নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশের গুণী ও সৃজনশীল চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান। ১৯৬০ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত চলচ্চিত্রে তাঁর নিজস্বতার স্বাক্ষর উৎকীর্ণ করার জন্য মাত্র ১১ বছর সময় পেয়েছিলেন তিনি। জহির রায়হান চলচ্চিত্র পরিচালনা কিংবা প্রযোজনা ছাড়াও কথাসাহিত্যিক হিসেবেও ছিলেন নন্দিত। ছিলেন রাজনৈতিক সচেতন ও প্রতিবাদী চলচ্চিত্রকার। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্যামেরা হাতে চলচ্চিত্রকারদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার নির্মিত ‘স্টপ জেনোসাইড’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘জীবন থেকে নেয়া’- চলচ্চিত্রগুলো মাইলফলক হয়ে আছে।
জহির রায়হান ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি নিখোঁজ হন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আলবদর বাহিনীর কয়েকজন সদস্য শহীদুল্লাহ কায়সারকে তাঁর বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর তিনি আর ফেরেন নি। একজনের তথ্যের উপর নির্ভর করে ভাইকে খুঁজতে জহির রায়হান মিরপুর এলাকায় যান। নিজের মতাদর্শের কারণে স্বাধীনতাবিরোধীদের চক্ষুশূল ছিলেন তিনি। জানা যায়, তারাই জহির রায়হানকে গুলি করে হত্যা করে।
৪৮তম অন্তর্ধান দিবসে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি যোদ্ধা জহির রায়হানের প্রতি কালচারাল ইয়ার্ড পরিবারের শ্রদ্ধা।
জহির রায়হানের ৪৮তম অর্ন্তধান দিবস স্মরণে ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি মুক্তিযোদ্ধা, চলচ্চিত্রকার ও কথাসাহিত্যিক জহির রায়হান স্মরণ ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং জহির রায়হানের চিন্তা ও কর্মের বিশ্লেষণমূলক আলোচনার আয়োজন করেছে। আয়োজনটি বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকাল ৬টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার ইন্টারন্যাশনাল ডিজিটাল কালচারাল আর্কাইভ কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বিকাল ৪টায় জহির রায়হান নির্মিত চলচ্চিত্র ‘কখনও আসেনি’ প্রদর্শিত হবে।
এ স্মরণ আলোচনায় অংশ নেবেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র গবেষক ও লেখক অনুপম হায়াৎ, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র সমালোচক মাহমুদা চৌধুরী, জহির রায়হানের জেষ্ঠ্যপুত্র নির্মাতা বিপুল রায়হান এবং ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক বেলায়াত হোসেন মামুন।
১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট ফেনীর মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জহির রায়হান। জহির রায়হান ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকত্তোর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ‘যুগের আলো’, ‘খাপছাড়া’, যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতে কাজ করেন।
জহির রায়হান সম্পর্কিত আরও খবর :
⇒ বিপ্লবী চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান
⇒ সোনালী যুগের সোনা ফলিয়েছেন জহির রায়হান
পাকিস্তানী সিনেমা জাগো হুয়া সাবেরা’য় ১৯৫৭ সালে সহকারি হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন তিনি। সালাউদ্দীনের ছবি যে নদী মরুপথে ছবিতে সহকারি ও প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম এর এ দেশ তোমার আমার ছবিতে নামসঙ্গীত রচনা করেন তিনি। ১৯৬০ সালে ‘কখনো আসেনি’ সিনেমার মাধ্যমে পরিচালনায় আসেন। ১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’ নির্মাণ করেন (উর্দু ভাষার ছবি) এবং পরের বছর তাঁর প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র বাহানা মুক্তি দেন। জহির রায়হান ‘ভাষা আন্দোলনে’ সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ২১শে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। ভাষা আন্দোলন তাঁর ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যার ছাপ দেখতে পাওয়া যায় তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’তে।
জহির রায়হান ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন।
সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও ছিল জহির রায়হানের অবাধ বিচরণ । তাঁর প্রথম প্রথম গল্পগ্রন্থ সূর্যগ্রহণ, তৃষ্ণা। একুশে ফেব্রুয়ারি, কয়েকটি মৃত্যু, শেষ বিকেলের মেয়ে, হাজার বছর ধরে, আরেক ফাল্গুন, বরফ গলা নদী, আর কত দিন। জহির রায়হান তাঁর একটি কাজ শেষ করে যেতে পারেন নি। ১৯৭০ সালে তিনি ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ নির্মাণ শুরু করেছিলেন।