তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ নির্মিত ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ গত ২৯ মার্চ স্টার সিনেপ্লেক্সের একটিমাত্র হলে মুক্তি পায়। দর্শকদের মধ্যে চলচ্চিত্রটি নিয়ে চাহিদা থাকলেও সপ্তাহখানেক চলার পর ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ সিনেমাহল থেকে নামিয়ে দেয় সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। এই সিনেমা নামিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে ও পুনরায় চলচ্চিত্রটি সিনেমাহলে প্রদর্শনের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ‘নতুন চলচ্চিত্র নতুন নির্মাতা চলচ্চিত্র উৎসব’ এর আয়োজকগণ। আগামী ১০ এপ্রিল বুধবার বিকেল ৫টায় পান্থপথের বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
‘নতুন চলচ্চিত্র নতুন নির্মাতা চলচ্চিত্র উৎসব’ কমিটির সভাপতি বেলায়াত হোসেন মামুন এ কর্মসূচির কথা জানান। এর আগে তিনি শিল্পকলা একাডেমি থেকে এক ফেসবুক বার্তায় এ কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন। তিনি এ সময় তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষকে এ মানবন্ধনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভালো চলচ্চিত্রের প্রতি বাংলাদেশের সিনেমাহল মালিক, চলচ্চিত্র বিপণনকারী ব্যক্তিদের এক ধরণের বৈরি আচরণ চলমান। ভালো চলচ্চিত্রের প্রতি তাদের এই বৈরি আচরণের ইতিহাস বহু পুরাতন। এর সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত হলো ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ চলচ্চিত্রটি। তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ নির্মিত ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ গত ২৯ মার্চ স্টার সিনেপ্লেক্সের মাত্র একটি হলে মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের কাহিনীচিত্রের যে গড় ধরণ তারচেয়ে ভিন্নতর একটি চলচ্চিত্র হিসেবে সকল দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়। ঢাকার চলচ্চিত্রপ্রেমী দর্শক, তরুণ চলচ্চিত্রকর্মীদের মাঝে ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ নিয়ে তুমুল আলোড়ন পড়ে। ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রটটির দর্শক বৃদ্ধি পাচ্ছিলো।
এমন অবস্থায় গত ৫ এপ্রিল স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ ছবিটি তাদের হল থেকে নামিয়ে দেয়। ৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার চলচ্চিত্রটির শেষ প্রদর্শনীতে বহু দর্শক টিকেট না পেয়ে ফিরে আসেন। কারণ ছবিটির শেষ প্রদর্শনীটি ছিল দর্শকপূর্ণ। এমন একটি পরিস্থিতিতে চলচ্চিত্রটি সিনেমাহল থেকে নামিয়ে দেয়ার ঘটনায় আমরা চলচ্চিত্রকর্মীরা সকলেই আহত হয়েছি। আমরা বুঝতে পারছি না দর্শকদের আগ্রহ ও উপস্থিতি থাকার পরেও কেন চলচ্চিত্রটি সিনেমাহল থেকে নামিয়ে দেয়া হল। দেশের অপর সিনেমাহল মালিকগণ, সিনেমা বিপণনের সাথে যুক্ত মানুষজন যখন ছবিটি নিয়ে তেমন একটা উৎসাহ দেখায় নি, সেখানে যখন স্টার সিনেপ্লেক্স ছবিটি মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন দেশের সিরিয়াস চলচ্চিত্রের উৎসাহী দর্শকগণ আশ্বস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু দর্শক আগ্রহ ও দর্শকদের ছবিটির দেখার জন্য নিয়মিত উপস্থিতির পরেও ছবিটি দ্বিতীয় সপ্তাহে না দেখানোর এই সিদ্ধান্ত চলচ্চিত্রকর্মী ও চলচ্চিত্র নির্মাতাগণ আহত ও ক্ষুব্ধ করেছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সিনেমাহল মালিক, প্রদর্শক ও চলচ্চিত্র বিপণনকারীদের প্রতি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কর্মীদের প্রতিবাদ জানাতে একটি মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছে।
এই কর্মসূচি নিয়ে বলতে গিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক বেলায়াত হোসেন মামুন বলেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের পুরোনো কাঠামো বদলের সময় এসেছে। এখন আমাদের গড়ে তুলতে হবে এমন নতুন কাঠামো যাতে করে বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রি চলচ্চিত্রের ফর্মুলার বাইরে সৃস্টিশীল-নিরীক্ষাধর্মী চলচ্চিত্রও সিনেমাহলের স্বাভাবিক পেশাদার কাঠামোতে নিরাপদ হতে পারে। কারণ আমরা বিশ্বাস করি চলচ্চিত্রের পেশাদার কাঠামো কেবলমাত্র সিনেমাহলের মাধ্যমেই গড়ে উঠতে পারে। অন্যথায় দেশের হাজার হাজার তরুণ চলচ্চিত্রকার, চলচ্চিত্রকর্মী চলচ্চিত্রকে পেশা ও প্যাশনের মিশ্রনে একটি সৃজনশীল শৈল্পিক ক্যারিয়ার ভাবতে পারবেন না। যতদিন বাংলাদেশে চলচ্চিত্রকে ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করায় নূন্যতম নিরাপত্তা থাকবে না, চলচ্চিত্র হয়ে থাকবে ঝুঁকিপূর্ণ পেশার পথ, ততদিন আমরা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সত্যিকারের বিকাশ আশা করতে পারি না। তাই ভালো চলচ্চিত্রের জন্য সচেতনভাবে আমাদের তৎপর থাকতে হবে। সিনেমাহল মালিক ও চলচ্চিত্রকর্মী বা নির্মাতার সত্যিকারের ভারসাম্যমূলক পেশাদার সম্পর্কই পারে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপযোগি করে গড়ে তুলতে’।
‘নতুন চলচ্চিত্র নতুন নির্মাতা চলচ্চিত্র উৎসব’ সম্পর্কে মামুন জানান, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নিয়মিত আয়োজন করা হয়েছে। এই উৎসবে বাংলাদেশের ৪৫০ জন তরুণ চলচ্চিত্রকারের বাছাইকৃত চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। চলচ্চিত্র উৎসবটি শুরু করেছিল ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি। পরে উৎসবটি বাংলাদেশের নবীন ও তরুণ চলচ্চিত্রকারদের নিজস্ব স্বাধীন প্ল্যাটফর্মে পরিনত হয়।