ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত দক্ষিণ আমেরিকান (লাতিন আমেরিকান) বিপ্লবী চলচ্চিত্র: পাঠ ও মূল্যায়ন কর্মশালায় অনামিকা বন্দোপাধ্যায়
বিশেষ প্রতিবেদক :
প্রথাগত স্টুডিওভিত্তিক হলিউডি সিনেমা, সেই রীতিকে ভেঙ্গে শিল্পনির্ভর রিয়েলিজম বা নিউ ওয়েব সিনেমা, যেটাকে আমরা বলছি বিকল্প সিনেমারীতি। সেই বিকল্প সিনেমাও যে প্রথা নির্মাণ করছে সেই রীতিকে ভেঙ্গে, সকল প্রকার এক্সমেরিমেন্টকে ভেঙ্গে, সরাসরি হার্ডকৌর রাজনৈতিক বার্তা বহন করা বিপ্লবী সিনেমা নির্মাণ করে সিনেমার বিপ্লব সাধন করেছে যে সিনেমা তাকেই বলা হচ্ছে তৃতীয় সিনেমা। এই সিনেমার রীতি লাতিন আমেরিকার বিপ্লবী সিনেমা থেকে উদ্ভূত। এই সিনেমারীতির বিকাশে চলচ্চিত্রকারদের করণীয় চেতনার বিকাশ। এর মাধ্যমেই মূলত বিপ্লবী সিনেমা নির্মাণ সম্ভব।
আমেরিকা প্রবাসী ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র নির্মাতা, সাহিত্যিক ও শিক্ষক অনামিকা বন্দোপাধ্যায় ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত দক্ষিণ আমেরিকান (লাতিন আমেরিকান) বিপ্লবী চলচ্চিত্র: পাঠ ও মূল্যায়ন কর্মশালায় তৃতীয় সিনেমার এই বিষয়গুলো তুলে ধরেন। শনিবার বিকালে শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত দীর্ঘ কর্মশালায় অনামিকা বন্দোপাধ্যায় নির্মিত দ্যা থার্ড ব্রেস্ট চলচ্চিত্রটি দেখানো হয়। এ নিয়ে আলোচনায়ও অংশ নেন তিনি। দেশের তরুণ চলচ্চিত্রকাররা এ কর্মশালায় অংশ নেন। চলচ্চিত্রের এই কর্মশালা সঞ্চালনা করেন ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি বেলায়াত হোসেন মামুন।
অনামিকা বন্দোপাধ্যায় তাঁর সিনেমার ভাষা ও সিনেমার বিভিন্ন ফর্ম নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, সিনেমার প্রথাগত ফর্ম ভেঙ্গে যে ভালো চলচ্চিত্রের ফর্ম সেই ফর্মকে ভেঙ্গে শিল্পের সহজ ধারায় বইছে তৃতীয় সিনেমা। যে সিনেমায় একজন নির্মাতা নিজের কথা বলতে পারছে। যাতে খুব আয়োজন করা লাগছে না। এই সিনেমাটাই এখন প্রয়োজন। লাতিন আমেরিকায় সিনেমার মাধ্যমেই যে বিপ্লব করা হয়েছে সে রকম সিনেমার বিপ্লব করতে গেলে চেতনার বিকাশই যথেষ্ট। এতে খুব বেশি সিনেমাটোগ্রাফি ভালো হলো কি না, ফোকাস হলো কিনা। আলো কমল কি না, বা বাড়লো কি না, এর চেয়ে জরুরি বিপ্লবী চেতনা তৈরি হওয়া। চেতনার বিকাশেই বিপ্লবী সিনেমা নির্মাণ সম্ভব।
কর্মশালা শেষে অনামিকা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে অংশগ্রহণকারীরা
গ্লোবার রোসা, লিওন হারজম্যান, কারলস ডাইগুইসসহ দক্ষিণ আমেরিকার বিপ্লবী সিনেমার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। দক্ষিন আমেরিকার বিপ্লবী সিনেমার সূত্র ধরে ভারতীয় উপমহাদেশ ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিপ্লবী চেতনার বিকাশ নিয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশী তরুণ নির্মাতারা।
ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি বেলায়াত হোসেন মামুন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকারদের জন্য কর্মশালা করানোর জন্য চলচ্চিত্র শিক্ষক ও নির্মাতা অনামিকা বন্দোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানান। মামুন জানান, দক্ষিন আমেরিকার বিপ্লবী সিনেমার উপর অনেক দিন ধরে কোন কর্মসূচি দেওয়া না হলেও এখন থেকে নিয়মিত ম্যুভিয়ানা থেকে চলচ্চিত্রকারদের জন্য কর্মসূচি করা হবে।
কর্মশালায় পাঠদান করছেন অনামিকা বন্দোপাধ্যায়
শেষে অনামিকা বন্দোপাধ্যায় নির্মিত দ্যা থার্ড ব্রেস্ট প্রদর্শিত হয়। দ্যা থার্ড ব্রেস্ট ভারতীয় সমাজের প্রেক্ষিতে নারীদের যৌনতা বিষয়ক ট্যাবু নিয়ে নির্মিত। ছবিটিতে নারীদের যৌনতার সামাজিক উপস্থাপন কেমন এই বিষয়টিই উঠে আসে।