বিশেষ প্রতিনিধি :
‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমা দিয়ে ঢালিউডে যাত্রা শুরু করে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে চিত্রনায়ক সালমান শাহ। তাঁর অভিনীত আরেক ব্যবসাসফল ছবি অন্তরে অন্তরে। একের পর এক ছবি করে দর্শকদের অন্তরে অন্তরে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। মৃত্যুর ২৩ বছর পরও তিনি রয়েছেন মানুষের অন্তরের মনিকৌঠায়। ২৬তম মৃত্যুদিনে তাই তো এখনও মানুষ তাঁকে স্মরণ করে কাঁদে। সবার অন্তরে অন্তরে এখনও বাস করেন সালমান।
সালমানের সঙ্গে ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেছেন শাবনূর। তিনি স্মরণ করেছেন সালমান শাহকে। গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সালমান শাহকে স্মরণ করতে গিয়ে বলেন, ‘সালমানের সঙ্গে অসংখ্য স্মৃতি এখনো আমাকে তাড়া করে। কক্সবাজারে একবার শুটিং করছিলাম। শুটিং শেষে পরিচালক ক্যামেরা ক্লোজ করেছেন। সবাই মিলে হইহুল্লোড় করছি। তখন অনেক রাত। সালমানের মনে হলো বারবিকিউ করবে। ইউনিটের সবাইকে নিয়ে বারবিকিউ করতে চলে গেল সৈকতে। রাতে মশাল জ্বালিয়ে আমরা একসঙ্গে বারবিকিউ করলাম। সালমানের সঙ্গে স্মৃতিগুলো এখনো মনের ভেতর জ্বলজ্বল করে।’
সালমানের মৃত্যু দিনে তাঁকে নিয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। নিজের ফেসবুকে সালমান অভিনীত ‘নয়ন’ নাটকের একটি স্থিরচিত্র পোস্ট করে চয়নিকা চৌধুরী ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন- সালমান শাহ ইমন (আদরের ছোট ভাই) যদি এই পৃথিবীতে সত্যি সত্যি বেঁচে থাকতেন, আমার প্রথম ছবির নায়ক সালমান শাহ ই হতেন। আমি আমার বহু ইন্টারভিউ তে এটা বলেছি মুখ দিয়ে এবং এটাও বলেছি আমার ‘বিশ্বসুন্দরী’ এর রাইটার রুম্মান রশীদ খানকে যে, সেক্ষেত্রে সিয়ামকে না পেলে এই গল্প চেঞ্জ করবো। তার মানে এই না যে, সালমানের বিকল্প সিয়াম। তবে হ্যাঁ, তিনি আছেন। সবার মনের মাঝে। আজো অমলীন। কারণ তার ছিল কাজের প্রতি ভালোবাসা। শ্রদ্ধা ভালোবাসা, আর পরিচালক থেকে শুরু করে সবার প্রতি সম্মান।
সালমান শাহকে নিয়ে আরও নিউজ :
⇒ স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহ
⇒ প্রজন্মান্তরের তরুণদের আইকন সালমান শাহ
চয়নিকা আরও লেখেন, সৃষ্টি অডিও ভিশন থেকে নাটক হলো ‘নয়ন’। শমী, তমালিকা, ডলি জহুর, কাশেম আংকেল! আহ! কী সুন্দর নাটক! কাজের প্রতি ইমনের ডেডিকেশন দেখে মুগ্ধ হলাম সবাই। আহারে ইমন! কতো আনন্দ নিয়ে কাজ করতাম! আহ! ইমন, শমী, তমাল। ডিওপি ছিলেন বুলু ভাই।
ছোট বেলার কত কিছু মনে পড়ে যায়! নীলা আন্টি আমাকে আর আমার বোনকে অনেক আদর করতেন। আর সালমান শাহ সুপারস্টার হবার পরেও। এক রকম ছিলেন, এতো সুন্দর ব্যবহার। অরুণ চৌধুরীর সাথে বিয়ের পরেও তা বদল হয়নি। বাসায় আসলে গল্প করত,মাঝে মাঝে কিছু কষ্টের কথা শেয়ার করত! আমি আর আমরা মুগ্ধ হয়ে তার কথা শুনতাম।
সালমান তুমি তখন যেমন আধুনিক ছিলে, আজ অবধি তুমি ই আধুনিক। তুমি একমাত্র, অনলি ওয়ান। মনে পড়ে যায়, এই দিনে তোমার চলে যাবার পর বিটিভিতে আবারো ‘নয়ন’ প্রচার হয়েছিল এবং ঢাকা শহরের রাস্তা দেখে মনে হয়েছিলো সেদিন, যেন কারফিউ দেয়া হয়েছে। সত্যি আজো আমার মনে পড়ে যায় সব।
নয়ন দেখার পর আমাদের ছেলে অনন্য প্রতীক ছোট বেলায় বলতো, ‘বড় হয়ে আমি সালমান শাহ হবো!’ সালমান, তোমার মত কেউ নেই। তোমার মত কেউ আসেনি। তুমি একমাত্র যার জন্য সব্বাই সব্বাই আজো এত বছর হয়ে গেলো চোখ ভেসে যায় জলে। কত মানুষ আসে যায়। কিন্ত বুকের ভিতর এমন হাহাকার তোমার জন্যই হয়।
যেখানেই থাকো ভালো থেকো। সবাই তোমাকে ভালোবাসে। আর এত কম সময়ে তুমি যা করে গিয়েছিলে, তা কেউ করতে পারেনি। ভালো অভিনয় শিল্পী অনেকেই হতে পারে কিন্ত জনপ্রিয়তা আর তা ধরে রাখা এত সহজ না আর তা এমনি এমনি হয় না। ভালোবাসা, শ্রদ্ধা তোমার জন্য। অনেক প্রার্থনা তোমার জন্য।
নায়ক সালমান শাহ সম্পর্কিত আরও খবর
♠ সালমান শাহ থাকবে এই ঘর এই সংসারে
সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার শুরু করেন চিত্রনায়ক সালমান শাহ। একই ছবিতে প্রথম গান গেয়ে জনপ্রিয় হন কণ্ঠশিল্পী আগুন। সোহান এবং আগুন দুজনেই পরবর্তী জীবনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছিলেন।
সালমানের প্রয়াণ দিবসে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে গিয়ে সালমানকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন তারা। সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘সালমান শাহ অনেক ফ্যাশন সচেতন ছিলেন। সালমান আমার পরামর্শে কখনও পোশাক পড়তেন না। আমি যদি বলতাম টিশার্ট ইন করা যাবে না। কিন্তু তিনি তাই করতেন।’
এবার সালমান শাহ স্মরণে টেলিভিশনে গান গাইলেন সঙ্গীতশিল্পী আগুন। নিজের গানের ক্যারিয়ারের শুরুর কথাও স্মরণ করলেন তিনি। শোনালেন সালমানের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের কথাও।
সালমান শাহের প্রথম ছবির নায়িকা মৌসুমি ও সে সময়ের তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্ধী নায়ক ওমর সানিও স্মৃতিচারণ করেছেন। ওমর সানি বলেন, ‘আমি কখনও সোহান ভাইকে কাঁদতে দেখিনি। এবারই তাকে কাঁদতে দেখলাম, তাও আবার আমাদের প্রিয় নায়ক সালমান শাহের জন্য।’ তিনি জানান, মৌসুমীর সঙ্গে তার সম্পর্কের জন্যই নাকি সালমান ও মৌসুমীর বন্ধুত্বে ক্ষয় ধরেছিলো।
মৌসুমী বলেন, ‘চার বছরের ক্যারিয়ারে সালমান উপহার দিয়েছেন ২৭টি সফল ছবি। তারা মৃত্যুর পর কেটে গেছে দেড় যুগ। তার প্রতি মানুষের ভালোবাসা বিন্দুমাত্র কমেনি। দিন যতোই যাচ্ছে, সালমানের প্রতি মানুষের ভালোবাসা আরও বাড়ছে।’ বন্ধুকে স্মরণ করে মৌসুমী আরও বলেন, ‘সালমান কখনো বড় হয়নি। তাঁর সবকিছুই ছিল আলাদা। যখন রাগ করত, ভীষণ রিঅ্যাক্ট করত। রাগ পড়ে গেলে যেন জীবনটাই দিয়ে দিতে পারত বন্ধুর জন্য। বাস্তব জীবনে সে ছিল পর্দার মতোই রোমান্টিক।’
শোবিজ অঙ্গনের আরও খবর
∴ সালমান শাহ স্মরণে নতুন আবহে ‘তোমাকে চাই’
সত্যের মৃত্যু নেই ছবির পরিচালক ছটকু আহমেদ ছবিটির শেষ দৃশ্যে সালমানকে ফাঁসিতে ঝুলানোর দৃশ্যের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন। তিনি বলেন, ‘কথা ছিল তাঁর মাথাটা কেবল ঢেকে দেওয়া হবে কালো কাপড়ে। সালমান বেঁকে বসলেন। বললেন, “আমার হাত–পা বেঁধে দিন। হাত–পা বাঁধা না থাকলে আসামিকে আসামি মনে হয় না।”’ পরিচালকের ভাবনাকে বদলে দিলেন সালমান। এ ঘটনায় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ছিলেন পরিচালক। কিন্তু সালমান ছিলেন সেসব ভাবনার ঊর্ধ্বে।
ছটকু আহমেদ বলেন, ‘নিজের চরিত্রের পোশাক, স্টাইলটা সে নিজে তৈরি করতে জানত। সময় নিয়ে চরিত্র বুঝত। এখনকার অভিনয়শিল্পীদের বেশির ভাগই সেটা করে না। তাঁদের শুধুই তাড়া। না বুঝেই এরা বুঝে ফেলার ভান করে, সেটার প্রভাব দেখা যায় সিনেমায়।’
গত শুক্রবার ৬ সেপ্টেম্বর প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহ’র ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করে বিএফডিসিতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি কোরআন খতম, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে।
চলচ্চিত্রের মানুষরা ছাড়াও সালমান শাহের দুই প্রজন্মের ভক্তরা তাঁকে স্মরণ করেন। তাঁকে যারা দেখেনি এই প্রজন্মের নতুন নায়ক ও তরুণরা। যারা এখনও সালমান শাহকে নিজেদের আইকন ধরে নিয়ে পথ চলতে চায়। তারা বলে উঠে সালমান তুমি আছো আমাদের অন্তরে অন্তরে।