বিশেষ প্রতিবেদক :
বাংলা চলচ্চিত্রের এক অমলিন নক্ষত্র সুভাষ দত্ত। তিনি একাধারে নির্মাতা, চিত্রশিল্পী ও অভিনেতা ছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি তিনি। শুরুতে চলচ্চিত্রের পোস্টার আঁকতেন। এ দেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ-এর পোস্টার ডিজাইন করেন তিনি। এরপর অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, নির্মাণ করেন বিখ্যাত সব সিনেমা।
২০১২ সালের আজকের এই দিনে (১৬ নভেম্বর) হৃদরোগসহ বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন এই কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার। কালচারাল ইয়ার্ড পরিবার তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করছে।
১৯৩০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরে সুভাষ দত্তের জন্ম। সেখানে ছিল তাঁর মামার বাড়ি। বাবা বাড়ি ছিল বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে। সুভাষ দত্তের ডাক নাম পটলা। ভাল নাম সুভাষ চন্দ্র দত্ত।
তাঁর অভিনয় জীবনের শুরু শৈশবে নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে। ১৯৭২ সালে কবর নাটকে অভিনয় করেন তিনি। এটি ছিলো ঢাকার আরণ্যক নাট্যদলের প্রথম প্রযোজনা। এরপর অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি নাট্য নির্দেশনাও দেন।
১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ দেখে তিনি ছবি নির্মাণে দারুণভাবে আগ্রহী হন। সেজন্য চলচ্চিত্র নির্মাণের কৌশল শিখতে চলে যান ভারতের বোম্বেতে। ফিরে এসে বাংলা চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন অভিনয়শিল্পী হিসেবে। এহতেশামের ‘এ দেশ তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জীবনের শুরু করেন তিনি। রাজধানীর বুকে, সূর্যস্নান, চান্দা, তালাশ, নতুন সুর, রূপবান, মিলন, নদী ও নারী, সোনার কাজলসহ বহু ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
অভিনয় করলেও নির্মাতা হওয়ার প্রবল বাসনা ছিলো তাঁর মধ্যে। ১৯৬২ সালের শেষ দিকে এসে তিনি একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের চিন্তা-ভাবনা করতে থাকেন। শচীন ভৌমিকের একটি গল্পের চিত্রনাট্য নিয়ে এসে সৈয়দ শামসুল হককে দেখান তিনি। এরপর সঙ্গীতকার সত্য সাহাকে সঙ্গে নিয়ে নির্মাণ করেন তাঁর প্রথম ছবি ‘সুতরাং’।
ছবিটি সারাদেশে মুক্তি পেলো ১৯৬৪ সালের ২৩শে এপ্রিল। সুপারহিট হলো ছবিটি। সুপারস্টারের তকমা পেলেন ছবির নায়িকা সারাহ বেগম কবরী। এটি নায়িকা কবরীর প্রথম অভিনীত ছবি। শুধু চলচ্চিত্র নির্মান না, তারকা ও শিল্পীও নির্মাণ করতেন সুভাষ দত্ত। তাঁর হাত ধরেই রুপালী জগতে পা রাখেন কবরী, সুচন্দা, উজ্জল, শর্মিলী আহমেদ, ইলিয়াস কাঞ্চন, আহমেদ শরীফসহ অনেক জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী।
নির্মাণ করেছেন সুতরাং, কাগজের নৌকা, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, আয়না ও অবশিষ্ট, আবির্ভাব, সবুজ সাথী, বসুন্ধরা, আমার ছেলেসহ অসংখ্য সিনেমা।
চলচ্চিত্রে অভিনয় ও নির্মাণের জন্য দেশে বিদেশে অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন গুণী এই ব্যাক্তি। ১৯৭৭ সালে ‘বসুন্ধরা’ ছবির জন্য পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান সুভাষ দত্ত। এরপর ১৯৯৯ সালে একুশে পদক অর্জন করেন তিনি। তিনি বেগম রোকেয়া’র জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করার ইচ্ছে পোষণ করলেও তা পূরণ করে যেতে পারেননি।
সুভাষ দত্ত ১৯৬৫ সালে ফ্রাংকফুর্ট চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সুতরাং’ দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কার লাভ করে। মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৬৭, ১৯৭৩ ও ১৯৭৯) ও নমপেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (১৯৬৮) পুরস্কার পান তিনি। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতার পুরস্কার জিতে নেন। ২০০৩ সালে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পান তিনি।
সুভাষ দত্ত সংক্রান্ত আরও খবর :
⇒ কিংবদন্তী চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্তের জন্মদিন