নিজস্ব প্রতিবেদক :
সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধায় সিক্ত প্রখ্যাত নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষা সৈনিক অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। সোমবার রাতে তৃতীয় জানাজা শেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয় তাঁকে।
এর আগে সোমবার সকালে মমতাজউদ্দীনের মরদেহ সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নেয়া হয়। সেখানে তাঁকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্ট মানুষরাসহ সর্বস্তরের সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ হাজির হন । সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাঁর গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয় মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স।
এদিকে অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমেদের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোকবার্তায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। মমতাজউদদীন আহমেদের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, সংস্কৃতিজন রামেন্দু মজুমদার, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও লেখক মফিদুল হক, কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, অভিনেতা খায়রুল আলম সবুজসহ সংস্কৃতি অঙ্গনের ব্যক্তিরা।
তাঁর বিদায়ে নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘অধ্যাপক মমতাজউদদীন বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন শিক্ষক, অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক ও সুবক্তা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে তার সঙ্গে আমার কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। তার অভিনীত নাটকগুলো জাতীয় আর্কাইভে সংগ্রহ করা উচিত।’
নাট্যকার মামুনুর রশীদ বলেন, ‘অসীম প্রভিতাধর ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মমতাজউদদীন। তার মৃত্যু আমাদের সংস্কৃতি জগতের জন্য এবং সবার জন্যই বেদনাদায়ক।’
দীর্ঘদিন রোগ ভোগের পর রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার (২ জুন) মারা যান দেশের কীর্তিমান এ অভিনেতা ও নাট্যকার। রোববার মীরপুরের রূপনগরে মদিনা মসজিদে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
মমতাজউদদীন আহমদ ১৯৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার লেখা নাটক ‘কী চাহ শঙ্খচিল’ এবং ‘রাজার অনুস্বারের পালা’ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকাভুক্ত হয়েছে। তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মান লাভ করেছেন।
তার রচিত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘নাট্যত্রয়ী’, ‘হৃদয়ঘটিত ব্যাপার স্যাপার’, ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’, ‘জমিদার দর্পণ’, ‘সাত ঘাটের কানাকড়ি’। নিয়মিত চিত্রনাট্য রচনা ছাড়াও তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘বাংলাদেশের নাটকের ইতিবৃত্ত’, ‘বাংলাদেশের থিয়েটারের ইতিবৃত্ত’, ‘নীলদর্পণ’ (সম্পাদনা), ‘সিরাজউদ্দৌলা’ (সম্পাদনা)।