ‘তালাশ’। বাংলা চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘আলিবাবার চল্লিশ চোর’, ‘রাজধানীর বুকে’, ‘নিজেকে হারায়ে খুজি’, ‘রক্তাক্ত বাংলা’, ‘রূপালী সৈকতে’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘সূর্যসংগ্রাম’, ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’, ‘শুভদা’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘চন্দ্রনাথ’, ‘দেবদাস’ ইত্যাদি।
গোলাম মুস্তাফা অনেক বিজ্ঞাপনচিত্রেও অভিনয় করেন। তার অভিনয় জীবনে খলনায়ক হিসেবেই বেশি সফল হয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হারানো দিন’ ছবিতে মদ্যপ জমিদারের ভূমিকায় তার অভিনয় সে সময় জনপ্রিয়তা লাভ করে।
১৯৪৫ সালে বরিশাল অশ্বিনী কুমার টাউন হল মঞ্চে বি.ডি হাবিবুল্লাহ রচিত পল্লীমঙ্গল নাটকে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। এটাই তার অভিনিত প্রথম মঞ্চ নাটক। পরিণত বয়েসে ষাটের দশকের শুরুতে গোলাম মুস্তাফা নাট্যাভিনয় শুরু করেন। সিনেমা ও নাটক উভয় ক্ষেত্রেই তিনি পারদর্শিতা প্রদর্শন করেন।
গোলাম মুস্তাফা ঢাকা টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকে নাটকে অভিনয় শুরু করেন। প্রথমদিকে ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি নাটকে নায়ক চরিত্রে ছিলেন।
তার অভিনিত উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে: গুপ্তধন, অর্পিতা, হিতঙ্কর, পাথরে ফুটাবো ফুল, যুবরাজ, অস্তরাগেসহ অসংখ্য নাটক।
১৯৮০ সালে এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী সিনেমায় অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্বচরিত্র অভিনেতা , এবং ১৯৮৬ সালে শুভদা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন গোলাম মোস্তফা। চলচ্চিত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০০১ সালে একুশে পদক সম্মানে ভুষিত হন তিনি। বাচসাস পুরস্কারও লাভ করেন তিনি।
১৯৫৮ সালে হোসনে আরাকে বিয়ে করেন। তার মেয়ে সুবর্ণা মুস্তাফা বাংলাদেশের একজন গুনী অভিনেত্রী। জামাতা হুমায়ুন ফরীদিও ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা।
গোলাম মোস্তফার মৃত্যুদিনে তাঁর মেয়ে সুবর্ণা মুস্তফা পেয়েছেন একুশে পদক পুরস্কার। হয়েছেন সংসদ সদস্য। তাঁকে স্মরণ করে মেয়ে সুবর্ণা আবেঘগন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। নিজের ফেসবুকে তিনি লিখেন, ‘ষোল বছর! অথচ মনে হয় এই তো সেদিন। বাবার সাথে দেখা করে ফিরছি। আজ অদ্ভুত এক দিন। বাবার চলে যাওয়ার দিন। আমার শপথ গ্রহণ করার দিন। আমার একুশে পদক গ্রহণ করার দিন। জীবনের সুখ দুঃখ মিলে মিশে একাকার হয়ে যাওয়ার দিন। বাবা, তোমাকে আর আম্মাকে আমি আর সুমিত বাবু অনেক ভালোবাসি।’