দেশি চলচ্চিত্রের জন্য গত বছরটি ছিলো চরম হতাশার। স্থানীয় ও আমদানি মিলে মুক্তি পেয়েছিলো অর্ধ শতাধিক সিনেমা। একটি হিট আর গুটি কয়েক কিছুটা আলোচনা তৈরি করতে পারলেও বাকিগুলো শুধু সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া আর কোন কাজেই আসে নি। ফলে একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিনেমা হল। ছোট হয়ে যাচ্ছে ছবির বাজার। লোকসানে পরে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে পুরাতন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো। বিগত বছরগুলোতে পাঁচের অধিক সিনেমা মুক্তি দিতো দেশের প্রভাবশালী প্রযোজনা সংস্থা জাজ মাল্টিমিডিয়া। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে গত বছর তাদের মাত্র ২টি (‘প্রেম আমার ২’ ও ‘বেপরোয়া’) সিনেমা মুক্তি পেয়েছিলো। তবে নতুন বছরে তারা হাতে নিয়েছে বেশ কিছু বিগ বাজেটের সিনেমা। তারা আশা করছেন এই সিনেমাগুলোর হাত ধরেই আবার ঘুরে দাঁড়াবে বাংলা চলচ্চিত্র।
জাজ মাল্টিমিডিয়ার আলোচিত সিনেমা ‘জ্বীন’। নাদের চৌধুরী পরিচালিত এই সিনেমায় দু’টি জুটি অভিনয় করেছে। জনপ্রিয় অভিনেতা আব্দুন নূর সজল ও চিত্রনায়িকা পূজা চেরি এবং জিয়াউল রোশান ও জান্নাতুন নূর মুন।
সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমার শুটিং ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। চলছে পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ। সম্প্রতি সিনেমাটি প্রসঙ্গে জাজের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, ‘জ্বীন’ চলচ্চিত্রের শেষ ১৯ মিনিটের ক্লাইম্যাক্স সম্পূর্ণ সিজি হবে। এজন্য তারা হলিউড ও বলিউডের কারিগরি প্রযুক্তি সহায়তা নিচ্ছেন।
নিখুঁতভাবে ভিএফএক্সের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরে ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চে ছবিটি মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
শুটিং, ডাবিং ও পোস্ট প্রোডাকশনের সকল কাজ সম্পন্ন করার পর সেন্সরে জমা দিলে নানা জটিলতায় গত বছর মুক্তি পায় নি প্রখ্যাত নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’। রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ, ভারত ও জার্মানির যৌথ প্রযোজনায় এই ছবিটি নির্মিত হয়েছে। এতে মূখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন জাহিদ হাসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ইয়াদ হুরানি, নাদের চৌধুরী, ইরেশ যাকের, মামুনুর রশীদ।
ইতোমধ্যেই ছবিটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রদর্শন করা হয়েছে। সেখানে প্রশংসার পাশাপাশি বেশ কিছু সম্মাননাও পেয়েছে চলচ্চিত্রটি। চলতি বছর সেন্সর সার্টিফিকেট নিয়ে সিনেমাটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেয়ার আশাবাদ ব্যাক্ত করেছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি।
জাজ মাল্টিমিডিয়ার বহুল আলোচিত সিনেমা ‘মাসুদ রানা (এমআর৯)’। ছবিটির বাজেট ১০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮৩ কোটি টাকা)। এতে দেশীয় অভিনেতা-অভিনেত্রীর পাশাপাশি বিদেশীও কয়েকজন থাকবেন বলে জানা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকেই চুড়ান্ত করা হয় নি।
জাজের পাশাপাশি চলচ্চিত্রটিতে বেশ কয়েকজন বিদেশী প্রযোজকও রয়েছেন। বাংলাদেশ ছাড়া মরিশাস ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন জায়গায় সিনেমাটির শুটিং হবে।
ছবিটি বাংলার ছাড়াও ইংরেজি ভাষায় ডাবিং করা হবে। বাংলা ভাষায় মুক্তি পাবে বাংলাদেশ ও কলকাতায়। ইংরেজি ভাষায় সারা বিশ্বে এক যোগে মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
কাজী আনোয়ার হোসেনের ‘ধ্বংস পাহাড়’ গল্প অবলম্বণে কিছুটা পরিমার্জন, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন জাজ কর্ণধার আবদুল আজিজ, আসিফ আকবর ও নাজিম উদ দৌলা। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হলিউড নির্মাতা আসিফ আকবর এটি পরিচালনা করছেন।
গত বছর ডিসেম্বরে ঘোষণা আসে, দীর্ঘ বিরতির পর ‘কাঁটাতারের বেড়া’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয়ে ফিরছেন বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূর। এবার ফিটনেসসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই ফিরছেন তিনি। চিত্রনায়িকা শাবনূর নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, চরিত্রানুযায়ী শাবনূর তৈরি হলেই সিনেমাটির শুটিং শুরু হবে। এতে পাঁচ মাসের মত সময় লাগতে পারে। তাই চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ছবির শুটিং শুরু হতে পারে।
‘কাঁটাতারের বেড়া’ চলচ্চিত্রটি কে পরিচালনা করবেন বা ছবির নায়ক হিসেবে কে থাকবেন তা এখনও জানা যায় নি। তবে পরিচালক হিসেবে মোস্তাফিজুর রহমান মানিক থাকতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। আর নায়ক হিসেবে শাবনূরের পছন্দ শাকিব খান, রিয়াজ অথবা ফেরদৌস। তবে এই ছবিতে নায়ক হিসেবে বলিউড অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক অজয় দেবগনের নামও শোনা যাচ্ছে।
এছাড়াও নাম ঠিক না হওয়া আরও বেশ কিছু নতুন সিনেমা নিয়ে কাজ করছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। আপকামিং দুই বিগ বাজেটের সিনেমায় দুইজন নতুন মুখকে উপহার দিতে যাচ্ছেন তারা। সব মিলিয়ে নতুন বছরে বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য অনেক চমক নিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে সিনেমা নির্মাণ শুরু করেন জাজ মাল্টিমিডিয়া। ইতোমধ্যেই ১৩টি সিনেমা যৌথ প্রযোজনাসহ ৪১টি চলচ্চিত্র মুক্তি দিয়েছে তারা। এসব সিনেমার মাধ্যমে দেশীয় চলচ্চিত্রকে উপহার দিয়েছে বেশ কিছু নতুন মুখ। তাদের মধ্যে আরিফিন শুভ, বাপ্পি চৌধুরী, মাহিয়া মাহি, সায়মন সাদিক, নুসরাত ফারিয়া, সিয়াম আহমেদ, পূজা চেরি, জিয়াউল রোশান, শিপন মিত্র অন্যতম।