ভারত ও বাংলাদেশের যৌথপ্রযোজনায় মঞ্চায়ন হলো নাটক ‘জলকুমারী’। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ভারতের ‘সহজপাঠ’ ও ‘মেঠোপথ থিয়েটার’ যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে নাটকটি। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাংলাদেশে এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় শিল্পকলা একাডেমীর এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন দেবাশীষ ঘোষ।
গত ৭ই জানুয়ারী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর স্টুডিও হলে এই নাটকের টেকনিক্যাল ও ইনডোর শো করা হয়েছে। ১৪ জানুয়ারী ভারতের হুগলী জেলায় এর প্রথম উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। ১৮ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় প্রদর্শনী। শেষে বাংলাদেশে হয়ে গেলো এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী। ভারত ও বাংলাদেশের কলাকুশলী মিলে মোট ১০ জন এই নাটকে অভিনয় করেছেন। অভিনয়ে ছিলেন, শামীমা আক্তার মুক্তা (বাংলাদেশ), প্রদীপ কুমার মাইতি (ভারত), তরুন চ্যাটার্জী (ভারত), সুমন ইয়াসিন (বাংলাদেশ), তারক ব্যানার্জী (ভারত), কাজী সালিমুল হক কামাল (বাংলাদেশ), সুজন মুখার্জী (ভারত), নাজিরুল হক (বাংলাদেশ), তরুন কুমার দে (ভারত), সুমন বেনার্জী (ভারত)।
নেপথ্য মিউজিক করেছেন শিশির রহমান (বাংলাদেশ), মিউজিক সহযোগী হিসেবে ছিলেন রাজীব দেব (বাংলাদেশ) ও ঈশাংশু ব্যানার্জী (ভারত), সেট ও লাইট করেছেন পলাশ হেনড্রি সেন (বাংলাদেশ), লাইট সহযোগী প্রদীপ কুমার মাইতি (ভারত) ও কাজী সালিমুল হক কামাল (বাংলাদেশ)।
সেট নির্মান সহযোগীতায় শফিকুল ইসলাম ইমরান (বাংলাদেশ), পোষাকে শামীমা আক্তার মুক্তা (বাংলাদেশ), পোষ্টার ও সুভেনীর ডিজাইন নাগরী প্রকাশ, সুফি সুফিয়ান (বাংলাদেশ)। নামাঙ্কন করেছেন সামির বিপ্লব (বাংলাদেশ)। ফটোগ্রাফিতে মিতা সরকার (বাংলাদেশ), মাহাফুজ মুন্না (বাংলাদেশ)। প্রযোজনা সহকারী তরুন চ্যাটার্জী (ভারত), অদ্বৈত শীল (ভারত), অরুনাভ শীল (ভারত), রূপক চক্রবর্তী (বাংলাদেশ), মো: জীবন হাসান (বাংলাদেশ)।
মেঠোপথ থিয়েটার (বাংলাদেশ) ও সহজপাঠ থিয়েটার (ভারত) এর শিল্পীরা মিলে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এই নাটকের প্রদর্শনী করবেন বলে জানান প্রযোজনা সংস্থা দুটি। ‘জলকুমারী’ নাটকের মধ্য দিয়ে দুই বাংলার মেলবন্ধন ঘটবে বলে আশা করেন মেঠোপথ থিয়েটার (বাংলাদেশ)এর প্রধান শামীমা আক্তার মুক্তা।
তিনি বলেন, সুস্থ শিল্প চর্চার মধ্য দিয়ে থিয়েটার করার মনো বাসনা নিয়েই মেঠোপথ থিয়েটার করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। ২০১৭ সালের ২ জুন তারিখে আমরা কয়েকজন তরুন তরুনী মিলে এই দলের প্রতিষ্ঠা করি। ‘অত:পর মাধো’নাটকের মধ্য দিয়ে আবির্ভাব ঘটে মেঠোপথ থিয়েটারের। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন ‘অলোক বসু’। ইতোমধ্যে আমরা কোরিয়া, ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নাটকটির প্রদর্শনী করতে সক্ষম হয়েছি। এরই মধ্যে ভারতের হুগলী জেলার একটি দল সহজপাঠ থিয়েটারের সাথে একত্রিত হয়ে একটি যৌথ নাটক করার পরিকল্পনা করেছি আমরা। ‘সহজপাঠ’ থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা ‘তরুন কুমার চ্যাটার্জী’ এবং দল প্রধান ‘প্রদীপ কুমার মাইতি’ আমাদের দেয়া যৌথ প্রযোজনার প্রস্তাব সাদরে গ্রহন করেন এবং সাধুবাদ জানিয়ে সকল প্রক্রিয়া শুরু করতে সহযোগী হন।
শামীমা আক্তার মুক্তা বলেন, মেঠোপথ থিয়েটার (বাংলাদেশ) ও সহজপাঠ থিয়েটার (ভারত) এর শিল্পীরা মিলে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এই নাটকের প্রদর্শনী করবেন। কাজটি বেগবান করতে প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিয়েছেন বিশিষ্ট নাট্য গবেষক আশিস গোস্বামী। এই নাটকের মধ্য দিয়ে দুই বাংলার মানুষের মধ্যে একটি সেতু বন্ধন তৈরি হবে আশা করছি।
সহজপাঠ থিয়েটার (ভারত) এর দল প্রধান প্রদীপ কুমার মাইতি বলেন, (পশ্চিমবঙ্গ)-বাংলাদেশ(ঢাকা) দুই দেশের দুইটি ছোট ছোট নাট্য দল ‘সহজপাঠ ’ (ভারত) ও মেঠোপথ থিয়েটার (বাংলাদেশ) এক হয়েছি একটি নাট্য প্রযোজনা করতে। দুই দেশের সংস্কৃতির মেল বন্ধন করতে একটু চেষ্টা করছি। কামনা করি দুই দেশ মননে, শয়নে-স্বপনে, জাগরনে, খুশিতে বেদনাতে এক হয়ে থাক ‘জলকুমারী’।
তিনি বলেন, সহজপাঠ থিয়েটার গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল খেলতে খেলতে। পাড়ার কিছু ছেলেরা মাঠে খেলতো তরুন কুমার চ্যাটার্জী ওদের উদ্যোগি করে তুলেছিল থিয়েটার করতে। প্রতিষ্ঠাতা তরুন কুমার চ্যাটার্জী’র ভাবনায় ‘সহজপাথ থিয়েটার’ এর অবকাঠামো গড়ে উঠতে থাকে দিনে দিনে। আমাকে এসে ধরলো নাটক করতে হবে। যেই কথা সেই কাজ, শুরু হলো ‘সহজপাঠ’।
নাট্যকার ও নির্দেশক দেবাশীষ ঘোষ বলেন, যেহেতু নাট্যকার নির্দেশক আমি নিজেই সেহেতু দর্শকের কাঠগড়ায় আমার দুটি সত্তাই কৈফয়ৎ দিতে প্রস্তুত। ‘জলকুমারী’ প্রযোজনা করার অনুসন্ধান মাত্র। জলকুমারী গল্পটি লোকসাহিত্যের লোকশ্রুতি ধারার আখ্যান, সেই গল্পকে আধুনিক মোড়কে উপস্থাপন কর হয়েছে মাত্র। আজকের সমাজ বাস্তবতায় নারীদের যে দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করা হয় আজ থেকে দুইতিনশত বছর পূর্বে তেমনই ছিল; এই সত্যকে অনুসন্ধান করা হয়েছে মাত্র। ‘জন্মই যেন আজন্ম পাপ’ এই সত্যটা এখনো দৃশ্যমান কিন্তু এই নারীই সমাজের ভালোর জন্য আত্মাহুতি দিয়ে যায়। এই কথাটি ‘জলকুমারী’ নাটকের মূল কথা।
তিনি বলেন, মঞ্চে উপস্থাপনার ক্ষেত্রে আধুনিক মঞ্চরীতি ব্যবহার করেছি সচেতন ভাবে। জানিনা দর্শক কিভাবে গ্রহন করবেন এই গল্প বলার আঙ্গিকে। দুই দেশের অভিনেতাদের নিয়ে মহড়া ও শো সমন্বয় করা দুরুহ কাজ। মেঠোপথ থিয়েটারের শামীমা আক্তার মুক্তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই কাজটি সম্ভব হয়েছে। তবুও বলব নানান সীমাবন্ধতার ভেতর থেকে দুই দেশের যৌথ প্রযোজনা নাটকের মহড়া কিংবা কতগুলো প্রদর্শন করা যাবে তা যেনে হাত দিয়েছি। থাক না পরীক্ষা-নিরিক্ষা এ নিয়ে আমরা ব্যর্থ হলে ভবিষ্যত প্রজন্ম এর কারন অনুসন্ধান করে আবার সাফল্যের পথে হাটবে।