বিশেষ প্রতিবেদক :
গোলাম মুস্তাফা, একাধারে তিনি একজন অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক, নাট্যকার ও আবৃত্তিকার। চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, মঞ্চ ও বেতার- সর্বক্ষেত্রেই ছিলো তাঁর সরব বিচরণ। অভিনয় করেছেন প্রায় তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে। কখনও নায়ক, কখনও খলনায়ক, আবার কখনওবা পার্শ্ব চরিত্রে সুঅভিনয়ের স্বাক্ষর রেখেছেন। মঞ্চ নাটক, টেলিভিশন নাটক, বেতারের কণ্ঠ অভিনেতা এবং আবৃত্তিকার হিসেবে দিয়েছেন দক্ষতার পরিচয়।
১৯৩৫ সালের ২ মার্চ বরিশালের দপদপিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন গোলাম মুস্তাফা। কিংবদন্তি এই অভিনেতার জন্মদিনে শ্রদ্ধাভরে তাকে স্মরণ করছে কালচারাল ইয়ার্ড পরিবার।
পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে গোলাম মুস্তাফার শিক্ষা জীবনের সূচনা হয়। ১৯৫০ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৫২ সালে দৌলতপুর বি এল কলেজ থেকে আই.এ. এবং ১৯৫৫ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে তিনি বি.এ. পাশ করেন। এরপর কিছুদিন শিক্ষকতা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরির পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন।
ছাত্র জীবন থেকেই অভিনয়ের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিলো। স্কুলে পড়া অবস্থায় ১৯৪৫ সালে তিনি প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন। সেটি ছিলো বি.ডি হাবিবুল্লাহ রচিত ‘পল্লীমঙ্গল’ নাটক, যা মঞ্চায়িত হয় বরিশাল অশ্বিনী কুমার টাউন হলে। ওই বছর বরিশাল জেলা স্কুলের এক অনুষ্ঠানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ঐ নাম’ কবিতাটি আবৃত্তি করে উপস্থিত দর্শকদের মন কাড়েন।
ষাটের দশকের শুরুতে ঢাকায় মঞ্চ নাটক ও বেতারে অভিনয় শুরু করেন। ১৯৬০ সালে ‘রাজধানীর বুকে’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রূপালী জগতে পর্দাপণ করেন এই গুনী অভিনেতা। ছবি তাকে দেখা যায় খলনায়ক চরিত্রে। ১৯৬৩ সালে ‘নাচঘর’ সিনেমার মাধ্যমে নায়ক হিসেবে তাঁর আবির্ভাব হয়। ১৯৬৪ সালে প্রথম উর্দু ছবি ‘কাজল’-এ অভিনয় করেন। এরপর বেশ কয়েকটি উর্দু চলচ্চিত্রে কাজ করেন তিনি।
নায়ক, খলনায়ক এবং পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে বাংলা ও উর্দু মিলে প্রায় তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এই শক্তিমান অভিনেতা। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য উর্দু সিনেমাগুলোর মধ্যে কাজল, ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো, বেগানা, তালাশ অন্যতম।
গোলাম মুস্তাফা সম্পর্কিত আরও খবর
⇒ বর্ষীয়ান অভিনেতা গোলাম মুস্তাফা
রাজধানীর বুকে, আলিবাবার চল্লিশ চোর, এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী, রূপালী সৈকতে, সীমানা পেরিয়ে, তিতাস একটি নদীর নাম, সারেং বউ, শ্রাবণ মেঘের দিন, জীবন সংসার, আশা ভালোবাসা, দেবদাস, পদ্মা নদীর মাঝি, শ্রাবণ মেঘের দিন, ধীরে বহে মেঘনা, রক্তাক্ত বাংলা, সূর্যসংগ্রাম, চন্দ্রনাথ, হারানো দিন- তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য বাংলা চলচ্চিত্র।
অভিনয় এবং আবৃত্তি ছাড়াও লেখালেখিতে বেশ ভালো ছিলেন তিনি। লিখেন বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ক নিবন্ধ। অনুবাদেও ছিলেন দক্ষ। ‘নতুন যুগের ভোরে’ নামে তাঁর একটি অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
২০০১ সালে এই কিংবদন্তি অভিনেতাকে চলচ্চিত্র শিল্পে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ একুশে পদক সম্মানে ভুষিত করা হয়। এছাড়াও তাকে তিন বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, তিনবার জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার, দুইবার সাইট অ্যান্ড সাউন্ড চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাসস পুরস্কার, সিনেমা চলচ্চিত্র পুরস্কার, জাতীয় টিভি পুরস্কার, আবদুল জব্বার খান স্বর্ণপদক, টেনাশিনাস পদক, মাবুবুল্লাহ জেবুন্নেসা কল্যাণ ট্রাস্ট স্বর্ণপদক, বরিশাল বিভাগ সমিতি শেরে বাংলা পদকসহ আরও বিভিন্ন পদক, পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করা হয়।
১৯৫৮ সালে বেতারের অভিনেত্রী হোসনে আরা বিজুকে বিয়ে করে শুরু করেন পারিবারিক জীবন। এর আগে হোসনে আরা বিজুর ঔপন্যাসিক শামসুদ্দীন আবুল কালামকে বিয়ে করেছেন। বিজু ও শামসুদ্দীনের মেয়ে ক্যামেলিয়া মুস্তফা। গোলাম মুস্তাফা ও হোসনে আরা বিজু সন্তান হচ্ছেন একুশে পদক পাওয়া জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও বর্তমান সাংসদ সুবর্ণা মুস্তাফা।
২০০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পরপারে পারি জমান বাংলাদেশের সংস্কৃতি জগতের কিংবদন্তি এই ব্যক্তিত্ব।