বিশেষ প্রতিবেদক :
গত চার দশক বলিউডে রাজত্ব করেছেন তিনি। তার ভয়ার্ত এক্সপ্রেসন ও ভয়মাখানো অভিনয় যে কারও বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। তিনিই সম্ভবত বলিউডের ইতিহাসে সেরা ভিলেন। চার দশকে চার শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। তিনি বলিউডের সবার প্রিয় ভিলেন অমরেশ পুরি।
২০০৫ সালের ১২ জানুয়ারি ৭২ বছর বয়সে তিনি মারা যান। আজ গুণী এই অভিনেতার ৮৮তম জন্মদিন। জন্মদিনে কালচারাল ইয়ার্ড এর পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি রইলো অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
১৯৩২ সালের ২২ জুন ভারতের তৎকালীন পাঞ্জাবের জলন্ধর জেলার তেহশিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন অমরেশ পুরি। তাঁর বাবা কারনাওয়ান শাহর লালা নিহার চান্দ পুরি ও ভেদ কাউরে। তিন ভাই ও এক বোনের পর তাঁর জন্ম। বাবা নাম রাখেন অমরেশ, পুরো নাম অমরেশ লাল পুরি।
১৯৫৭ সালে ঊর্মিলা দিবাকরকে বিয়ে করেন অমরেশ পুরি। তাঁদের এক মেয়ে নম্রতা ও ছেলে রাজিব। অমরেশ পুরির চার নাতি-নাতনি আছে। ইতিমধ্যে তার স্ত্রীও মারা গেছেন।
‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ ছবিতে ‘মোগাম্বো’ চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। এ ছবিই তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে আসে। এ ছবিতে ‘মোগাম্বো খুশ হুয়ে’ সংলাপটি এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
অমরেশ পুরির বড় দুই ভাই চমন পুরি ও মদন পুরি ষাটের দশকের প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা ছিলেন। তাঁদের অনুসরণ করেই হিমাচল প্রদেশের বি এম কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে নায়ক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তিনি মুম্বাই চলে আসেন। তবে প্রথম অডিশনেই ব্যর্থ হন তিনি।
পরে নিরুপায় হয়ে জীবিকা উপার্জনে ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি নেন তিনি। তবে অভিনয়ের নেশা ছিলো মনে। তাই পৃথ্বী থিয়েটারে কর্মী হিসেবে যোগ দেন। বিখ্যাত নাট্যকার সত্যদেব দুবের অনেক নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি।
১৯৭৯ সালে তিনি সঙ্গীত-নাটক একাডেমি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। মঞ্চের জনপ্রিয়তা তাঁকে টিভির বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের সুযোগ করে দেয়। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে রুপালি পর্দায় নিজের আসন গড়েন অমরেশ পুরি।
বলিউড তারকাদের জীবনী
⇒ শ্রীদেবী: বলিউডের প্রথম নারী সুপারস্টার
মারাঠি চলচ্চিত্র ‘শান্তাতা! কোর্ট চালু আহে’ ছবিতে প্রথম তিনি রেলস্টেশনের এক অন্ধ ভিখারির ভূমিকায় অভিনয় করেন। তাঁর প্রথম হিন্দি সিনেমা ‘রেশমা অউর শেরা’। এটি তাঁর অভিনীত প্রথম হিন্দি ছবি হলেও প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবি ‘প্রেম পূজারি’ (১৯৭০)। ‘রেশমা অউর শেরা’ তার এক বছর পরে ১৯৭১ সালে মুক্তি পায়। পরে তিনি হিন্দির সঙ্গে সঙ্গে মারাঠি, কানাড়া, তামিল, তেলেগু, মালয়ালম ও পাঞ্জাবি সিনেমায় অভিনয় করেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে চার শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।
হলিউডের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা স্টিভেন স্পিলবার্গ তাঁর ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স অ্যান্ড দ্য টেম্পল অব ডুম’ সিনেমায় অমরেশ পুরিকে প্রধান ভিলেন চরিত্র ‘মোলা রাম’ হিসেবে কাস্ট করেন। জানা গেছে, প্রথমে ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স’-এ অভিনয়ের জন্য রাজি হননি অমরেশ। পরে অ্যাটেনবরোর অনুরোধে রাজি হন। এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য মাথা কামিয়ে ফেলতে হয়েছিল অমরেশ পুরিকে। পরে তার এই টেকো মাথার স্টাইল হিন্দি সিনেমায় এতটাই জনপ্রিয় হয় যে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই স্টাইল ধরে রাখেন তিনি।
অমরেশ পুরি ছিলেন স্টিভেন স্পিলবার্গের প্রিয় অভিনেতা। তাঁর সম্পর্কে এক সাক্ষাৎকারে অস্কারজয়ী এই নির্মাতা বলেছেন, ‘আমার সবচেয়ে প্রিয় খল চরিত্রের অভিনেতা অমরেশ পুরি। পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া সর্বকালের সব খলনায়কের মধ্যে তিনিই সেরা, তাঁর মতো কেউ আসবে না।’
চলে যাওয়া বলিউড অভিনেতা
⇒ স্মরণীয় ইরফান খান
রিচার্ড অ্যাটেনবরোর কালজয়ী সিনেমা ‘গান্ধী’তেও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ‘চায়না গেট’ ছবিতে ‘ছাম্মা ছাম্মা’ গানে অমরেশ পুরির হালকা কোমর দোলানো দর্শকের মনে থাকবে অনেক দিন।
‘মোগাম্বো খুশ হুয়ে’ বা ‘আব সামঝোগে পাশা কি ভাষা’র মতো কালজয়ী সংলাপ আর এ চরিত্রগুলো আজীবন মনে রাখার মতো।
১৯৯১ সালে ‘আরব্য রজনী’-র গল্প অবলম্বনে ‘আজুবা’ ছবিটি নির্মিত হয়। ছবিটিতে দুষ্টু উজিরের চরিত্রে অভিনয় করেন অমরেশ পুরি। বাস্তব-অবাস্তব ঘটনার মিশেলে এক রোমাঞ্চকর ছবি ছিল ১৯৮৬ সালের হিন্দি ছবি ‘নাগিনা’। ভৈরবনাথ নামে এক সাধকের চরিত্রে অসামান্য অভিনয় করেন অমরেশ পুরি। ১৯৯৭ সালে ‘পরদেশ’ ছবিতে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ীর চরিত্রে দেখা যায় তাঁকে।
খলনায়কের চরিত্রে প্রতিষ্ঠা পেলেও অমরেশ পুরি অনেক ছবিতেই ইতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৯৫ সালে বক্স অফিসে সর্বোচ্চ আয় করা ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়ে লে যায়েঙ্গে’ ছবিতে এক ভারতীয় পারিবারিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে হাজির হন তিনি। যিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও অটুট রেখেছেন তার ভারতীয় সংস্কৃতি—এমনই এক বাবার চরিত্র ছিল বলদেব সিং চৌধুরীর। কাজলের বাবা হিসেবে অসাধারণ অভিনয় করেন অমরেশ পুরি। চলচ্চিত্রের শেষের দিকে তার শেষ সংলাপ ‘যা সিমরান যা!’-কালজয়ী হয়ে আছে।
অমরেশ পুরি চারবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৮৬ সালে, ‘মেরি জং’, ‘ঘাতক’ (১৯৯৬) ও ‘ভিরাসাত’ (১৯৯৭) ছবির জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তবে ২০০২ সালে ‘গাদার: এক প্রেমকথা’ ছবির জন্য তিনি এই পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তিনি দুবার স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডসও অর্জন করেন।