হালের সম্ভাবনাময় একজন চিত্রনায়ক ও মডেল কায়েস আরজু। অভিনয়ের শুরুটা করেছিলেন মঞ্চ থেকে। ২০০৭ সালে হাছিবুল ইসলাম মিজান পরিচালিত ব্যবসা সফল ‘তুমি আছো হৃদয়ে’ ছবির মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন। এ পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত নয়টি সিনেমা। ২০১৯ সালের আলোচিত ‘আমার প্রেম আমার প্রিয়া’ সিনেমায় পরীমনির বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। ইতোমধ্যেই আরও দুইটি সিনেমার কাজ সম্পন্ন করেছেন। খুব শিঘ্রই মুক্তি পাবে সেগুলো। টেলিফিল্ম ও বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করেছেন তিনি। বর্তমানে বেশ কিছু চলচ্চিত্রে কাজ করছেন। নিজের অভিনয় জীবন ও দেশীয় চলচ্চিত্রের নানা দিক নিয়ে কালচারাল ইয়ার্ডের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় কথা বলেন এই তারকা।
কালচারাল ইয়ার্ড : কীভাবে চলচ্চিত্রে আসলেন? কায়েস আরজু : সিনেমায় আমার আইডল সালমান শাহ। তার পাগল ভক্ত ছিলাম। তার চলচ্চিত্র দেখে অভিনয়ের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয়। এরপরে লেখাপড়ার পাশাপাশি যুক্ত হই গ্রুপ থিয়েটারে সাথে। প্রথমে চট্টগ্রামে এবং পরে ঢাকায় থিয়েটারে অভিনয় করতাম। এরপর আসলাম চলচ্চিত্রে।
কালচারাল ইয়ার্ড : আপনার অভিনীত চলচ্চিত্র নিয়ে বলুন। কায়েস আরজু : আমার প্রথম সিনেমা হাছিবুল ইসলাম মিজান পরিচালিত ‘তুমি আছো হৃদয়ে’। এটি মুক্তি পায় ২০০৭ সালে। এরপর ২০১০ সালে মোহাম্মদ হোসেন জেমীর ‘বাজাও বিয়ের বাজনা’ ও আ খ ম ফিরোজ বাবুর ‘প্রেম বিষাদ’, ২০১২ সালে আবুল খায়ের বুলবুলের ‘অবুঝ প্রেম’, ২০১৩ সালে হানিফ রেজা মিলনের ‘মন তোর জন্য পাগল’, ২০১৪ সালে দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘হেডমাস্টার’, ২০১৫ সালে সাইফ চন্দনের ‘ছেলেটি আবোল তাবোল মেয়েটি পাগল পাগল’, ২০১৫ সালে অনন্য মামুনের ‘ভালোবাসার গল্প’ এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালে শামীমুল ইসলাম শামীমের ‘আমার প্রেম আমার প্রিয়া’ ছবি মুক্তি পায়।
কালচারাল ইয়ার্ড : সামনে কোন কোন চলচ্চিত্র আসছে? কায়েস আরজু : মুক্তির অপেক্ষায় আছে গাজিউর রহমান পরিচালিত ‘এই তুমি সেই তুমি’। এতে আমার বিপরীতে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়িকা আইরিন। আর মেহেদী হাসান ঈশা পরিচালিত ‘আগুনে পোড়া কান্না’ সিনেমার শুটিং ও ডাবিং শেষ হয়েছে। এটাও খুব শিঘ্রই মুক্তি পাবে। এতে আমার সহ-অভিনেত্রী ছিলেন নবাগত আরোহী।
মেহেদী হাসান ঈশার নতুন চলচ্চিত্র ‘মন জ্বলে রে’ অভিনয় করবো। এতে আমার বিপরীতে কে থাকবে সেটা এখনও ফাইনাল হয় নি, সম্ভবত পরীমনি থাকতে পারে। ফেব্রুয়ারি থেকে ছবিটির শুটিং শুরু হবে। এছাড়া শফিক হাসানের নাম ঠিক না হওয়া একটি চলচ্চিত্রে কাজ করবো। এগুলো ছাড়াও আর কয়েকটি সিনেমার ব্যাপারে কথা চলছে।
কালচারাল ইয়ার্ড : দেশীয় চলচ্চিত্রের জন্য ২০১৯ সালটা চরম হতাশায় কেটেছে। এ বিষয়ে কিছু বলুন। কায়েস আরজু : দর্শকদের রুচির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের প্রেক্ষাগৃহের সংখ্য অনেক কমে গেছে। আমি মনে করি, গুদামঘর মানে যেসব প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখার পরিবেশ নেই, সেগুলো রাখারই দরকার নেই। ৫ বছর আগে যদি এগুলো সব বন্ধ হয়ে যেতো, তাহলে হয়তো ফিল্মের জন্য ভালো কিছু হতো। কারণ একটা জিনিস শেষ না হলে নতুন কিছু শুরু হয় না। এগুলো থাকার কারণে দর্শক এত কমেছে। এই মরা হলগুলোতে গুটি কয়েক যারাই যেতো, তারাও এখন বিরক্ত হয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ওইসব হলে ভালো ছবি দিলেই কি আর খারাপ ছবি দিলেই কি! ফলাফল একই দাঁড়াচ্ছে। যে কারণে ভালো থিয়েটারের (প্রেক্ষাগৃহ) কোন বিকল্প নেই।
আপনাকে যত ভালো খাবারই দেয়া হোক না কেন, আপনি তা ফুটপাথে বসে খেতে পারবেন না। খারারের জন্য একটা পরিবেশ দরকার। ঠিক তেমনি সিনেমার ক্ষেত্রেও। অনেকেই বলে ভালো সিনেমা হলে যেকোন জায়গায়ই চলবে। না, কিছু ব্যাপার আছে। সব জায়গায় সব কিছু চলবে না। বিনোদনের জন্য পরিবেশ লাগবে। এছাড়া ছবি প্রদর্শনের জন্য বুকিং, ডিস্ট্রিবিউশনসহ পুরো সিস্টেমেই সমস্যা রয়েছে।
কালচারাল ইয়ার্ড : এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কী কী উপায় আছে বলে আপনি মনে করেন। কায়েস আরজু : হলের পরিবেশ, সিনেমা প্রদর্শনের জন্য বুকিং, ডিস্ট্রিবিউশনসহ পুরো সিস্টেমের পরিবর্তন হলে ছবি যেটুকু চলার চলবে। সারা বিশ্বেই এখন থিয়েটারে সিনেমা দেখা কমে গেছে। নেটফিক্স, আইফিক্সসহ নানা প্লাটফর্মে এখন সিনেমা দেখানো হচ্ছে। আমাদের সিনেমাগুলো ওসব জায়গায় চলে যাবে। আমাদেরকে আর শুধু সিনেমা হলের ওপর নির্ভর করে থাকতে হবে না।
মানুষ এখন সিনেপ্লেক্সে ছবি দেখতে চায়। এখন দর্শক চায় যেখানে শপিং করতে যাবে, সেখানে সিনেমা দেখবে এবং ফুডকোটে খাবে। আশা করি নতুন বছরে এই প্রজন্মের দর্শকের রুচিসম্মত ও ভালো ভালো কিছু সিনেমা মুক্তি পাবে।
কালচারাল ইয়ার্ড : চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি? কায়েস আরজু : সালমান শাহকে দেখে অভিনয়ে এসেছি। কিন্তু আপনারা জানে, এখন ফিল্মে অবস্থাটা খুব খারাপ। তারপরেও সেখান থেকে আস্তে আস্তে সবাই মিলে একটা আশায় বুক বেধে কাজ করে যাচ্ছি যে, কোন একটা পরিবর্তন হয়তো হবে। আশা করি সামনের দিকে ভালো কিছু হবে। ভালো কাজ ছাড়া করতে চাই না। মানসম্মত সিনেমার সাথে থাকতে চাই। সামনে দিনগুলোতে ভালো ভালো কাজ করতে চাই।
কালচারাল ইয়ার্ড : আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। কায়েস আরজু : কালচারাল ইয়ার্ড এবং আপনাকেও ধন্যবাদ।