নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলা চলচ্চিত্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য দেয়া হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সেই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২০১৭ ও ২০১৮ সালের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৭ সালে ২৭টি ও ২০১৮ সালে ২৮টি বিভাগে চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলীদের এই পুরস্কার দেয়া হবে।
২০১৭ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার যারা পেলেন
বাংলা চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৭ সালের আজীবন সম্মাননা পেতে যাচ্ছেন কিংবদন্তী অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও গল্পকার এটিএম শামসুজ্জামান এবং অভিনেত্রী সালমা বেগম সুজাতা।
আলোচিত সিনেমা ‘ঢাকা অ্যাটাক’ পাচ্ছে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার। শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার পাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘বিশ্ব আঙ্গিনায় অমর একুশে’।
‘গহীন বালুচর’ ছবির নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ পাচ্ছেন শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালকের পুরস্কার।
প্রধান চরিত্রে যুগ্মভাবে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কার পাচ্ছে ‘সত্তা’ চলচ্চিত্রের জন্য সুপারস্টার শাকিব খান ও ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমার জন্য জনপ্রিয় নায়ক আরিফিন শুভ। ‘হালদা’ ছবির জন্য প্রধান চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কার পাচ্ছেন ছোটপর্দা ও বড়পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা।
পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ‘গহীন বালুচর’র মোহাম্মাদ শাহাদাৎ হোসেন এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী যুগ্মভাবে হালদা’র রুনা খান ও ‘গহীন বালুচর’র সুর্বনা মুস্তাফা। খল চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ‘হালদা’র জাহিদ হাসান এবং কৌতুক চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ‘গহীন বালুচর’র ফজলুর রহমান বাবু।
শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী ‘সিটকিনি’ চলচ্চিত্রের নাইমুর রহমান আপন এবং শিশু শিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার পাচ্ছেন ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’র অনন্য সামায়েল।
শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক এম এ ফরিদ আহমেদ হাজরা (তুমি রবে নিরবে), শ্রেষ্ঠ গায়ক মাহফুজ আনাম জেমস (সত্তা-তোর প্রেমেতে অন্ধ), শ্রেষ্ঠ গায়িকা মমতাজ (সত্তা-না জানি কোন অপরাধে), শ্রেষ্ঠ গীতিকার সেঁজুল হোসেন (সত্তা-না জানি কোন অপরাধে), শ্রেষ্ঠ সুরকার বাপ্পা মজুমদার (সত্তা-না জানি কোন অপরাধে) এবং শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক ইভান শাহরিয়ার সোহাগ (ধ্যাত্তেরিকি)।
শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার আজাদ বুলবুল (হালদা), শ্রেষ্ঠ চিত্র নাট্যকার তৌকীর আহমেদ (হালদা), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা বদরুল আনাম সৌদ (গহীন বালুচর), শ্রেষ্ঠ সম্পাদক মোহাম্মাদ কালাম (ঢাকা অ্যাটাক), শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক উত্তম কুমার গুহ (গহীন বালুচর), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক কমল চন্দ্র দাশ (গহীন বালুচর), শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক রিপন নাথ (ঢাকা অ্যাটাক), শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা রীতা হোসেন (তুমি রবে নিরবে) এবং শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান জাভেদ মিয়া (ঢাকা অ্যাটাক)।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সংক্রান্ত আরও খবর :
⇒ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার কি জাতীয় তিরস্কার হয়ে উঠছে?
⇒ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত ২৮ ছবি
২০১৮ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার যারা পেলেন
বাংলা চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য যুগ্মভাবে আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন প্রবীন অভিনেতা প্রবীর মিত্র ও পরিচালক, গায়ক, উপস্থাপক এবং ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেতা আলমগীর।
চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর প্রযোজিত ‘পুত্র’ পাচ্ছে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার। শ্রেষ্ঠ স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রযোজিত ‘গল্প ও সংক্ষেপ’। শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র পাবে ফরিদুর রেজা সাগরের ‘রাজাধিরাজ রাজ্জাক’।
‘জান্নাত’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক পাচ্ছেন মোস্তাফিজুর রহমান মানিক।
প্রধান চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কার যুগ্মভাবে পাচ্ছেন ‘পুত্র’ চলচ্চিত্রের জন্য ফেরদৌস আহমেদ এবং ‘জান্নাত’ সিনেমার জন্য সাদিক মোহাম্মাদ সাইমন। প্রধান চরিত্রে ‘দেবী’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হচ্ছেন জয়া আহসান।
পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা আলীরাজ (জান্নাত), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী সুচরিতা (মেঘকন্যা), খল চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা সাদেক বাচ্চু (একটি সিনেমার গল্প), কৌতুক চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা যুগ্মভাবে মোশাররফ করিম (কমলা রকেট) ও আফজাল শরীফ (পবিত্র ভালোবাসা)।
শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী ফাহিম মোহতাসিম লাজিম (পুত্র) এবং শিশু শিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার পাচ্ছে মাহমুদুর রহমান অনিন্দ্য (মাটির প্রজার দেশে)।
শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক ইমন সাহা (জান্নাত), শ্রেষ্ঠ গায়ক নাইমুল ইসলাম রাতুল (পুত্র), শ্রেষ্ঠ গায়িকা যৌথভাবে সাবিনা ইয়াসমিন (পুত্র) ও আঁখি আলমগীর (একটি সিনেমার গল্প), শ্রেষ্ঠ গীতিকার যুগ্মভাবে কবির বকুল (নায়ক) ও জুলফিকার রাসেল (পুত্র), শ্রেষ্ঠ সুরকার হলেন উপমহাদের বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী রুনা লায়লা (একটি সিনেমার গল্প)। শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক মাসুম বাবুল (একটি সিনেমার গল্প)।
শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার সুদীপ্ত সাঈদ খান (জান্নাত), শ্রেষ্ঠ চিত্র নাট্যকার সাইফুল ইসলাম মান্নু (পুত্র), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা যৌথভাবে এম এ আলমগীর (একটি সিনেমার গল্প) ও এস এম হারুন-অর-রশিদ (পুত্র)।
শ্রেষ্ঠ সম্পাদক তারিক হোসেন বিদ্যুৎ (পুত্র), শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক উত্তম কুমার গুহ (একটি সিনেমার গল্প), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক জেড এইচ মিন্টু (পোস্টমাস্টার ৭১), শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক যুগ্মভাবে আজম বাবু (পুত্র) ও কাজী সেলিম (একটি সিনেমার গল্প), শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা সাদিয়া শবনম শানতু (পুত্র) এবং শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান ফরহাদ রেজা মিলন (দেবী)।
তথ্য মন্ত্রণালয় গত ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৭ ও ২০১৮-এর জন্য চলচ্চিত্র আহ্বান করে। সিনেমা এবং প্রস্তাব দেওয়ার শেষ সময় ছিলো মার্চ মাস পর্যন্ত। ২ বছরে মুক্তি পাওয়া ৭৪টি সিনেমা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এদের মধ্য থেকে বাছাইয়ের জন্য ২ বছরের জন্য ২টি জুরিবোর্ড গঠন করা হয়।
২০১৭ সালের জুরিবোর্ডে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া, অভিনেত্রী কোহিনুর আক্তার সুচন্দা, অভিনেতা ও পরিচালক এম এ আলমগীর, সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, সঙ্গীতশিল্পী রফিকুল আলম, সঙ্গীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম এবং চিত্রগ্রাহক পঙ্কজ পালিত।
২০১৮ সালের জুরিবোর্ডে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া, অভিনেতা ইনামুল হক, অভিনেত্রী রওশন আরা রোজিনা, সঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর, সাংবাদিক শ্যামল দত্ত, গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালক হাসান মতিউর রহমান, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার ও চিত্রগ্রাহক তপন আহমেদ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ স্বীকৃতি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান শুরু হয় ১৯৭৫ সালে। প্রথমে না থাকলেও নতুন করে ‘আজীবন সম্মাননা পুরস্কার’ বিভাগ যোগ হয় ২০০৯ সালে।